ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সকল শ্রেণীর মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা

সিনেমা হল-স্মৃতিময় অধ্যায়

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২২ জুলাই ২০১৭

সিনেমা হল-স্মৃতিময় অধ্যায়

সিনেমা হল আজ শুধু স্মৃতিময় এক অধ্যায়। পঞ্চাশের দশকের মধ্যভাগ থেকে আশির দশকের প্রায় শেষ ভাগ পর্যন্ত উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত অর্থাৎ সকল শ্রেণীর মানুষের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা। সিনেমা দেখার কথা উঠলেই একসময় বলা হতো ‘চলো বই দেখে আসি।’ সেদিনের সিনেমার গল্পের বুনন এতটাই শক্তিশালী ছিল যে সিনেমা মানুষের হৃদয়ে গেঁথে যেত। গল্পই ছিল ছবির প্রাণ। আজ তা নিকট অতীত। এরই মধ্যে হাতেগোনা কিছু ছবি দর্শকদের সিনেমা হলমুখী করছে ঠিকই তবে সিনেমা হলের পরিবেশ অচলায়তন দর্শককে টানতে পারছে না। বর্তমানে সেদিনের মতো সেই কার্বন দিলে বড় প্রজেক্টরে ৩৫ মিলিমিটারের ফিল্মে কয়েকটি রিলে ১২ থেকে ১৬ হজার ফিট ছবি প্রদর্শন করা হয়। এখন একটি ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে কম্পিউটারে চিপস ডিভাইজ বা পেন ড্রাইভে মাল্টিমিডিয়ার মধ্যে বড় পর্দায় ছবি প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়াও মহানগরী ঢাকায় কয়েকটি আধুনিক সিনেপ্লেক্সে ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। এর বাইরে যে সিনেমা হলগুলো আছে তা দিনে দিনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের সিনেমা হলগুলোর কি বেহাল অবস্থা তা এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়। গত ২০ বছরে দেশের যত সিনেমা হল ছিল তার তিন ভাগের দুই ভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যা এখনও টিকে আছে তা অনেকটা লাইফ সাপোর্টের মতো। যে কোন মুহূর্তে মালিক সাপোর্ট খুলে নিলেই চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৯০ দশকের শুরুতে দেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪শ’টি। কমতে কমতে তা ঠেকেছে ৪শ’রও নিচে। বন্ধের তালিকা দিনে দিনে দীর্ঘায়িত হচ্ছে। গত দুই দশকে নতুন কোন সিনেমা হয় তৈরি হয়নি। যে সিনেপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে তার টিকেটের দাম এত বেশি যে মধ্যবিত্তরা সহজে নাগাল পায় না। বর্তমানে দেশে এমন শহর আছে যেখানে কোন সিনেমা হলই নেই। যেমন পর্যটন নগরী কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, নরসিংদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঝালকাঠি নড়াইল পঞ্চগড় মুন্সীগঞ্জসহ আরও কয়েক জেলা। এসব জেলা শহরে আগে একাধিক সিনেমা হল ছিল। একটা সময় ছিল যখন ঢাকায় নতুন ছবি মুক্তি পেলে বাইরের জেলা শহর থেকেও দর্শকরা যেত। রাজধানীর বাইরের শহরগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম, বগুড়া, যশোর, খুলনায় সিনেমা হলের দর্শক বেশি ছিল। ঢাকা মহানগরীও আশপাশের ঐতিহ্যের অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। এক সময় সিনেমা হল বলতেই বোঝানো হতো গুলিস্তান। গুলিস্তানের সঙ্গে স্বল্প পরিসরের সিনেমা হল ছিল নাজ। গুলিস্তান এখন শুধু অতীত স্মৃতি। পুরান ঢাকায় মুখোমুখি দুই সিনেমা হলের নাম মুন ও স্টার। এগুলো বন্ধ। সদরঘাটের রূপমহল আরমানিটলার শাবিস্তান অস্তিত্বই নেই। নিউমার্কেটের সামনে বলাকা ও মতিঝিলে মধুমিতা এখনও টিকে আছে। এই দুটি সিনেমা হলে ভদ্র ও রুচিশীল দর্শকরা আজও যায়। তবে একটাই কথা- ভাল ছবি নির্মিত না হলে কে যাবে হলে ছবি দেখতে! এই কথা মালিক কর্তৃপক্ষের। বগুড়া নগরীর সবচেয়ে বড় যে তিন সিনেমা হল উত্তরা মেরিনা ও মাধু তিনটি ভেঙ্গেই বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। মধুবন সিনেমা কোন রকমে ধুকে ধুকে চলছে। মধুবন সিনেমা হলের মালিক রুবেন জানিয়েছেন, তিনি সিনেপ্লেক্স বানিয়ে শেষ চেষ্টা করে দেখবেন। বগুড়া নবাববাড়ী সড়কে ঢাকার বসুন্ধরার আদলে রানার প্লাজা নামে আধুনিক শপিংমল গড়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা আছে ওপরে সিনেপ্লেক্স নির্মাণের। নিকট অতীতের দৃশ্য- ষাটের দশকের প্রথম ভাগ। সিনেমা হলে ছবি দেখার জন্য দর্শকদের ভিড় লেগেই থাকে। ভাল ছবি হলে টিকেট পাওয়া সহজ নয়। নায়ক নায়িকা পরিচালকের নাম দেখে ভিড় বাড়ে। পরিবারের সদস্যরা এক সঙ্গে সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখে। সেদিনের কত ছবির কত সংলাপ ও গান দর্শকদের মুখে মুখে ফেরে। আজ এসব শুধুই স্মৃতির এক অধ্যায়। -সমুদ্র হক, বগুড়া থেকে
×