ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

বুড়োরা সমাজের বোঝা নয়-আশীর্বাদ

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৩ জুলাই ২০১৭

বুড়োরা সমাজের বোঝা নয়-আশীর্বাদ

সারা বিশ্বেই বয়স্ক লোকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বিশেষ করে ৬৫ এবং তদুর্ধ বয়সী লোকের সংখ্যা। এটাকে সমাজের মস্ত মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দেখা হয়। কারণ, বুড়িয়ে যাওয়া মানেই তো তরুণদের ওপর বৃদ্ধদের নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়া। এদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মানেই প্রবৃদ্ধি, কর খাতে অর্জিত আয় ও শ্রমশক্তি কমে যাওয়া এবং পেনশন ও স্বাস্থ্যখাতে খরচ বেড়ে যাওয়া। সোজা কথায় মানুষ বুড়িয়ে যাওয়ার কারণে সমাজের ওপর সৃষ্টি হয় বাড়তি চাপ এবং এক ধরনের অভিশাপ। কিন্তু অভিশাপের বদলে তারা আশীর্বাদও হয়ে দাঁড়াতে পারে। সমাজ ও অর্থনীতিতে অবদানও রাখতে পারে। ১৮০০ সালের আগে বিশ্বের কোন দেশেরই মানুষের গড় আয়ু ৪০-এর বেশি ছিল না। ১৯০০ সাল থেকে মানুষের গড় আয়ু যতটা বৃদ্ধি পায় আগে আর কখনও ততটা বাড়েনি। আয়ু বৃদ্ধি বা দীর্ঘায়ু হওয়া মানবজাতির বড় অর্জনগুলোর একটি। তারপরও এটাকে সমাজের এক মস্তো মাথাব্যথার কারণ হিসেবে দেখা হয়। ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার কারণ হিসেবে দেখা হয়। ১৯৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যার ৫ শতাংশের বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি। ২০১৫ সালে এদের সংখ্যা ছিল ৮ শতাংশ। ২০৫০ সাল নাগাদ সেটা বেড়ে ১৬ শতাংশ হবে বলে ধারণা হয়। ধনী দেশগুলোর বুড়োদের সংখ্যা চীন বাদে উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বেশি বাড়ছে। ব্রিটেনে শতবর্ষী লোকের সংখ্যা ১৯১৭ সালে ছিল মাত্র ২৪ জন। এখন প্রায় ১৫ হাজার। মানুষের আয়ুবৃদ্ধির একটা কারণ রিজেনারেটিভ ওষুধ উদ্ভাবনসহ জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি। ইদানীং মানুষের গড় আয়ুর উর্ধসীমাও বাড়ছে। ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত তা ৮৯ বছরে স্থির ছিল। তার পর থেকে তা ৮ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে ২০১০ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৮৫ বছর উর্ধ নর-নারীর সংখ্যা ৬৫ উর্ধদের তুলনায় দ্বিগুণ বাড়বে। গত দু’এক দশক ধরে এই বুড়োদের নিয়ে নানান হুঁশিয়ারি ও সতর্কবাণী উচ্চারিত হচ্ছে। এদেরকে ‘রূপালী মেয়াদী বোমা’ বা ‘ধূসর সুনামি’ বলেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে। দীর্ঘায়ু মানুষদের পিছনে দীর্ঘদিন ধরে পেনশন ও চিকিৎসা খাতে যে ব্যয় হচ্ছে এবং হবে তার জন্য এদেরকে সমাজের জন্য বোঝা এবং আর্থিক বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মানুষ যত দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে ততই তারা শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজ ও অর্থনীতির জন্যও অবদান রাখতে পারে। তবে তার জন্য ৬৫ উর্ধ নারী-পুরুষদের অর্থনীতিতে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণকারীতে পরিণত করতে হবে। এটা বাস্তব সত্য যে, এখন ৬৫ বছরের পুরুষরা তাদের একই বয়সের দাদাদের তুলনায় ভাল অবস্থায় আছে শরীর স্বাস্থ্যের দিক থেকে। জীবনের শেষ দিকে ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান দৌর্বল্য ও ভগ্নস্বাস্থ্যের অধ্যায়টা কমে আসছে। অথচ বেশিরভাগ দেশে অবসর গ্রহণের বয়সটা পাল্টানো হয়নি। মনে রাখতে হবে ১৮৮০’র দশকে জার্মানিতে প্রথম অবসরভাতা লাভের আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা চালু হয়। প্রথমে তা প্রদেয় ছিল ৭০ বছর বয়স থেকে। পরে তা কমিয়ে করা হয় ৬৫ বছর। আজ ধনী বিশ্বে জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই তাদের ৬৫তম জন্মদিন বেঁচে বর্তে পালনই যে শুধু করে তাই নয় তাদের বেশির ভাগই সুস্বাস্থ্য নিয়ে যাকে। অথচ ৬৫ বছর বয়সকে এখনও বৃদ্ধ বয়সের যাত্রাবিন্দু হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু ধনী বিশ্বে অন্তত, প্রচলিত কর্মময় বয়সের শেষ এবং বুড়ো বয়সের শুরুর মধ্যে জীবনের এক নতুন স্তর বা পর্বের আবির্ভাব ঘটছে। এই স্তর বা পর্বে ‘নবীন বৃদ্ধরা’ প্রায়শই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী। অনেক ক্ষেত্রে তারা এখনও কাজ করে। স্বাস্থ্যবহির্ভূত বিভিন্ন ব্যাপারে অর্থব্যয় করে। তাঁরা আরও বেশিদিন উৎপাদনক্ষম থাকবে। সেটা স্রেফ এই কারণে নয় যে তাদের কাজ করার প্রয়োজন আছে। বরং এই কারণে যে তারা কাজ করতে চায় ও পারে। তাঁরা শ্রমিক ও ভোক্তা উভয় হিসাবে অর্থনীতিতে বিরাট মূল্য যোগ করতে পারে। কিন্তু ‘শিক্ষা-কর্ম-অবসর’ এই তিন পর্বের পুরনো জীবনচক্র সবার মনে এমনভাবে গেঁথে আছে যে নতুন এই পর্বের মানুষদের নিয়োগকর্তারা গ্রাহ্যের মধ্যে নিতে চায় না। বয়স্ক মানুষদের সম্পর্কে সমাজে একটা নেতিবাচক ধারণা বিদ্যমান। যে মুহূর্তে কারোর বয়স ৬৫ বছর হয়ে যায় সেই মুহূর্ত থেকে তাদের সম্পর্কে ধারণাটাও পাল্টে যায়। তারা তখন অর্থনীতিতে নিট অবদানকারী থেকে নিট সুবিধাভোগীতে পরিণত হয় বলে গণ্য করা হয়। কিন্তু তাদেরকে যদি অর্থনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ দেয়া যায় তাহলে এই অপবাদ থেকে তারা মুক্ত তো হতেই পারে উপরন্তু সমাজে প্রবৃদ্ধিতে অবদানও রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায়টি হলো অবসরের বয়সসীমাটা বাড়িয়ে দেয়া এবং অনেক ক্ষেত্রে কর্মজীবনকে পার্ট-টাইম করা। ধনী দেশগুলোতে বিশেষ করে ইউরোপে পে-এস-ইউ-গো পাবলিক পেনশন স্কিম আছে যার কার্যত অর্থ হলো তরুণরা বুড়োদের জন্য অর্থ দেবে। কিন্তু বুড়োদের যদি আরও দীর্ঘদিন কাজ করার সুযোগ থাকে তাতে যে বাড়তি প্রবৃদ্ধি সৃষ্টি হবে তার সুফল তরুণ ও বুড়ো উভয়েই ভোগ করতে পারবে। ধনী বিশ্বে গড় ৬৫ বছর বয়সের মানুষরা এখন আরও ২০ বছর বেঁচে থাকার এবং এদের অর্ধেক অক্ষমতামুক্ত অবস্থায় বেঁচে থাকার আশা করতে পারে। এদের যদি অবসর গ্রহণ বিলম্বিত করা যায় তাহলে তারা সমাজের কাছে বোঝা হয়ে থাকবে তো নয়ই উপরন্তু নিজেদের তথা সমাজের জন্য আর্থিক অবদান রাখতে পারবে। বুড়োদের জন্য কাজের সুযোগ রাখা যে সম্ভব সিউলের উপকণ্ঠে সি.জে লজিস্টিকস্ নামে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ডেলিভারি কোম্পানিই তার প্রমাণ। কর্মচারীদের অধিকাংশের বয়স সত্তুরের কোঠায়। একজনের বয়স তো ৭৭ বছর এই বয়স্ক লোকদের দিয়ে কাজ করানোর ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। এরা সংখ্যায় কম বাক্স বহন করে এবং অনেক ক্ষেত্রে তরুণ সহকর্মীদের চেয়ে মন্থর। কিন্তু তাতে কোম্পানির কোন ক্ষতিবৃদ্ধি নেই। কারণ প্রতি ডেলিভারির জন্য ওদের পারিশ্রমিক দেয়া হয়। এতে এই বুড়োদের মাসিক যে আয় হয় তাতে ভালভাবেই চলে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলো আইনজীবী, এ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রভৃতি পদে নিয়োগ দেয়ার সময় বুড়োদের মধ্যে প্রচুর রিক্রুট খুঁজে পায়। ওয়াহাব নামে নিউইয়র্কভিত্তিক একটি কোম্পানি শত শত প্রাক্তন ফাইন্যান্স ও বীমা কর্মীদের কাজ যুগিয়ে থাকে যাদের বেশির ভাগের বয়স ষাট ও সত্তরের কোঠায় এদের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো মেধা ও অভিজ্ঞতা। বয়স্করা অর্থাৎ বুড়োরা শিল্প ও ব্যবসায় উদ্যোক্তাও হয়ে উঠছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় আমেরিকায় আজ ৫৫ থেকে ৬৫ বছর বয়সী লোকদের নতুন কোম্পানি খুলে বসার সম্ভাবনা ২০ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি। ব্রিটেনে নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠাতাদের ৪০ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের ওপর এবং প্রায় ৬০ শতাংশের বয়স ৭০ বছরের ওপর। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায়ও বয়স্করা বিশেষ করে কোম্পানি থেকে ছাঁটাই হওয়া লোকজন নিজেরা ব্যবসায় উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছে। বয়স্ক শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা যে তরুণদের তুলনায় কম হয় সেটা সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়। যেখানে কায়িক শ্রমের ব্যাপার থাকে সেখানে এটা সত্য হতে পারে তবে এমন অনেক ক্ষেত্র আছে সেখানে বয়স বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাজের পারদর্শিতা কমে না বরং ক্ষেত্রবিশেষে বাড়ে। বুড়োদের কারণে ব্যবসায়ীরাও লাভবান হতে পারে। ধনী দেশগুলোতে বুড়োরা ব্যবসায়ীদের কাছে স্পষ্টতই ‘রূপালী ডলারের’ সুযোগ বয়ে আনে। আমেরিকায় আয়ের যে অংশটা খরচ হয় তার ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী বয়স্করা। কারণ তাদের অবসরের সময় প্রচুর। হাতে নগদ টাকাও কম নয়। যেসব পরিবার প্রধানের বয়স ষাট বছরের বেশি বিশ্বব্যাপী সেসব পরিবারের ব্যয় ২০২০ সাল নাগাদ ১৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ষাটোর্ধদের এ্যাডভেঞ্চারমূলক ভ্রমণ আমেরিকায় জমজমাট ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পর্যটন শিল্পে ৬৫-৭৪ বয়সসীমার লোকরাই সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে উন্নত বিশ্বের নগরগুলোতে ভোগ-ব্যবহারের যে প্রবৃদ্ধি ঘটবে তার সিংহভাগটাই হবে ষাটোর্ধদের তরফ থেকে। তবে মানুষের আয়ু যতই বাড়ুক না কেন তার শেষ অধ্যায়টা প্রায়শই অতি নিরাপদ। ধনী বিশ্বে ৮০ বছর বয়স থেকে প্রতি পাঁচজনের একজন কোন না কোন ধরনের স্মৃতিবিভ্রম, চারজনের একজন দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা এবং পাঁচজনের চারজন শ্রবণ সমস্যায় পড়বে। যারা ৯০ বছরে পৌঁছাতে পারবে যাদের অধিকাংশই অন্তত একটা না একটা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেবে যেটাকে শারীরিক অক্ষমতা বলা চলে। অনেকের এক সঙ্গে একাধিক সমস্যাও হতে পারে। গরিব ও স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে এই সমস্যাগুলো প্রায়শ আগেভাগে দেখা দেয়। আগের দিনগুলোতে বুড়োরা তাদের জীবনের এই শেষ অধ্যায়টি বাড়িতে উত্তরোত্তর নির্ভরশীল পর্যায়ে কাটাত। আত্মীয়স্বজনরাই তাঁদের দেখাশোনা করত। কালক্রমে এল নাসিং হোম ও ওল্ড হোম। আজ প্রযুক্তি বুড়োদের জীবনকে উন্নততর করার বিরাট প্রতিশ্রুতি ধারণা করে অছে যারা বুড়োদের দেখাশোনা করছে তাদের জন্যও এই প্রযুক্তি সহায়ক হয়ে উঠেছে এর ফলে বুড়োরা নিজেদের স্বাধীনতা বজায় রাখতে এবং সেইসঙ্গে আরও দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ণাঙ্গ জীবন কাটাতে পারবে। বুড়োদের জীবনের এই শেষ অধ্যায়টি উন্নত করে তোলার মতো প্রযুক্তির অস্তিত্ব আছে। তার মধ্যে মাত্র দুটি হলো স্মার্ট হোম এবং অনডিমান্ড ইকোনমি মূলত এগুলো তরুণদের লক্ষ্য করে উদ্ভাবিত হলেও বুড়োদের জীবনেও বিরাট প্রভাব ফেলতে পারে। দৃষ্টান্ত দিয়ে বলা যায় নেদারল্যান্ডসের রটারডাম শহরের একটি আবাসিক এলাকায় ৬ লাখ জনি নামের ৮৭ বছরের এক বৃদ্ধের বাড়িটিকে ৮টি সেন্সর দিয়ে সাইবার ক্যাসেলে পরিণত করা হয়েছে। তাঁর সন্তানরা সবাই পঞ্চাশোর্ধ। তাঁরা জনি কখন বিছানা থেকে উঠে, টয়লেট যায়, খাবার খায় বা বাড়ি থেকে বের হয় সবই এ্যাপ দিয়ে দেখতে পারে। কোন সমস্যা হলেই টের পেয়ে যায়। জনি এখন নিজেকে অনেক নিরাপদ ভাবেন। একা বাস করা বুড়োদের জন্য তো এমন ব্যবস্থা এক বিশাল সুবিধা। প্রয়োজনীয় প্রযুক্তির বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব আছে-অন্তত নমুনা রূপে। সমস্যাটা হচ্ছে সেই প্রযুক্তিকে দরকারের মানুষটির কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য প্রোভাইডার পাওয়া। বুড়িয়ে যাওয়া আশীর্বাদ না অভিশাপ? এ প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে বুড়োদের কারা জীবনকে কিভাবে দেখছে তার ওপর। নৈরাশ্যবাদীদের কাছে বার্ধক্য অভিশাপ ছাড়া আর কিছুই নয়। আবার অনেকে আছেন যারা বার্ধক্যকে ইতিবাচক চোখে দেখেন। তাদের কাছে বুড়িয়ে যাওয়া মানেই জীবনের বাধা বিপত্তিগুলোকে অতিক্রম করে আসা। এটাই হলো শক্তির পরিচায়ক। তাদের মতে বুড়িয়ে যাওয়া মানে জীবনকে কখনই ভিন্নভাবে দেখা নয় বরং জীবনের অর্থকে আরও ভাল ও গভীরভাবে উপলব্ধি করা। তারা মনে করেন যে বার্ধক্য তাদের সক্রিয় কায়িক শ্রম থেকে সরিয়ে নিলেও মানসিক শ্রম থেকে নয়। বার্ধক্য এই শ্রেণীর মানুষকে শারীরিকভাবে দুর্বল করে দেয় বটে। তবে তাদের মনকে আরও সক্ষম করে তোলে। বার্ধক্য এদের শারীরিক আনন্দকে হরণ করে নেয় না- শুধু এদের শারীরিক আনন্দলাভের শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। এরা বার্ধক্যকে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যাওয়া হিসেবে দেখে না বরং জীবনের এক অধ্যায় থেকে অন্য অধ্যায়ে উত্তরণ হিসেবে দেখে। দীর্ঘায়ু মানুষদের জীবন যেমন দীর্ঘতর তেমনি তাদের কাজ করার ও আনন্দ-বিনোদনের সুযোগও থাকে বেশি। এতে ব্যক্তিজীবন, সমাজ জীবন ও অর্থনীতি সবই সমৃদ্ধ হয়। মানবজাতি দীর্ঘায়ু হওয়ার সুফলগুলোকে কাজে লাাগতে পারবে কিনা তা নির্ভর করছে এসব সুযোগকে কিভাবে সদ্ব্যবহার করা যায় তার ওপর। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×