ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে লোকসান সিনেমা হলে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২২ জুলাই ২০১৭

আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে লোকসান সিনেমা হলে

কোথায় হারিয়ে গেল সোনালি বিকেলগুলো সেই; আজ আর নেই। বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্না দে’র কফি হাউসের সেই কালজয়ী গানের এই কলিটুকুর মর্ম কথা উপলব্ধি করলেই এ দেশের চিত্র জগতের কথা মনে পড়ে যায়। চলচ্চিত্র জগতের সেই গৌরবগাথা সোনালি দিনগুলো আজ আর নেই। আকাশ সংস্কৃতির আগ্রাসনে মানুষের রুচির পরিবর্তন হওয়ায় চিত্ত বিনোদনে একদিকে এসেছে পরশ্রীকাতরতা। অন্যদিকে ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মফস্বলের সিনেমা হলগুলো। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চিত্ত বিনোদনের প্রধান মাধ্যম সিনেমা তৈরি না হওয়ায় সাধারণ দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এখন আর শখের বশে সিনেমা হলমুখী হতে তেমন একটা রাজি নয় তারা। বর্তমান সময়ে যে সব সিনেমা তৈরি হচ্ছে তাতে শিক্ষণীয় এবং উপভোগ্য ও চিত্ত বিনোদনের অনেক কিছুই অভাব থাকছে। মানুষ এখন ঘরে বসে ভারতীয় বিনোদন চ্যানেলগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা একের পর এক ভারতীয় হিন্দী, বাংলা, তামিল, তেলেগু এবং হলিউডের নামী-দামী সিনেমা দেখে আনন্দ উপভোগ করছে। তাই তারা টাকা দিয়ে সিনেমা হলে বসে সস্তা ডায়ালগ শুনতে চায় না। সিনেমাপ্রেমীরা হলমুখী না হওয়ায় সিনেমা হলগুলোর এখন দৈন্যদশা। সিনেমা নির্মাণে দুর্বল কাহিনী নাকি সস্তা সংলাপের কৃত্রিমতা তা নির্মাতারা উপলব্ধি করতে পারছেন না? বিপুল অঙ্কের টাকা ব্যয়ে নির্মিত অনেক ছায়াছবি ব্যবসা সফল হচ্ছে না। আর ব্যবসা সফল না হওয়ায় মার খাচ্ছে প্রযোজকরা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিনেমা হল মালিকরা। জেলার একাধিক সিনেমা হল মালিক ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। অনেকে হলের ভবন ভেঙ্গে সেখানে গড়ে তুলেছেন শপিং মল, এ্যাপার্টমেন্ট, সুপার মার্কেটসহ ভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রয়োজনে কোন রকমে কোন কোন হল মালিক তাদের সিনেমা হল চালু রেখেছেন। সিনেমা হলে দর্শকের অভাবে হল মালিকরা দিনের পর দিন লোকসান গুনতে গুনতে একবারে দেউলিয়া হয়ে গেছেন। ফলে অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। নগর-মহানগরের সিনেমা হলগুলোর তুলনায় মফস্বল শহরের সিনেমা হলগুলোর অবস্থা একেবারেই নাজুক। এখানে সপরিবারে হলে বসে সিনেমা দেখবে এমন পরিবেশও থাকে না। মফস্বলের সিনেমা হলগুলো সেকেলে ও জরাজীর্ণ। এমন অনেক মালিক আছেন যারা শুধু অর্থ রোজগারের জন্য সিনেমা হল চালায়। হলের মধ্যে দর্শকদের জন্য আরামদায়ক কোন আসন বিন্যাস করতে পারেননি। মফস্বলের কোন কোন হলে দর্শকের অভাবে নির্ধারিত সময়ে শো প্রদর্শনে ব্যর্থ হন। এক সময় সারাদেশে প্রায় দেড় হাজার সিনেমা হল ছিল। উল্লিখিত কারণে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হতে হতে এখন চার শ’তে নেমে এসেছে। বর্তমানে যে ক’টি সিনেমা হল টিকে আছে তাও অস্তিত্ব সঙ্কটে। তা ছাড়া যুগের চাহিদা অনুযায়ী মালিকরা আর্থিক সঙ্কটের কারণে সিনেমা হলগুলো আধুনিক ও ডিজিটালাইজড করতে পারেননি। সিনেমা হলগুলো আধুনিকায়ণ করার জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় আজও সিনেমা হল ভগ্নদশা অবস্থায় রয়ে গেছে। অবশিষ্ট সিনেমা হলগুলোর সিংহভাগ নিভন্ত প্রদীপের মতো কোন মতে ধিক ধিক করে টিকে আছে। ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে জেলার ৭৫ ভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×