ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী শ্রমিক হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২৩ জুলাই ২০১৭

তিন বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী শ্রমিক হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ দুস্থ শ্রমিকদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবায় হাসপাতাল নির্মাণ করেছে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন। সরঞ্জামাদি কেনা সম্পন্ন হয়েছে। ঘটা করে উদ্বোধনও করা হয়। তবে প্রায় তিন বছরেও চালু হয়নি হাসপাতালটি। নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালের শ্রমিক ভবনে ২০১৪ সালের ২০ অক্টোবর হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের নগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। মাঝে কেটে গেছে দুই বছর ১০ মাস। পনেরো শয্যার এ শ্রমিক হাসপাতালে রয়েছে জরুরী বিভাগ, অর্থপেডিক সার্জারি ও সাধারণ ওয়ার্ড। এরই মধ্যে সংযোজন হয়েছে অত্যাধুনিক ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন। কেনা হয়েছে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার যন্ত্রাংশও। প্রফেসর ডাঃ হুমায়ূন কবীরের তত্ত্বাবধানে চারজনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল নিয়োগের বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছিল। তবে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়নি এখনও। নিয়োগ হয়নি চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য জনবল। সম্প্রতি হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, সাধারণ ওয়ার্ডে পাতা দুই সারি বেডে ধুলার আস্তরণ। পাশের কক্ষগুলোয় কালো কাপড়ে মোড়ানো ইসিজি ও এক্স-রে মেশিন। সুসজ্জিত চিকিৎসক চেম্বার। ঝকঝকে টাইলস। সবই তালাবদ্ধ পড়ে থাকে সব সময়। সবকিছু থাকার পরও হাসপাতালটি না হওয়ায় বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ শ্রমিকরা, যাদের চিকিৎসার কথা বলে অনুদান ও চাঁদা তুলে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধও তারা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালের নামে কোটি টাকা তুলে নয়-ছয় করেছেন শ্রমিক নেতারা। টাকা-পয়সা নিয়ে সম্প্রতি বিরোধে জড়িয়েছেন তারা। ফলে হাসপাতাল চালু আর হচ্ছে না। অথচ হাসপাতালের নামে বিভিন্ন রুটের পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় চলছে। আসছে দান-অনুদানও। জানা গেছে, বিভিন্ন রুটের বাস থেকে প্রতিদিন ইউনিয়নের নামে আদায় হয় ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া আঞ্চলিক ইউনিয়নের নামে চারটি পয়েন্ট থেকে ৫ হাজার এবং ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ৪ হাজার টাকা করে আদায় হয়। তবে এর অর্ধেক জমা হয় ইউনিয়নের নামে পূবালী ব্যাংকের সেরিকালচার শাখায়। বাকিটা থেকে যায় শ্রমিক নেতাদের পকেটে। আগের সভাপতি কামাল হোসেন রবি এবং সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীর স্বাক্ষরে এখনও আদায় হচ্ছে এ অর্থ। বর্তমানে আগের মেয়াদের সভাপতি কামাল হোসেন রবিকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন আগের কমিটির দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মমিন। সাধারণ শ্রমিকদের অভিযোগ, এ দুজন ছাড়াও আগের কমিটির সড়ক সম্পাদক আলিমুদ্দিন আলী মিলে দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়নের আর্থিক বিষয় দেখভাল করেন। তারাই হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন তারা। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক নেতা অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়নে যোগ দেয়ার পর কোটিপতি বনে গেছেন শ্রমিক নেতা কামাল হোসেন রবি ও মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। রবি এবং আগের কমিটির দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মোমিনের নামে ‘আরএম এক্সপ্রেস’র চারটি বাস চলছে। অভিযোগ রয়েছে, গত দুই বছরে মাহাতাব ইউনিয়নে ১০০ জনকে সাধারণ সদস্যপদ দেয়ার নামে ২০ লাখ টাকা আদায় করেছেন। শ্রমিক ইউনিয়নের মালিকানাধীন হোটেল গোল্ডেন স্টার বিক্রির ৪১ লাখ টাকাও রয়েছে তার কাছেই। জানতে চাইলে শ্রমিক ইউনিয়নের আগের কমিটির সভাপতি ও বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক কামাল হোসেন রবি অভিযোগ করেন, হাসপাতালের পুরো টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিগত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার নামে অনুদানের ১০ লাখ টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। এ কারণেই হাসপাতাল চালু করতে পারছেন না তারা। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন মাহাতাব হোসেন। তার দাবি, হাসপাতালসহ ইউনিয়নের পুরো অর্থের হিসাব দেখভাল করতেন কামাল হোসেন রবি ও দফতর সম্পাদক মোমিনুল ইসলাম মোমিন। তারা দুজনই সব টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে ১০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কেনাকাটা সম্পন্ন করেছে। এ নিয়ে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন। অবশ্য রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) রেয়াজাত হোসেন রিটু সরঞ্জামাদি কেনাকাটার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
×