ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

বাড়ছে জাপানী বিনিয়োগ

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৩ জুলাই ২০১৭

বাড়ছে জাপানী বিনিয়োগ

জাপানী কোম্পানিগুলো চীন, ফিলিপিন্স ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। সম্প্রতি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বেশ আকর্ষণীয় দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বড় কারণ হলো এখানে সস্তা শ্রম আর পণ্যের উৎপাদন খরচ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের যে কোন দেশের চেয়ে কম। এ ছাড়া এদেশে জাপানী শিল্প স্থাপনের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছিল। জাপানী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশসহ এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ব্যবসায়িক পরিবেশ যাচাইয়ে জরিপটি করা হয়েছিল। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে এখন আরও বেশি হারে জাপানী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। ওই দেশের কোম্পানিগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে যে ২০টি দেশকে তালিকার শীর্ষে রেখেছে, তার মধ্যে প্রথমবারের মতো উঠে এসেছে বাংলাদেশের নাম। জাপান সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্য সংস্থা জাপান এক্সটারনাল ট্রেডের (জেট্রো) এক জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয় গত ২৫ নবেম্বর থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। কিন্তু রাজধানীর গুলশানে জঙ্গী হামলায় সাতজন জাপানী নাগরিক নিহত হওয়ার পরও দেশটির বিনিয়োগকারীদের আগ্রহে ভাটা পড়েনি। জেট্রো ২ হাজার ৯৯৫টি কোম্পানির ওপর এই জরিপটি করে। জেট্রোর জরিপ অনুযায়ী একটি দেশকে মোট পাঁচটি বিষয়ের উপর পছন্দ করা হচ্ছে। এর মধ্যে সাধারণ পণ্য উৎপাদনের জন্য ভাল এমন দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৬ নম্বরে, উচ্চমূল্য সংযোজনের পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১৮ নম্বরে, গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে ১৮ নম্বরে, লজিস্টিকস বা পণ্য পরিবহন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ২০ নম্বরে আছে। ৫২ শতাংশ জাপানী কোম্পানি চীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে চায়। এর পরের অবস্থানে আছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান। চীন ও জাপান থেকে কারখানা সরিয়ে জাপানের কোম্পানিগুলো কোন দেশে যেতে চায়, তার একটি প্রবণতাও উল্লেখ করা হয়েছে জেট্রোর প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, চীন ও জাপান ছেড়ে জাপানী কোম্পানিগুলো ১৩টি দেশ ও পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। ওই ১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও আছে। জাপানী কোম্পানিগুলোর মধ্যে সাড়ে ১৮ শতাংশ বলেছে, তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে ভারতকে পছন্দ করছে। ১২ দশমিক ৭ শতাংশ পছন্দ করেছে মিয়ানমারকে। বাংলাদেশকে পছন্দ করেছে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কোম্পানি। এই হিসাব ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য। এর আগের দুই অর্থবছরে ২ দশমিক ৬ শতাংশ কোম্পানি বাংলাদেশকে পছন্দ করেছিল। এর আগে ও জেট্রো তাদের রিপোর্টে এ অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে জাপানের বিনিয়োগ, বিনিয়োগের স্থান হিসেবে বাংলাদেশের সুবিধা এবং বর্তমানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বাধা হিসেবে দাঁড়াচ্ছে তা উল্লেখ করে। একই সঙ্গে ওই সব বাধা দূরীকরণে বাংলাদেশের কি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত তাও বলা হয়। জেনারেল সিসটেম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) এর কারণে বাংলাদেশ থেকে জাপানে নিটওয়্যার রফতানি কয়েকগুণ বেড়েছে। বিগত বছর ২০১৪ সালে ছিল ২২ হাজার ৪৬৩ ইয়েন আর ২০১৫ সালে ছিল ৩২ হাজার ১৮৪ ইয়েন। এছাড়া জাপানে এখন বাংলাদেশে তৈরি মেয়েদের জুতার কদর বাড়ছে। জাপানের মেয়েদের জুতার মার্কেটের প্রায় ২০ ভাগ এখন বাংলাদেশের দখলে। বাংলাদেশ থেকে জাপান প্রক্রিয়াজাতকৃত আনারস আমদানি করছে। রাবার, চিংড়ি, চাসহ কিছু সামুদ্রিক মাছ জাপানে রফতানি হচ্ছে। জেট্রোর রিপোর্টে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম হলো- বিনিয়োগ বোর্ডের জাপান ডেক্সের কর্মপরিধি ও স্বচ্ছতা বাড়ানো, বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ১ বিলিয়ন ডলারের যে সীমা তা কমিয়ে আনা, বিদেশী কোম্পানির বিজিএমইএ এর সদস্য পদ পাওয়া নিয়ে জটিলতা দূর করা, কোন কোন সেক্টরে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, বিদেশী কোম্পানির পণ্য বিক্রয় সংক্রান্ত ভ্যাট এর নীতিমালা সংস্কার, বন্ড ওয়্যার হাউস লাইসেন্স সংক্রান্ত জটিলতা দূর করা, এলসির সময় বৃদ্ধি করা ও এলসি খোলার ক্ষেত্রে জটিলতা দূর করা, বিদেশ থেকে লোন এনে বাংলাদেশে বিনিয়োগের নীতিমালা সহজ করা, রয়্যালটি রেমিটেন্স কমানো, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ট্যাক্স এক্সামশন দ্রুত করা, বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্টের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা, ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালা ইংরেজীতে করা, বিনিয়োগ সংক্রান্ত দ্রুত তথ্য সহায়তা, এয়ারপোর্টে স্পেশাল ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা করা এবং লাইসেন্সিংয়ের ক্ষেত্রে ঘুষ ও দুর্নীতি দূর করা। উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১ হাজার ১০ একর জমিতে জাপানের অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য গত ২ মে সুমিতমো করপোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি হয়। সম্প্রতি আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোনের সঙ্গে জাপানের হোন্ডা মোটর করপোরেশনের বড় বিনিয়োগ চুক্তি হয়। জুনে জাপান বাংলাদেশকে ১৫৯ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার চুক্তি করেছে। জাপানীদের পছন্দের শীর্ষ ২০টি দেশের তালিকায় ভারত আছে ৮ নম্বরে, মালয়েশিয়া ১১ নম্বরে, মিয়ানমার ১৪ নম্বরে, কম্বোডিয়া ১৭ নম্বরে এবং বাংলাদেশ আছে ২০ নম্বরে। তবে এই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা নেই।
×