ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত কার্যক্রম জরুরী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ জুলাই ২০১৭

চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত কার্যক্রম জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুসহ বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগে দীর্ঘমেয়াদী কার্যক্রম চালু করা দরকার। বিভিন্ন প্রকার মশা শনাক্ত করে তাদের প্রকৃত প্রজনন স্থান ও মশা বাহিত ভাইরাস এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। থাকতে হবে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে প্রাদুর্ভাব হওয়া সংক্রামক রোগসমূহ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি। চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব হ্রাস পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রাখতে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক বিপ্লব। শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু সম্পর্কিত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সভায় বক্তারা এসব প্রস্তাব দেন। সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, বিএমএ সভাপতি ডাঃ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ডাঃ টিটু মিয়া, অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সকলের অংশগ্রহণ কামনা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, নতুন নতুন চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। এই দুটি রোগের বাহক একই, এডিস মশা। চিকুনগুনিয়া নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। এই রোগে মৃত্যুর ঘটনা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। যেসব চিকুনগুনিয়া রোগীর চিকিৎসা দরকার, তাদের জন্য চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে সরকারী হাসপাতালগুলোতে সার্বক্ষণিক ‘হেলথ ডেস্ক’ খোলা হয়েছে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম আরও বেশি কার্যকর হবে এবং চিকুনগুনিয়া নিয়ে জনমনে সৃষ্ট আতঙ্ক দূর হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাইরে থেকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দেশে প্রবেশ করতে পারে। সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সফলতা দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। বিশ্বের অনেক দেশে আতঙ্ক সৃষ্টিকারী জিকা, এ্যানথ্রাক্সসহ বিভিন্ন ভাইরাস প্রতিরোধে কৃতিত্ব দেখিয়েছি আমরা। কয়েক যুগ আগেও বিভিন্ন অজানা সংক্রামক রোগে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটত। বর্তমানে সংক্রামক রোগের চেয়ে অসংক্রামক রোগের দাপট বেড়ে গেছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে সংক্রামক রোগ। বাইরে থেকে বাংলাদেশে আগতদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে যন্ত্র বসানো রয়েছে। নতুন নতুন ভাইরাস মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় চিকুনগুনিয়া রোগের ধরন ও গতিবিধি বুঝতে সময় লেগেছে। তবে প্রাদুর্ভাবের কয়েকদিন পরই পুরো শক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে সিটি কর্পোরেশন। তবে গণমাধ্যমে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব যেভাবে প্রচার করা হয়েছে, বাস্তবে তা নয়। এই রোগের মহামারি রূপ ধারণ করার প্রশ্নই উঠে না। মশক নিধনসহ চিকুনগুনিয়া বিষয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। আর সিটি কর্পোরেশনের সরবরাহ করা মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসাসেবা দিতে সিটি কর্পোরেশনের মেডিক্যাল টিম বাসায় পৌঁছে যাবে। তবে নতুন নতুন ভাইরাস ও রোগ প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন মেয়র সাঈদ খোকন। একই সুরে কথা বলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ কমেছে। মশক নিধন কার্যক্রম চলছে। বিভিন্ন প্রকার মশা চিহ্নিত করে তাদের প্রকৃত প্রজনন স্থান ও মশা বাহিত ভাইরাস এবং তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগসমূহ নিয়ে গবেষণা করতে হবে। মশা বিশেষজ্ঞ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, দেশে ১২৩ প্রকারের মশা রয়েছে। তবে চার থেকে পাঁচ প্রকারের মশাই বেশ আলোচিত। বাকি অনেক মশার ক্ষতিকারক দিক ও গতিবিধি এখন পর্যন্ত বের করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা দরকার। পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে প্রাদুর্ভাব হওয়া সংক্রামক রোগসমূহ মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিগত সময়ের অভিজ্ঞতাসমূহ তাই বলে দিচ্ছে। বর্তমানে রাজধানীর ২ হাজার বাসায় গিয়ে বিভিন্ন প্রকার মশার নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। পরবর্তীতে এই পর্যবেক্ষণমূলক কাজের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ঢাকা মেডিক্যালে চিকুনগুনিয়া রোগীর আগমন কমতে শুরু করেছে। তবে আক্রান্তদের অনেকেই এ্যানথ্রাইটিস রোগী হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে জুনে ১২৪২ এবং জুলাইয়ে ৮০৫ চিকুনগুনিয়া রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। স্বাচিপের মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ এম এ আজিজ বলেন, এই রোগে মৃত্যু নেই। চিকুনগুনিয়া মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব হ্রাস পাচ্ছে এবং তা অব্যাহত রাখতে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক বিপ্লব।
×