ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশী এ্যাকশনে আহত সিদ্দিকুর বাঁ চোখে দেখতেও পারেন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৪ জুলাই ২০১৭

পুলিশী এ্যাকশনে আহত সিদ্দিকুর বাঁ চোখে দেখতেও পারেন

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী এ্যাকশনের ঘটনায় আহত সরকারী তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের দৃষ্টিশক্তি হারালে তার পরিবারের আশার আলো নিভে যাবে। এমন শঙ্কা স্বজনদের। তবে চিকিৎসকদের আশা সিদ্দিকুরের বাম চোখে দৃষ্টি ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিক্যাল বোর্ড দুই দফা বৈঠক করেছে। তার কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। সব মিলে সহকর্মী, পরিবার ও সকলের প্রত্যাশা সিদ্দিকুর যেন দৃষ্টি শক্তি ফিরে পেয়ে সবার মাঝে ফিরে আসুক। ছেলে সিদ্দিকুরের অসুস্থতার কথা শুনে ষাটোর্ধ মা সোলেমা আক্তার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ছুটে আসে। সিদ্দিকুর এই হাসপাতালে ৬২৪ নম্বর কেবিনে ভর্তি রয়েছেন। শনিবার অপারেশনের পর সিদ্দিকুরকে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের করিডরে তার মা সোলেমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, গ্রামের বাড়িতে পালিত ছাগল ও মুরগি বিক্রির টাকায় ছেলে সিদ্দিকুরকে অতিকষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন। ২৫ বছর আগে স্বামীর মৃত্যু পর ছোট শিশু সিদ্দিকুরকে অতিকষ্টে খরচ যুগিয়ে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা করিয়েছেন। সে দৃষ্টিশক্তি হারালে তার পরিবারের আশার আলো নিভে যাবে। সোলেমা আক্তার জানান, তার দুই ছেলের মধ্যে সিদ্দিকুর ছোট, বড় এক মেয়েও রয়েছে। বড় ছেলে নায়েব আলী এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করে। তিনি জানান, ২৫ বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর সময় ছেলেমেয়েরা খুবই ছোট ছিল। সে সময় থেকে অতিকষ্টে ছেলেমেয়েদের নিয়ে দিন যাপন করে আসছেন। তার বড় ছেলে এখন গ্রামের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, সব কষ্ট বুকে ছাপা দিয়ে সিদ্দিকুরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম। একদিন সিদ্দিকুরই আমাদের অভাবের দিন শেষ করবে। এমন আশার আলো বুকে বেঁধে রেখেছিলাম। কিন্তু আমার সবকিছু শেষ করে দিল পুলিশ। সোলেমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, আমার সন্তান বিসিএস পরীক্ষা দিতে আর পারবে না। চোখে দেখবে না। আর চাকরিও পাবে না। কত কষ্ট করে ছাগল-মুরগি বিক্রি করে সিদ্দিকুরের পড়াশোনার খরচ যোগাতে হয়েছে বাজান। আমাদের সব কষ্ট বৃথা গেল। রবিবার দুপুরে সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় নিয়োজিত মেডিক্যাল বোর্ডের বৈঠক শেষে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ গোলাম ফারুক জানান, সিদ্দিকুরের বাম চোখে দৃষ্টি ফিরে আসার ক্ষীণ সম্ভাবনা রয়েছে। অধ্যাপক ডাঃ গোলাম ফারুক জানান, সিদ্দিকুরের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। রবিবার সকালে তার এমআরআই ও চোখের আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়েছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে ও পরে দুইবার বৈঠক করেছি আমরা। পরীক্ষার রিপোর্টকে আমরা ইতিবাচক মনে করছি। সিদ্দিকুরের বাঁ চোখের অপারেশনের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক দীপক নাগ জানান, খানিকটা ভিশন (দৃষ্টি) পাওয়ার কারণে আমরা আশাবাদী হয়েছি। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক দীপন নাগ জানান, তবে আমরা আশাবাদী, ডান চোখে না হলেও সিদ্দিকুর বাঁ চোখে হয়ত দেখতে পাবেন। পুলিশের তদন্ত কমিটি শাহবাগে ‘ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষে’র ঘটনার সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি। রবিবার বিকেলে এই কমিটি গঠন করা হয়। ডিএমপির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা এ তথ্য জানান। কমিটির প্রধান করা হয়েছে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপস) মীর রেজাউল আলমকে। অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন, ভারপ্রাপ্ত ডিসি ডিবি (দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও এডিসি রমনা আশরাফুল আলম। এ কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সিদ্দিকুরকে দেখতে হাসপাতালে শিক্ষামন্ত্রী বিডিনিউজ জানায়, পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে অন্ধ হতে চলা তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুরকে হাসপাতালে দেখে এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন এই শিক্ষার্থীকে দেখতে রবিবার নাহিদ ওই হাসপাতালে যান বলে মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী সিদ্দিকুরের শয্যাপাশে কিছু সময় অবস্থান করে তার খোঁজখবর নেন। তার মা-ভাইয়ের সঙ্গেও কথা বলেন। এ সময় ডাক্তাররা মন্ত্রীকে জানান, সিদ্দিকুরের চিকিৎসার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ‘সর্বোচ্চ যতœবান’ রয়েছে। তার চিকিৎসা নিয়ে রবিবার দুইবার মেডিক্যাল বোর্ডে আলোচনা হয় বলে শিক্ষামন্ত্রীকে জানানো হয়। ৭ কলেজ নিয়ে ঢাবির বক্তব্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আপত্তি সাত কলেজ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে আপত্তি জানিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রবিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ঢাবি কর্তৃপক্ষ সঠিক কথা বলেনি, সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তাদের মতামত তুলে ধরে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া সাতটি সরকারী কলেজ সম্বন্ধে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনরূপ বক্তব্য বা মন্তব্য না করার নীতি এ পর্যন্ত অনুসরণ করে আসছিল। কিন্তু কয়েকদিন ধরে এসব কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাবির কাছে তাদের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষার রুটিন ঘোষণার দাবিতে আন্দোলন এবং তাকে কেন্দ্র করে ওই বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও প্রক্টর পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে যুক্ত করে যেসব অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রেখে চলেছেন, এ অবস্থায় প্রকৃত তথ্য সংশ্লিষ্ট সকলের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার ও বিভ্রান্তি নিরসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুদায়িত্ব বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে শিক্ষার্থীদের চাপ কমানোর লক্ষ্যে ২০১৪ সাল থেকে সরকার ঢাকা শহরের সরকারী কলেজগুলোকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করার চিন্তাভাবনা করে। তখন থেকেই এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবস্থান ছিল ‘শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে’ সরকার যে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় তা শুধু সমর্থনই নয়, বাস্তবায়নেও সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে। এটি কার্যকর করার প্রক্রিয়ার সঙ্গে নানা জটিলতা, প্রস্তুতি নিহিত থাকায় তখন থেকে এ সম্বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি পর্যায়ে বহু সভা, কমিটি গঠন ইত্যাদি হয়। কিন্তু ঢাবি ভিসির উপর্যুপরি তাগিদ ও সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি তার (ঢাবি উপাচার্য) সভাপতিত্বে সাত কলেজের অধ্যক্ষের সভায় ‘৭ কলেজ এখন থেকে ঢাবির সঙ্গে অধিভুক্ত হলো’ মর্মে সিদ্ধান্ত হয় (যদিও সংসদ কর্তৃক প্রণীত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯২ তখনও বহাল এবং এখন পর্যন্ত কোন সংশোধন করা হয়নি)। অতএব ‘হঠাৎ করে সাতটি কলেজের দায়িত্ব আমাদের ওপর দেয়ায় অনেকটা চাপ অনুভূত হচ্ছে’- ঢাবি উপাচার্যের এ বক্তব্যও তথ্যভিত্তিক নয়।
×