ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ॥ আশঙ্কা ডাক্তারদের

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৩ জুলাই ২০১৭

সিদ্দিকুরের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ ॥ আশঙ্কা ডাক্তারদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর শাহবাগে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মোঃ সিদ্দিকুর রহমানের (২৩) চোখের দৃষ্টি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তার দুই চোখে মারাত্মক ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। চোখের পেছনের হাড় ভেঙ্গে গেছে। শনিবার সকালে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে তার দুই চোখে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা এমনই কথা জানান। এদিকে সকালে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে আবারও শিক্ষার্থীরা রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় টানা দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম মিরপুর রোড, নীলক্ষেতসহ বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীর দৃষ্টি হারানোর বিষয়ে দোষী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, শুক্রবার শাহবাগে ঢাবি অধিভুক্ত সাতটি কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশের ‘কাঁদানে গ্যাসের শেলের’ আঘাতে তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সিদ্দিকুরের দুই চোখ জখম হয়। পরে তাকে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করেছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আহত সিদ্দিকুর রহমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা থানার ঢাকেরকান্দা গ্রামে। তবে ওই ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে শাহবাগ থেকে কাঁটাবনমুখী সড়কে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। তখন পুলিশ সদস্যরা গিয়ে তাদের ব্যানার কেড়ে নেয়। এক পুলিশ সদস্য দৌড়ে এসে খুব কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়েন। এরপরই সিদ্দিকুর রহমান মাটিতে পড়ে যান। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল সহযোগী অধ্যাপক ইফতেখার মনির জানান, শনিবার সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়ে দেড় ঘণ্টা ধরে সিদ্দিকুরের দুই চোখ অস্ত্রোপচার হয়েছে। তার ডান চোখের ভেতরের অংশ বের হয়ে আসছিল। তা যথাস্থানে বসানো হয়েছে। বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রক্ত ছিল, তা পরিষ্কার করা হয়েছে। ইফতেখার মনির জানান, সিদ্দিকুর রহমানের চোখের আলো ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। বাকিটা পরে বলা যাবে। রোগীর অবস্থা সম্পর্কে এর থেকে বেশি তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। এর আগে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডাঃ শ্যামল কুমার সরকার জানিয়েছেন, সিদ্দিকুর চোখের ভিশন পাচ্ছেন না। আমরা এক্সরে সিটি স্ক্যান করে দেখেছি। তার চোখের পেছনের হাড় ভেঙ্গে গেছে। তার চোখের পাতা প্রচ- ফোলা ছিল। সিদ্দিকুরের চোখে কিসের আঘাত জানতে চাইলে তিনি জানান, রোগীর সঙ্গে আসা লোকেরা তার চোখে গুলি লেগেছে বলে জানালেও আমরা ভেতরে গুলি পাইনি। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, লাঠি বা শক্ত কিছুর আঘাতে চোখের পেছনের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছে। সিদ্দিকুরের সহপাঠী ফুয়াদ জানান, সকালে সিদ্দিকুরের চোখে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এক চোখের অবস্থা তো পুরোই খারাপ। ওটা শেষ। অন্য চোখে আলো ফেরার সম্ভাবনা থাকতে পারে। ব্যান্ডেজ খোলার পর তা বোঝা যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসরা। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ গোলাম মোস্তফা জানান, সিদ্দিকুরের চিকিৎসায় একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় দফা অবরোধ সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার সকালে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত ইডেন ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে নিউ মার্কেটসহ আশপাশের এলাকায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ১১টা থেকে নিউ মার্কেট ক্রসিং ও নীলক্ষেতে সড়ক অবরোধ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ওপর পুলিশ হামলা, গুলি ও ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এসব প্রত্যাহারসহ সাত দফা দাবিতে শনিবার সকাল ১১টার দিকে তারা বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা শাহবাগে আন্দোলনকালে তাদের ওপর পুলিশী হামলা হামলা ও শুক্রবার ১২০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে পুলিশের মামলার প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। দাবি আদায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, হামলা আহত শিক্ষার্থী সিদ্দিকুরের চিকিৎসার দায়ভার গ্রহণ, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চলমান সংকট নিরসন ও শিক্ষার্থীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান। এ জন্য ৭২ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দাবি না মানলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণার হুমকি দেয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে গুরুত্বপূর্ণ নিউ মার্কেট ও নীলক্ষেত সিগন্যাল গোল করে শিক্ষার্থীরা বসে পড়েন। এরপর পুরো মিরপুর রোড, নীলক্ষেত, বিশ্ববিদ্যালয় সড়ক, ইডেন কলেজ সড়কে রাস্তা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে মিরপুর রোড দিয়ে নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত, আজিমপুর, লালবাগ রোডসহ কয়েকটি এলাকার বাসের যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন। এ সময় এসব এলাকা আসা যানবহনগুলো সায়েন্স ল্যাব রোড দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। অনেকে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যস্থলে ফিরতে দেখা যায়। ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন, রাজধানীর শাহবাগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে এক শিক্ষার্থীর দৃষ্টি হারানোর বিষয়ে দোষী যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শনিবার দুপুরে ডিএমপি হেড কোয়ার্টার্সে এক অনুষ্ঠানের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে হামলা করে পুলিশ। এ সময় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমানের চোখে আঘাত লাগে। এতে তিনি চোখের দৃষ্টি হারান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশের রাবার বুলেটের গুলিতে সিদ্দিকুর দৃষ্টি হারিয়েছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, আমি শুনেছি ঘটনায় এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তবে তাদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। পুলিশ বলছে, তাদের নিজেদের ঢিলা-ঢিলিতেই ওই শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
×