ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চকরিয়ায় মাতামুহুরীর ভাঙ্গনে বিলীন সহস্রাধিক বসতি

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২৩ জুলাই ২০১৭

চকরিয়ায় মাতামুহুরীর ভাঙ্গনে বিলীন সহস্রাধিক বসতি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে ॥ চকরিয়ার বুক চিরে প্রবাহিত এক সময়ের প্রমত্তা মাতামুহুরী নদী বর্তমানে এলাকাবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর বর্ষাকালে অব্যাহত ভাঙ্গনে দুই যুগে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে নদীতীর এলাকার অন্তত সহস্রাধিক বসতি ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি। পাশাপাশি ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ঠিকানা হারিয়েছে একাধিক মসজিদ, মাদরাসা ও বিদ্যালয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ, মাতামুহুরীর ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের টাকায় প্রতি বছর কবলিত এলাকায় জোড়াতালির কাজ করলেও কোন সময় টেকসই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি। প্রতি বছর বর্ষাকালে ভারি বর্ষণ এবং নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের তা-বে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তোড়াতালির সব কাজই নদীতে তলিয়ে যায়। এরপর শুরু হয় নদী ভাঙ্গনের মহোৎসব। এখনও অব্যাহত রয়েছে নদীর দু’তীরে ভাঙ্গনের খেলা। এতে বসতি ও বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাচ্ছে মানুষ, বিপন্ন হচ্ছে সভ্যতা। জনপ্রতিনিধিদের দাবি, নির্বিচারে পাথর আহরণ ও গাছ কেটে লুটে নেয়ার কারণে প্রতি বছর বর্ষাকালে মাতামুহুরী নদীর উৎপত্তিস্থল লামা ও আলীকদমের পাহাড় থেকে নেমে আসা পলিমাটি ঢলের পানির সঙ্গে মিলে বছরের পর বছর নদীতে পড়ায় নাব্য হারাচ্ছে। নদীর নাব্য কমে যাওয়ার কারণে পরের বছর বর্ষাকালে নদীতে ঢলের পানি নামলে তা দু’তীর উপচে অনায়াসে ঢুকে পড়ছে লোকালয়ে। এতে চকরিয়ার সর্বস্তরের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে সব ইউনিয়নের সড়ক, উপ-সড়ক। স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বন্যার সময় নদীতে বানের পানিরপ্রবাহ কিছুটা কমে গেলে ফের শুরু হয় নদীর দুই তীরে ভাঙ্গনের মহোৎসব। এভাবে গত দুই যুগ ধরে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে নদীতীর এলাকার জনপদ বিশেষ করে চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যাচর, ফাসিয়াখালী, কৈয়ারবিল, বরইতলী, পূর্ব বড়ভেওলা, কোনাখালী, বিএমচর, সাহারবিল, চিরিঙ্গা ইউনিয়ন ও চকরিয়া পৌরসভার অন্তত হাজারো পরিবার বাড়ি-ভিটা ও জমিজমা হারিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। চকরিয়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক আলমগীর চৌধুরী বলেন, প্রতি বছরের মতো চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরুতে অব্যাহত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের প্রভাবে সৃষ্ঠ বন্যার তা-বে নদীর ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ এবং ফাসিয়াখালী ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ। চলতি মাসে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে চকরিয়া পৌরসভার শহররক্ষা বাঁধ এলাকার গনী সিকদারপাড়ার অন্তত ১২টি বসতঘর ও বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি, স’মিল এবং বিদ্যুতলাইনের ছয়টি খুঁটি। ফাসিয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি বন্যার তা-বে ক্ষতিগ্রস্ত চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরুরী প্রকল্পের আওতায় প্রথমে স্পার দেয়া হয়। কিন্তু দুই দিনের মাথায় পানির প্রবল স্রোতের টানে স্পারগুলো ভেসে গেছে। কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে মাতামুহুরী নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদীতীরবর্তী প্রায় এলাকায় ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি ও আবাদি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে আমরা চকরিয়া শহররক্ষা বাঁধ ও ঘুনিয়া পয়েন্টের বেড়িবাঁধ এলাকায় নদীতে প্রথমে ফাইলিং করে গাছের স্পার দিলেও পানির প্রবল স্রোতে তলিয়ে গেলে সেখানে বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) দিয়ে বাঁধটি রক্ষার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
×