ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় সামার এ্যাথলেটিক্সের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট

মেজবাহ-শিরিন, ওরাই সেরা...

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৩ জুলাই ২০১৭

মেজবাহ-শিরিন, ওরাই সেরা...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অনুর্ধ ১০ সেকেন্ডের মধ্যে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে এ ভুবনে। ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ হতে পারে সুউচ্চ অট্টালিকা, ঘটতে পারে গাড়ি দুর্ঘটনা, আবার এক নিঃশ্বাসের দৌড়ে হাসিল করা যায় স্বর্ণপদক। তেমনটাই হাসিল করলেন শিরিন আক্তার এবং মেজবাহ আহমেদ। দু’জনই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এ্যাথলেট। ‘এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক জাতীয় সামার এ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা’র ১৩তম আসরের সমাপনী দিনে শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে দিনের সবচেয়ে ‘হট ইভেন্ট’ ১০০ মিটার স্প্রিন্টে মহিলা ও পুরুষ বিভাগে স্বর্ণপদক করায়ত্ত করেন তারা। এ নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে মোট পাঁচবার (তিনবার জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে, দুবার সামার চ্যাম্পিয়নশিপে) দ্রুততম মানবী হলেন শিরিন। জেতার পর তিনি অনুভূতি প্রকাশ করেন এভাবে, ‘খুব ভাল লাগছে। আমি নৌবাহিনীর এ্যাথলেট হলেও কোচ আবদুল্লাহ হেল কাফি স্যারের কাছে বিকেএসপিতেই ট্রেনিং করেছি এই প্রতিযোগিতার জন্য। এভাবে যদি ট্রেনিংটা আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আমার টাইমিংয়ের আরও উন্নতি হবে।’ দেশে-বিদেশে সামনে যেসব মিটগুলো আছে সেগুলোর সবগুলোতেই অংশ নিয়ে প্রথম হতে চান শিরিন এবং এসএ গেমসের জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নিতে চান, ‘এসএ গেমসে আমার লক্ষ্য স্বর্ণপদক জেতা।’ ক’দিন আগে আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত ইসলামী সলিডারিটি গেমসে শিরিনকে বাদ দিয়ে সেখানে পাঠানো হয় আলিদা শিকদার নামের এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এ্যাথলেটকে, যিনি পরে ওই আসরে গিয়েও নানা অজুহাতে ট্র্যাকে নামেননি, তখন কি শিরিনের কোন ক্ষোভ হয়েছিল ফেডারেশনের এই অবহেলার? আজকের এই জয় কি সেই অবহেলারই উপযুক্ত জবাব? শিরিনের জবাব, ‘না, বিষয়টি মোটেও তা নয়। এটা রাগের কোন ব্যাপার নয়। ফেডারেশন আমাদের অভিভাবক হিসেবে যেটা ভাল মনে করেছেন, সেটাই করেছেন। কাজেই এগুলো নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমার পারফর্মেন্সের কিভাবে উন্নতি করা যায় সেটাই আমার লক্ষ্য। আমাকে কোথায় পাঠানো হবে আর কোথায় পাঠানো হবে নাÑ এগুলো আমার অভিভাবকরাই ঠিক করবেন।’ আজকে দৌড়ের সময় একটু বাতাস ছিল, তাই টাইমিংটা (১২.৩০ সেকেন্ড) তত ভাল হয়নি বলে দাবি করেন শিরিন, ‘তারপরও এই টাইমিং নিয়ে মোটামুটি সন্তুষ্ট। আমার সেরা টাইমিং হচ্ছে ১১.৯৯ সেকেন্ড (ইলেকট্রনিক টাইমিং) এবং ১১.৮৪ সেকেন্ড (হ্যান্ড টাইমিং)।’ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ট্র্যাক অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় এই ট্র্যাকে দৌড়ে টাইমিংয়ের উন্নতি ঘটানো অসম্ভব বলে মনে করেন শিরিন। সামনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের আসর। সেখানে মেজবাহ আহমেদ অংশ নিলেও পাঠানো হচ্ছে না শিরিনকে। এ প্রসঙ্গে শিরিনের অনুভূতি, ‘সেখানে যেতে পারলে ভাল লাগতো। যেহেতু ওখানে একজনের বেশি যাওয়ার নিয়ম নেই তাই ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেজবাহ যাচ্ছে। দু’জন যাওয়ার নিয়ম থাকলে হয়তো আমাকেও পাঠানো হতো। যাক, কি আর করা।’ আগেরদিন ২০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেননি শিরিন। এই ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হন সোহাগী আক্তার। তিনি পরেরদিন ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জেতার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলেন শিরিনকে। ব্যাপারটি শিরিন স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলে অবশ্যই এটা ভাল। আমাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। শুধু সোহাগীই নয়, প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি জাকিয়া এবং সুস্মিতাকেও। ওরাও অনেক ভাল দৌড়ায়।’ প্রতিবারের মতো এবারও বলব অসম্ভবের কিছুই নেই। চেষ্টা-মনোবল থাকলে অবশ্যই এসএ গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জেতা সম্ভব বলে জানান শিরিন, ‘আমাকে পারতেই হবেÑ এমন আত্মবিশ^াস আমার আছে। বিকেএসপির ডিজি স্যারের কাছ থেকে আমি অনুমতি নিয়েছি এসএ গেমসের আগ পর্যন্ত বিকেএসপিতে কাফি স্যারের কাছে অনুশীলন করার। এটা যদি করতে পারি তাহলে নিশ্চয়ই আমার স্বর্ণজয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে।’ মেজবাহ বলেন, ‘আমার খুব ভাল লাগছে যে আমি শামীম স্যারের টানা ছয়বারের জাতীয় পর্যায়ে দ্রুততম মানব হওয়ার রেকর্ডটি স্পর্শ করতে পেরেছি। যদি আজ জিততে না পারতাম তাহলে আমার জন্য খুব দুঃখজনক ব্যাপার হতো। কেননা সামনেই আমি বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে যাব। ওখানে যাওয়ার আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতে এই জয়টা অনেক দরকার ছিল। যদিও এই টাইমিংয়ে সন্তুষ্ট নই। অবশ্য এই পুরনো ও ধীরগতির ট্র্যাকে দৌড়ে ভাল টাইমিং করা সম্ভব নয়।’ ভাল পারফর্মেন্সের জন্য আন্তর্জাতিক মানের অনুশীলনের কোন বিকল্প নেই বলে জানান মেজবাহ। ‘ইলেকট্রনিক টাইমিংয়ের অনুশীলনে যতটা উন্নতি হয়, হ্যান্ড টাইমিংয়ে ততটা নয়।’ জাতীয় মিটে তিনটি, সামারে দুটি এবং বাংলাদেশ গেমসে একবার দ্রুততম মানব হওয়া মেজবাহর প্রথম দ্রুততম মানব হওয়ার ক্ষণটি ছিল ২০১৩ বাংলাদেশ গেমসে।
×