ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী অধিবেশনে আইনটি পাস করার দাবি রংপুরবাসীর

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে আছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২২ জুলাই ২০১৭

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ঝুলে আছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর, ২১ জুলাই ॥ দীর্ঘ ২ বছর ধরে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার বেড়াজালে আটকা পড়ায় পাস হচ্ছে না মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন। ফলে রংপুর ও গাজীপুর এ দুটি মহানগরী মেট্রোপলিটন পুলিশী কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। যদিও গত ১১ জুলাই সোমবার মন্ত্রিপরিষদের সভায় রংপুর মহানগরী পুলিশ আইন ও গাজীপুর মহানগরী পুলিশ আইন ২০১৫ এর খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় এ সংক্রান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। তার পরেও আইনটি দ্রুত জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে পাস করার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করার দাবি রংপুরের সর্বস্তরের মানুষের। পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, রংপুর ও গাজীপুরকে মেট্রোপলিটন সিটি এবং মেট্রোপলিটন (মহানগর) পুলিশী কার্যক্রমের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আইন তৈরির কার্যক্রম শুরু হলেও বিভিন্ন কারণে তা বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু এবার গত সোমবারের মন্ত্রিপরিষদের সভায় রংপুর মহানগর পুলিশ আইন ২০১৫ এবং গাজীপুর মহানগর পুলিশ আইন ২০১৫ এর খসড়া অনুমোদন প্রদান করা হয়েছে। মন্ত্রী সভা কয়েকটি অবজারভেশন দিয়ে আইনটি চূড়ান্ত করতে নির্দেশনা প্রদান করেছে। যাতে আইনটি বর্তমান যুগোপযোগী করা যায় তারও অবজারভেশন প্রদান করেছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, দেশের অন্যান্য মেট্রোপলিটন আইনগুলো যেভাবে হয়েছে রংপুর ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ সেভাবে করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগ বাস্তবায়নের পর এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনুধাবন করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। যে কারণে এর লোকবল, অবকাঠামো, কাজের পরিধি ও কর্ম এলাকা নিয়ে বিস্তারিত প্রস্তাবনা তৈরির কাজ শেষ করা হয়। ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সভায় রংপুরকে বিভাগ করার বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। একই বছর ৯ মার্চ এই বিভাগের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা করে বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। রংপুর বিভাগ বাস্তবায়নের ৭ বছর হতে চলেছে। গত ২০১৩ সালে জাতীয় নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্ত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কার্যক্রম শুরু করার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। রংপুরকে বিভাগ করার পর রংপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নতি করা হয়েছে। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা রক্ষাসহ এলাকার জনগণের সার্বিক কল্যাণে মেট্রোপলিটন পুলিশ এখন পর্যন্ত গঠন করা হয়নি। ফলে ২০৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাধীন রংপুর সিটি কর্পোরেশনের বিশাল এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ১৫ লাখের ওপর। কিন্তু সে হিসেবে মাত্র একটি থানা আর ৩টি পুলিশ ফাঁড়ি দিয়ে কোন রকমে চলছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। নগরীর নতুন এলাকা সম্প্রসারিত হওয়ায় এর পরিধি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়ত। অনেক স্থানে অপরাধীরা অপরাধ করে পার পেয়ে যাচ্ছে। নগরবাসী মনে করছেন, এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠন করা প্রয়োজন। রংপুর পুলিশের একটি সূত্রে জানা যায়, রংপুরকে বিভাগ ও পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশন করার পর রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট গঠনের জন্য রংপুরের পুলিশ প্রশাসন একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। প্রস্তাবনায় রংপুর মহানগর ও এর আশপাশের এলাকা নিয়ে ৬টি থানা গঠন করে একটি পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তৈরি করে প্রেরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। এতে ২২৯ দশমিক ৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রংপুরে মেট্রোপলিটন পুলিশ ইউনিট গঠন করার কথা রয়েছে। সম্ভাব্য প্রস্তাবিত ৬টি থানা হলো, কোতোয়ালি, হাজীরহাট, পরশুরাম, তাজহাট, মাহীগঞ্জ ও সাহেবগঞ্জ। এসব এলাকায় জনসংখ্যা ধরা হয়েছে প্রায় ১২ লাখ। এর বিপরীতে পুলিশের লোকবল ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১০০ জন। এর মধ্যে একজন ডিআইজি, ৯ জন এসপি, ৫৩ জন সহকারী এসপি, ২৩ জন এএসপি, ১২ জন ওসি, সাব ইন্সপেক্টর ৭শ’ থেকে ৮শ’, এসিস্ট্যান্ট সাব ইন্সপেক্টর ১৪ থেকে ১৫শ’ এবং কনস্টেবল পদে থাকবে বাকিরা। এছাড়া যানজট নিয়ন্ত্রণেও মুখ্য ভূমিকা পালন করবে মেট্রোপলিটন পুলিশ। তবে রংপুরের সকল স্তরের মানুষের দাবি রংপুর মহানগর পুলিশ আইন ২০১৫ যেন আবারও কোন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে না পড়ে। এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শাফিয়ার রহমান বলেন, রংপুরের পুত্রবধূ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজেই গ্রহণ করেছেন। এজন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তিনি রংপুরকে সিটি কর্পোরেশন ও রংপুরকে বিভাগ করেছেন। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে রংপুর মহানগর পুলিশী কার্যক্রম শুরু করার জন্য দ্রুত আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে পাস করে কার্যকর করা হবে। রংপুর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউজ্জামান বাবু জানান, রংপুর মহানগর পুলিশ আইন তৈরি করে সংসদে পাস করতে বার বার আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে বিলম্ব হচ্ছে। এবার প্রধানমন্ত্রী আইনটির খসড়া অনুমোদন করেছেন। আশা করি দ্রুত আইনটি পাস করে কার্যক্রম শুরু করা হবে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীণ নেতা মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন জানান রংপুরকে দ্রুত মেট্রোপলিটান সিটি ঘোষণা করে মহানগর পুলিশী কার্যক্রম শুরু করা রংপুরের সকল স্তরের মানুষের প্রাণের দাবি। এটা দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানান তিনি। আর বিলম্ব নয়, আবারও যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে না পড়ে সেজন্য দ্রুত আইনটি সংসদে উপস্থাপন করার দাবি জানান জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু।
×