ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ইইউ

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৪ জুলাই ২০১৭

অবৈধদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে ইইউ

তৌহিদুর রহমান ॥ ইউরোপে অবৈধ বসবাসরত বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সরকারের প্রতি ধীরে ধীরে চাপ বাড়ছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এসব বাংলাদেশীকে দ্রুততম সময়ে ফিরিয়ে না আনলে ভিসা নিয়ে কড়াকড়ি আরোপ করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী পরিচয় নিশ্চিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করে তাদের ফিরিয়ে আনতে চেয়েছে সরকার। এছাড়া অবৈধ বাংলাদেশীকে ফিরিয়ে আনতে একটি কাঠামো তৈরির প্রক্রিয়াও চলছে। বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে অনুপ্রবেশকারী অবৈধ অভিবাসীদের ফিরিয়ে আনতে চাপ সৃষ্টি করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি সিদ্ধান্তও নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানাবে, সেসব দেশের নাগরিকদের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিসা সীমিত করা হবে। ইউরোপে অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকা শরণার্থীর চাপ সামলাতেই এ উদ্যোগ নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত মাসে ব্রাসেলসে ইউরোপের ২৮ দেশের এ জোটের এক বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকে বলা হয়, বাংলাদেশ ও নাইজিরিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে অনীহা দেখাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি এ ধরনের প্রত্যর্পণের চেষ্টা দ্বিগুণ করেছে। ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যাওয়া অভিবাসীদের ঢলের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বাইরে থেকে এ জোটের দেশগুলোতে প্রবেশের প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইতালিকে। আফ্রিকায় পাচারকারীদের নৌকায় চড়ে যারা ইউরোপের সাগরতীরে ভিড়ছে, তাদের বেশিরভাগ অবৈধ শ্রম অভিবাসী হিসেবে বিবেচিত। বাংলাদেশ এরই মধ্যেই ইউরোপ থেকে অবৈধ নাগরিকদের ফেরাতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। গত মে মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ব্রাসেলস সফরে ইউরোপের অভিবাসনবিষয়ক কমিশনার দিমিত্রিস আভ্রামোপোলাসকে ওই আশ্বাস দেন। লন্ডনভিত্তিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বছরের প্রথম তিন মাসে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইউরোপীয় সৈকতে দুই হাজারের বেশি বাংলাদেশী ভিড়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউরোপে যেসব বাংলাদেশীর থাকার বৈধ অনুমতি নেই তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাই করার পরই তাদের ফেরানো হবে। এ নিয়ে সরকারের নীতি জিরো টলারেন্স। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইউরোপে যেসব বাংলাদেশী অবৈধভাবে বাস করছেন যাচাই-বাছাই শেষে অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। দু’পক্ষের আলোচনার পরই এ বিষয়ে একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। সূত্র জানায়, ইউরোপে অবৈধ বাংলাদেশীদের বিষয়ে খুব দ্রুত তথ্য দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কোন নাগরিক বাংলাদেশী কি-না সেটা জানাতে দুদিন সময় দিতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুদিনের মধ্যেই নাগরিক পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কেননা কোন নাগরিকের বিষয়ে তথ্য জানতে চাইলে সে বিষয়ে বিদেশের বিভিন্ন বাংলাদেশ মিশন থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাগজপত্র পাঠানো হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শেষে সে তথ্য পুনরায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশের মিশনে সে তথ্য পাঠানো হয়। ফলে বাংলাদেশী পরিচয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে দুদিন সময় দিয়েছে, এ সময়ের মধ্যে সেটা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ।
×