ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্মের নামে জঙ্গী তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ জুলাই ২০১৭

ধর্মের নামে জঙ্গী তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হজযাত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন- ইসলামের নামে জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে মানুষ হত্যার জন্য বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে। ধর্মের নাম নিয়ে অহেতুক নিরীহ মানুষকে হত্যা করা, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ সৃষ্টি করার কথা ইসলামের কোথাও নেই। এসব কর্মকা-ের ফলে নিরীহ মুসলমানদের নানা জায়গায় হয়রানির শিকার হতে হয়, হেনস্তা হতে হয়, এমনকি জীবনও দিতে হয়। কয়েকটা বিপথগামী লোকের কারণে আজকে গোটা মুসলিম উম্মাহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। সে জন্যই আমরা আমাদের দেশে কোনমতে সন্ত্রাস হতে দেব না। আর আত্মঘাতী হওয়া, এটা ইসলাম কখনও সমর্থন করে না। প্রধানমন্ত্রী শনিবার সকালে রাজধানীর আশকোনায় হজ ক্যাম্প থেকে ‘হজ ২০১৭’ কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলাম ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করার কথা উল্লেখ করে বলেন, ইসলাম পবিত্র ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধর্মে নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার রয়েছে। সুতরাং এ ধর্মকে কলুষিত করার মতো কোন কাজ করবেন না। বাংলাদেশের মানুষ যেন বিশ্বে সম্মানজনকভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সে জন্য দোয়া চেয়ে প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ধর্মের নামে বিভ্রান্তির শিকার হয়ে যারা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে গেছে- তাদের যেন আল্লাহ হেদায়েত করে এবং তারা যেন সুপথে ফিরে আসে সে জন্য মক্কা-মদিনায় দোয়া করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, এমন দিনও গেছে এ দেশের মানুষ একবেলা খেতে পারেনি। কিন্তু তার সরকার মানুষকে দুই বেলা খাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে বলে উলেখ করে বলেন, -আমাদের লক্ষ্য একজন মানুষও না খেয়ে থাকবে না। দোয়া করবেন প্রত্যেক মানুষকে যেন ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে পারি। কেউ গৃহহীন থাকবে না, প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরবাড়ি করে দেয়া হচ্ছে, আগামী দিনেও এটা অব্যাহত থাকবে। আপনাদের যেন আমরা আরও সেবা করতে পারি সে জন্য দোয়া করবেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা তখন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে যান। প্রধানমন্ত্রী দুই বোনকে এতিম উল্লেখ করে ওই ঘটনা স্মরণ করে দোয়া চেয়েছেন। নিজে ১৯৮৪ সালে প্রথম ওমরাহ এবং ১৯৮৫ সাল থেকে বহুবার হজ পালন করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন- যেহেতু পিতা-মাতা সবাইকেই হারিয়েছি, তাই তাদের জন্য আমাকে বারবার বদলি হজ করতে হয়েছে। হজ পালনের অভিজ্ঞতা থেকে হজযাত্রীদের নানা সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণের কথা স্মরণ করে বলেন, তাঁবুগুলোতে ঘুরতাম। যা যা সমস্যা দেখতাম, এসে সৌদি বাদশার কাছে চিঠি লিখতাম। আমি সরকারে ছিলাম না, তারপরও আমি চেষ্টা করতাম। ক্ষমতায় না থাকাকালে সমস্যাগুলো কাছে থেকে দেখে উপলব্ধি করতে পারার অভিজ্ঞতা থাকায় ক্ষমতায় এসে হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় সব করেছি। বিএনপি সরকারের আমলে ৪৮ হাজারের কম হজযাত্রী থাকলেও চলতি বছর সে সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা ও অসংখ্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আহত করেছে। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত করেন। লক্ষাধিক হাজির সুবিধায় হজ উইংয়ের অফিস জেদ্দা হতে মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে স্থানান্তরের কথা উলেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা দূর করে হজযাত্রীদের জন্য উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আগামী দিনেও হজ ব্যবস্থাপনায় সফলতার ধারা অব্যাহত থাকবে। এ প্রসঙ্গে অতীতে হাজিদের বাড়িভাড়া নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি তুলে ধরতে গিয়ে দূরবর্তী, পুরনো ও পাহাড়ের ওপর বাড়িভাড়া করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক হজযাত্রী পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে তাদের নিরাপদে ফেরার আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা পবিত্র মাটিতে যাচ্ছেন হজ পালনের উদ্দেশ্যে। আপনারা দেশের জন্য দোয়া করবেন। ইসলামের প্রসারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা তার সাড়ে তিন বছরের সরকারের সময়ে হজ ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে বহু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে প্রথম হজযাত্রী প্রেরণ করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন, ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন। একজন খাঁটি মুসলমান হিসেবে জাতির পিতা ইসলামের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। নিজের সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেনÑ কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা যাতে মূল ধারার শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। জীবনে চাকরি ও ভাল কাজের সুযোগ পায়; সেই সুযোগটা আমরা তাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছি। মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন-প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করব। যেখানে প্রকৃত ইসলামের ধারণাটা মানুষে পেতে পারে। তিনি বলেন, ক্ষমতায় না থাকাকালে সমস্যাগুলো কাছে থেকে দেখে উপলব্ধি করতে পারার অভিজ্ঞতা থাকায় ক্ষমতায় এসে হজের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য করণীয় সব করেছি। বিএনপি সরকারের আমলে ৪৮ হাজারের কম হজযাত্রী থাকলেও চলতি বছর সে সংখ্যা ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আন্দোলনের নামে ৫ শতাধিক মানুষকে হত্যা ও অসংখ্য মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আহত করেছে। আল্লাহ যেন তাদের হেদায়েত করেন। তিনি হজে গিয়ে দেশ ও জাতির জন্য হজযাত্রীদের দোয়া করতে বলেন। বাংলাদেশে যেন সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণ সহঅবস্থান করে যেতে পারে সে জন্যও দোয়া প্রাথর্না করে তিনি বলেনÑ যারা ধর্মের নামে বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে আল্লাহ যাতে তাদের সুপথে ফিরিয়ে আনেন। এবার বিমানভাড়ায় হজযাত্রীদের আবগারি শুল্ক এক হাজার টাকা মওকুফ করে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেনÑ এ বাজেটে এক্সাইজ ডিউটি যেটা আগে এক হাজার টাকা ছিল, সেটাকে দুই হাজার টাকা করা হয়েছে। যেহেতু এবার হজ প্যাকেজ আগেই ঘোষণা করা হয়েছে, আপনারা হাজিরা আগেই টাকা জমা দিয়েছেন। সে জন্য অতিরিক্ত টাকা যাতে এবার না দিতে হয় সে জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে বলব। মাত্র এক হাজার টাকা দিতে কারও কোন অসুবিধা নেই। তারপরও এবার যেহেতু সব ব্যবস্থাপনা হয়ে গেছে, এ সুযোগ নিয়ে অনেকে ঝামেলা করতে পারে। যাতে ঝামেলা করতে না পারে সে জন্যই এ ব্যবস্থা নিয়েছি। এ সময় ২০১০ সালে জাতীয় হজ নীতিকে আরও যুগোপযোগী ও তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর করে ‘জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি’ প্রণয়নের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, হজবিষয়ক ওয়েব পোর্টালww w.hajj.gov.bd এ সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। হজ নিয়ে মোবাইল এ্যাপ চালু করা হয়েছে। মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমেও প্রত্যাশিত তথ্য পাচ্ছেন। ভবিষ্যতে এগুলো আরও গতিশীল করা হবে। তার সরকারের আমলে নেয়া বিশেষ পদক্ষেপ হজযাত্রীদের নিবন্ধন ডিজিটাইজ করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেনÑ আগে হজ প্যাকেজের সম্পূর্ণ টাকা জমা দিয়েও অনেক সময় প্রতারিত হতে হতো, প্রাক-নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালুর ফলে প্রতারণা বন্ধ হয়েছে। বেসরকারী ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীরা যাতে কোন হয়রানির শিকার না হন, সে জন্য মক্কা-মদিনায় সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সব বিষয়ে আরও উন্নতি করা হবে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা শেষে হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করে ঘুরে ঘুরে হজযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। মহিলা হজযাত্রীদের দু-একজন তার সঙ্গে করমর্দন ও মাথা নুইয়ে দোয়া-আর্শীবাদ নেন। এ সময় দুজন মুরুব্বি হজযাত্রী প্রধানমন্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া ও আর্শীবাদ করেন। এ সময় তিনি হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তসলিমকে সামনে পেয়ে হজ ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ ত্যাগের মনোভাব নিয়ে সেবা করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী হাবকে আগের তুলনায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখারও নির্দেশ দেন। ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- বেসরকারী বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বি এইচ হারুন, স্থানীয় সাংসদ সাহারা খাতুন, সৌদি দূতাবাসের শার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স আবদুলাহ আল মুতাইরি এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবদুল জলিল ও হজ অফিসের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন।
×