ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নয়, সেমিনারটি ছিল ব্যক্তির উদ্যোগে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ জুলাই ২০১৭

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নয়, সেমিনারটি ছিল ব্যক্তির উদ্যোগে

সাজিয়া স্নিগ্ধা, লন্ডন থেকে ॥ গত মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের আর্চবিশপ রুমে হাউস অব লর্ডসের সিনিয়র সদস্য এবং আইনজীবী লর্ড কার্লাইল তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করেন। এর আগেও এ ধরনের বেশকটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে হাউস অব লর্ডসে, তবে সব সময়ই অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ কিংবা পার্লামেন্টের অন্য কোন সংগঠন এ আয়োজন করে থাকে। এবারই হাউস অব লর্ডসের কোন সদস্য তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে আয়োজন করেন। এই সদস্য এর আগে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতাও করেছেন। এ ধরনের সেমিনারগুলোতে সাধারণত আলোচনা, বিতর্ক, প্রশ্ন উত্তরের জন্য বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এবারে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা মশিউর রহমান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডাক্তার দিপু মনি। বিএনপির প্রতিনিধি হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরুমাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবীরসহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ। জামায়াতের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি হিসেবে অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি দল যুক্তরাজ্যে আসলেও লর্ড কার্লাইল এর ব্যক্তিগত উদ্যোগের এই আলোচনায় কেউ অংশগ্রহণ করেননি। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে আহ্বানকৃত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে লর্ড কার্লাইলের ডাকা ‘টেররিজম এ্যান্ড দি রোল অব ল’ বিষয়ক সেমিনারে প্রতিনিধি দলের উপস্থিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয় এই কনফারেন্সটি কোন সংগঠনের ব্যানারে ডাকা হয়নি, এ কারণে সবদিক বিবেচনা করে কনফারেন্স যোগ না দেয়াার সিদ্ধান্ত এবং লন্ডনন্থ বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে আয়োজকদের তা জানিয়ে দেয়া হয়েছে। লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত প্রেস কনফারেন্সে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা এবং প্রশ্ন উত্তরকালে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান অভিযোগ করেন ব্যক্তি উদ্যোগের বিষয়টি তাঁদের আগে জানানো হয়নি। অন্যান্য সময় বৃটেনের বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ বা ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনসহ কয়েকটি সংগঠন সার্বিকভাবে আয়োজন করেছে সেগুলোতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগত আলাপে কেন যোগ দেবেন। ডাঃ দিপু মনি বলেন, এখানে আসার পর জানতে পারলাম জায়ামাত এবং তাদের অঙ্গ-সংগঠন অংশগ্রহণ করবে। নির্বাচন কমিশনে জামায়াত কোন নিবন্ধিত দল নয়। আর বিএনপিও এখন সংসদে নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যে, জামায়াতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। এদিকে অন্যান্যবারের আয়োজন সম্পর্কে জানলেও এবারের আয়োজন সম্পর্কে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কোনকিছুই জানত না বলে অভিযোগ করা হয়। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল আলী এই আয়োজন সম্পর্কে বলেন, সম্পূর্ণ আয়োজনই প্রশ্নবিদ্ধ। লর্ড কার্লাইল হাউস অব লর্ডের ৮০৮ জন সদস্যদের মাঝে একজন সদস্য। তিনি অল পার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপ কিংবা বাংলাদেশ বিষয়ক অলপার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ অথবা অন্য কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে আমার জানা নেই। ওনার ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের প্রয়োজন কিংবা গুরুত্ব আছে বলেও আমি মনে করি না। আজকে আমি যদি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে হাউস অব লর্ডসের কোন রকম ভাড়া করে যুক্তরাজ্যের রাজনীতি নিয়ে কন্সারভেটিভ পার্টি কিংবা লেবার পার্টি কে নিয়ে আলাপ করতে চাই তাহলে সেটি শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয় হাস্যকরও। এক দেশে থেকে আরেক দেশের রাজনীতি নিয়ে অযাচিত আগ্রহ কৌতূহল এবং মাথাব্যথা অনেক প্রশ্ন এবং সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। আমি আশা করি লর্ড কার্লাইল এর এই আয়োজন ঘিরে সৃষ্ট সন্দেহ এবং প্রশ্নের ব্যাপার বাংলাদেশ সরকার খতিয়ে দেখবে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নইমুদ্দিন রিয়াজের কাছে লর্ড কারলাইন এর আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা করতে চাইলে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ, গণতান্ত্রিক ফোরামসহ অন্যান্য দল যারা বাংলাদেশ পার্লামেন্টে আছেন তাদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো উচিত। তারা বিএনপিকে দাওয়াত দিয়েছে, বাংলাদেশে যাদের নিবন্ধনও নেই সেই জামায়াতকে দাওয়াত দিয়েছে। ওনারা গণতন্ত্র নিয়ে আলাপ করতে চায় কিন্তু আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে জামায়াত বিএনপির জন্যই এ আয়োজন!! গণতন্ত্র আলোচনার নামে প্রহসন। বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস রিলিজ নিয়ে লর্ড কার্লাইল হতাশা প্রকাশ করে অভিযোগ করেন, অংশগ্রহণকারী সকল স্পীকারদের আমন্ত্রণপত্রে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছিল যে এটি কোন পাবলিক মিটিং নয়, এ সেমিনারটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা হচ্ছে। ১২ জুলাই আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর পর বাংলাদেশ সরকারের ডেলিগেটসরা অংশগ্রহণ নিশ্চিতও করেছিলেন। তারা আগে থেকে কেউ জানতেন না এই অভিযোগটি অসত্য। পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ১৮ জুলাই হাউস অব লর্ডসে মিলবাংক হাউজের আর্চবিশপ রুমে শুরু হয় সেমিনার। শুধু আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলই নয়, আমন্ত্রিত অথিতিদের মধ্যে ব্রিটিশ এমপি, লর্ড ও বেশ কয়েকজন পর্যবেক্ষক এবং বিএনপি ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলও উপস্থিত হননি সেমিনারে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ বলেন, লর্ড কার্লাইল এর আগেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করেছিল। রাজনৈতিক দলের মাঝে সেমিনারে শুধু বিএনপির বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে খুশি করার জন্য এই আয়োজন। সেমিনারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতিসহ বিএনপির অন্যান্য নেতাকর্মী দাওয়াত পেয়েছে কিন্তু যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ সংগঠনের কোন নেতাকর্মীকে দাওয়াত দেয়া হয়নি!
×