ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেই ইউএনওকে হেনস্থা করার নেপথ্যে-

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ জুলাই ২০১৭

সেই ইউএনওকে হেনস্থা করার নেপথ্যে-

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ অতি উৎসাহী, চাটুকারিতা নাকি স্থানীয় ক্ষমতাবান কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধির ব্যক্তি আক্রোশ! পর্দার আড়ালে থাকা কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির চাপে শিশু শিক্ষার্থীদের আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড ছাপানোর অপরাধে মামলা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গাজী তারেক সালমানকে চরম হেনস্থার শিকার হতে হলো! সর্বত্রই এখন সেই প্রশ্ন। শুধু মামলাই নয়, খোদ প্রশাসন বিভাগ থেকেও কেন ওই সরকারী কর্মকর্তাকে হেনস্থা করা হলো এ নিয়ে প্রশ্নের অন্ত নেই সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। প্রশ্ন উঠেছে, আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত মামলার বাদী ওবায়েদ উল্লাহ নিজ ইচ্ছায় নাকি বড় কোন নেতার আদেশ-অনুরোধ রাখতে গিয়ে মামলাটি করেছেন? ব্যক্তিগত ক্ষোভ চরিতার্থ করতে গিয়ে প্রশাসনে অসন্তোষ সৃষ্টি ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের নেপথ্যে কারা রয়েছেন? শুধু মামলার বাদীই, নাকি পেছনে থেকে অন্য কেউ কলকাঠি নেড়েছেন? চরম অন্যায় ও আইন ভঙ্গ হবে জেনেও বিভাগীয় কমিশনার থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এমনকি বিচারক পর্যন্ত মুখ বুজে বা কার ইশারায় এসব মেনে নিলেন? এসব প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। এ নিয়ে শুধু বরিশালেই নয়, সারাদেশেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। আর শনিবার এ বিষয়টিই ছিল ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে। চরম হেনস্থার শিকার ইউএনও গাজী তারিক সালমান নিজ মুখেই বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। বলেন, দায়িত্বে থাকার সময় প্রভাবশালী মহলের অনেক অপকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কোন ঠিকাদার বা জনপ্রতিনিধির অন্যায়কে মেনে নেইনি। আর পরীক্ষার শেষ সময়ে সরকারী গৌরনদী কলেজের শিক্ষার্থী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের পুত্র আল রাজিন ওরফে পিয়াল সেরনিয়াবাতকে নকল করার দায়ে আমি বহিষ্কার করেছিলাম। তখন পিয়াল স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ তার চাচা পরিচয় দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এ ঘটনায় পিয়ালকে ছয়মাসের বিনাশ্রম কারাদ- ও নকলে সহযোগিতা করার জন্য কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র সরকারকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়। তখন থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতা ক্ষিপ্ত ছিল আমার ওপর। যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে। তবে তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরঋণী। অন্যদিকে মামলা করায় আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কৃত ওবায়েদ উল্লাহ সাজু সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ইউএনও গাজী তারেক সালমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি কারণ দর্শানোর নোটিসের জবাব দেব। তিনি আরও বলেন, ইউএনওকে আগে শোকজ করেছেন জেলা প্রশাসক। আমার কাছে তার প্রমাণ আছে। আমি পরে মামলা করেছি। মামলা করা যদি আমার অপরাধ হয়, তাহলে জেলা প্রশাসকও অপরাধ করেছেন। তারেক সালমানকে শোকজের বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান বলেন, কার্ড ছাপার পর কোন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ওই কার্ড নিয়ে কেবিনেট ও বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে জানিয়েছেন। কমিশনার আমাকে ইউএনও’র কাছ থেকে একটি ব্যাখ্যা নিতে বলার পর আমি তখন তাকে (ইউএনও) শোকজ করে ব্যাখ্যা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারকে তা পাঠিয়ে দেই। জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগকারী ওই এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো বিভাগী কমিশনার আমাকে জানাননি। এমন অভিযোগের জবাবে বিভাগীয় কমিশনার মোঃ গাউস টেলিফোনে সাংবাদিকদের বলেন, কোন লিখিত অভিযোগ নয়, পার্টির লোকজন আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারে নিয়ম-কানুন মানা হয়নি। তাই আমি ডিসিকে বলেছিলাম ইউএনওকে শোকজ করতে। বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ ওবায়েদ উল্লাহ সাজু গত ৭ জুন ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। গত বুধবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে প্রথমে তা নাকচ হলেও দ্বিতীয়বার তারেক সালমানের জামিন মঞ্জুর করা হয়। সরকারের পূর্ব অনুমতি না নিয়েই একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাকে হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর পুরো প্রশাসনে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক গণমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে বিষয়টি নজরে আসে সরকারের হাইকমান্ডের। সূত্র মতে, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিকৃত করে কার্ড ছাপানোর অভিযোগে একজন ইউএনও গ্রেফতারের ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ ঘটনায় প্রশাসনের মধ্যেও তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করতেই কিছু অতি উৎসাহী ও চাটুকার এ কর্মকা- ঘটিয়েছে। শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকেই মামলাকারী বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার এবং কেন তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না সেজন্য ১৫ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। একইসঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি মামলা দায়েরকারী সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি এর নেপথ্যে কেউ থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে। এদিকে প্রজাতন্ত্রের এক কর্মচারীকে কিভাবে গ্রেফতার করা হলো কোন রকম অনুমোদন ছাড়া এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, এটি করা যায় না। কারণ ইউএনও হচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ে সরকারের সবচেয়ে উর্ধতন কর্মকর্তা। তাকে কোন শাস্তি দিতে হলে বা তার বিরুদ্ধে কোন মামলা বা কোন রকম কিছু করতে হলে সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। এইচ টি ইমাম এই ঘটনার জন্য বরিশালের ডিসি, এসপিকে দায়ী করে বলেন, পুলিশ যে ব্যবহার করেছে এই ছেলেটির (ইউএনও) সঙ্গে, যেভাবে তাকে নিয়ে গেছে, এ নিয়ে আমি ওখানকার ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ সুপার, এদের প্রত্যেককে দায়ী করব। এদের বিরুদ্ধেও আমাদের বোধহয় ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে এইচ টি ইমাম আরও বলেন, মামলা দায়েরকারী পাঁচ বছর আগেও আওয়ামী লীগে ছিলেন না। দলের ভেতরে ঢুকেপড়া এই ‘অতি উৎসাহীরাই’ এই কা- ঘটিয়েছে, এই চাটুকাররাই আমাদের ক্ষতি করছে। তিনি বলেন, এই ঘটনার পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, এই অফিসারের বিরুদ্ধে হয়ত তাদের কোন ক্ষোভ ছিল। তাকে অপমানিত করা ছিল তাদের লক্ষ্য। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সার্ভিসের মধ্যে একটি অসন্তোষ সৃষ্টি করা। আর তৃতীয়ত, সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকারই নন, প্রশাসনের পক্ষ থেকেও হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে ইউএনও তারেক সালমানকে। আদালতে মামলা করার আগে গত এপ্রিল মাসেই বরিশালের তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ গাউস এবং বর্তমান জেলা প্রশাসক গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ জন্য প্রথমে তারেক সালমানকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেন জেলা প্রশাসক। ইউএনও নোটিসের জবাব দিলে জেলা প্রশাসক সেটি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠান। কিন্তু বিভাগীয় কমিশনার নোটিসের জবাব সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠান। পরে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজু গত ৭ জুন বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঁচ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেন। বিচারক ২৭ জুলাইয়ের মধ্যে তারেক সালমানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে সমন জারি করেন। গত জুনের প্রথম সপ্তাহে ওই ইউএনওকে বরগুনা সদর উপজেলায় বদলি করা হয়। গত বুধবার ওই মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়ে জামিনের আবেদন করেন ইউএনও তারেক। আদালত প্রথমে তা নামঞ্জুর করে। পুলিশ ইউএনওর হাত শক্ত করে ধরে আদালতের হাজতখানায় নেয়। অবশ্য দুই ঘণ্টা পর তার জামিন মঞ্জুর করা হয়। এ নিয়ে সারাদেশেই তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন গত বৃহস্পতিবার জরুরী সভা করে মানহানিকর আদেশ প্রদান, পুলিশের ‘আইনবহির্ভূত’ কার্যক্রম এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারিক সালমানের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা খুবই অন্যায়। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে আইনের আবরণে অন্যায় কাজ হয়েছে। পুলিশের আচরণও বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় আগৈলঝাড়ার এসএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। ওই প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী দুটি ছবির জন্য ছাত্রদের পুরস্কৃত করা হয়। আর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপনে উপজেলা প্রশাসনের আমন্ত্রণপত্রে ছবি দুটি ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে প্রথম স্থান পাওয়া জ্যোতি ম-লের ছবিটি আমন্ত্রণপত্রের কাভারে এবং দ্বিতীয় স্থান পাওয়া আদ্রিজা করের ছবিটি ব্যবহার করা হয় আমন্ত্রণপত্রের পেছনের পাতায়। পেছনের পাতায় ছাপা হওয়া ছবিটির জন্যই ইউএনও গাজী তারিক সালমানের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগে মামলা করেন আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল্লাহ সাজু। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি চিরঋণী ইউএনও তারিক বরিশাল থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার খোকন আহম্মেদ হীরা জানান, মামলার শিকার আগৈলঝাড়া উপজেলার সাবেক ইউএনও (বর্তমানে বরগুনা সদর উপজেলা) গাজী তারিক সালমান সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালীন যারা আমাকে দিয়ে অন্যায় কাজ করাতে পারেননি, সেই প্রভাবশালীরাই আমার বিরুদ্ধে মামলা করিয়েছেন। আমি জানি, প্রধানমন্ত্রী সুবিবেচক। তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তিনি বুঝবেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধার কথা। তিনি আরও বলেন, আমাকে হেনস্থা করার ছবিসহ সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি কোন আবেদন না করা সত্ত্বেও তিনি (প্রধানমন্ত্রী) নিজেই যে ষড়ন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া। আর এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরঋণী। আমার বিশ্বাস, মূল ঘটনা উদ্ঘাটনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। আমি চাই, যারা আমাকে কলঙ্কিত করার ষড়যন্ত্র করেছেন তাদের বিচার হোক। আমি বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগেই ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। দেশের মানুষ, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। গাজী তারিক সালমান আরও বলেন, আমি আগৈলঝাড়ায় ছিলাম আট মাস। তখন ওই প্রভাবশালী মহলের অনেক অপকর্মে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কোন ঠিকাদার বা জনপ্রতিনিধির অন্যায়কে মেনে নেইনি। এমনও হয়েছে, কাজ ঠিকমতো না হওয়ায় আমি দুই কিস্তির টাকা দিয়ে বাকি টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। তারাই আমাকে আগৈলঝাড়ায় থাকতে দেননি। এরপর বরগুনা সদরে বদলি হয়ে গেলে ঘটনার তিন মাস পর তারা আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করিয়েছেন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে মামলা ও ষড়যন্ত্রের শিকার হই, এটাই অনেক কষ্টের। ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউএনও তারিক সালমান বলেন, ঘটনার শুরু গত এপ্রিল মাসে আগৈলঝাড়া সদরের শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ কেন্দ্রে বাংলাদেশের ইতিহাস ও অভ্যুদয় পরীক্ষা চলকালীন। পরীক্ষার শেষ সময়ে সরকারী গৌরনদী কলেজের শিক্ষার্থী ও আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের ছেলে আল-রাজিন ওরফে পিয়াল সেরনিয়াবাতকে নকল করার দায়ে আমি বহিষ্কার করেছিলাম। তখন পিয়াল স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ তার চাচা পরিচয় দিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। এ ঘটনায় পিয়ালকে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদ- ও নকলে সহযোগিতা করায় কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নারায়ণ চন্দ্র সরকারকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদ-াদেশ দেয়া হয়। একই সঙ্গে পরীক্ষা কক্ষে কর্মরত থাকা দুই প্রভাষককেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। তখন থেকেই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতা ক্ষিপ্ত ছিলেন আমার (তারিক সালমান) ওপর, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মিথ্যা অপবাদের মাধ্যমে। তারিক সালমান বলেন, গত ১৯ জুলাই আদালতের রায় শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। সকালে বরিশালের চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে যখন হাজির হয়েছিলাম তখনও বুঝতে পারিনি পরবর্তী কয়েক ঘণ্টা আমাকে এ ধরনের হেনস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। আদালতের জারি করা সমনের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে আমাকে হাজিরা দিতে হয়েছিল। যে অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়েছে, সেটি জামিনের অযোগ্য কোন অপরাধ নয়। সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও একটি উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হয়েও যে আমার জামিনের আবেদন নাকচ করে দিয়ে আদালত আমাকে জেলে পাঠানোর নির্দেশ দেবে, সেটা আমি কখনই ভাবতে পারিনি। আদালতের নির্দেশ শুনে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। গাজী তারিক সালমান বলেন, যখন আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তখনই আমি আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তারা আমাকে বলেছিলেন মামলা যেহেতু হয়েছে, সেহেতু আইনগতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, আমার জামিনের আবেদন নামঞ্জুরের পর আমাকে হাতকড়া পরিয়ে আদালতের গারদখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে আমাকে কারাগারে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। তখন আমি পুলিশকে অনুরোধ করেছিলাম, দয়া করে আমাকে একটু সময় দিন। আমার উর্ধতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর সুযোগ দিন। আমার (তারিক সালমান) অনুরোধে পুলিশ আমাকে উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ দেয়। পরবর্তীতে দুই ঘণ্টা আমি ছিলাম আদালতের গারদখানায়। সেখান থেকে দুপুর দেড়টার দিকে আদালতের বিচারক পিয়ন পাঠিয়ে আমাকে ডেকে পাঠান। সঙ্গে আমার আইনজীবীকেও পাঠানো হয়। পরবর্তীতে আমি আদালতে গিয়ে এজলাসে গেলেও বিচারক আমার মুখোমুখি হননি। তিনি খাস কামরায় বসে আমার জামিন মঞ্জুর হয়েছে মর্মে একটি আদেশ দেন। আদালতের পেশকার আমার জেল পরোয়ানাটি চোখের সামনেই ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি আমাকে বলেন, আপনার কোন চিন্তা নেই। আপনার জেল পরোয়ানাটি ছিঁড়ে ফেলেছি। গত চার দিন ধরে বাংলাদেশজুড়ে তাকে নিয়ে যে আলোচনার ঝড় বইছে, তারপর এখন তিনি কী করবেন? তিনি কি কোন আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের কথা ভাবছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও গাজী তারিক সালমান বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। আমাদের সার্ভিসের এ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই আমি পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবেই পঞ্চম শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীর আঁকা ছবি দিয়েই বাচ্চাদের উৎসাহ দেয়ার জন্য ২৬ মার্চের কার্ডটি ছাপানো হয়েছিল। কার্ডে অঙ্কনকৃত শিশু শিক্ষার্থীদের পরিচিতিও লেখা ছিল। এটিকে বিকৃত বলার কোন সুযোগ নেই এবং এটিকে কেউ যদি বিকৃত বলে, সে নিজেই আসলে বিকৃতমনস্ক।
×