ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব ধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২২ জুলাই ২০১৭

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সব ধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর সেগুনবাগিচার বাসিন্দা ষাটোর্ধ হাজী মোস্তফা হোসেন। পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুটে আসেন তিনি। সবুজেঘেরা উদ্যানে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি ও হালকা ব্যায়াম করেন। তারপর শিখা চিরন্তনের অদূরে ছোট মাঠে একদল তরুণের সঙ্গে কিছুক্ষণ ফুটবল খেলেন। গত কয়েক বছর এটি তার প্রাত্যহিক রুটিনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ যাবৎ উদ্যানে এসে কাউকে ব্যায়াম কিংবা খেলাধুলা করতে না দেখে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, উদ্যানে ব্যায়াম ও খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাজি মোস্তফা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ঢাকা শহরে এমনিতেই হাঁটাচলা, ব্যায়াম ও খেলাধুলার জায়গা নেই। ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে যুব সমাজ ধ্বংসের পথে। হুট করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সর্বত্র ব্যায়াম ও খেলাধুলা নিষিদ্ধ করায় এখন নেশাখোর তরুণের সংখ্যা বেড়ে যাবে। শুধু তরুণরাই নন, তার মতো বৃদ্ধ যারা একটু ব্যায়াম ও খেলাধুলা করে সুস্থ থাকতে চান তাদের সেই অধিকারও সরকার খর্ব করল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পার্কের কয়েক নিরাপত্তারক্ষী জানান, সম্প্রতি সংস্কৃতি ও গণপূর্তমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিদর্শনে এসে এ নির্দেশ দিয়ে যান। এরপর থেকে উদ্যানে ব্যায়াম ও খেলাধুলা বন্ধ করা হয়। পার্কে নিয়মিত হাঁটতে আসেন এমন একাধিক ব্যক্তি জানান, মাত্র কয়েকদিন আগেও কাকডাকা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় পার্কটি জমজমাট থাকত। কিন্তু এক সপ্তাহ যাবৎ পার্কটি জনমানবশূন্য এক বিরানভূমিতে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধনের নামে পার্কের সর্বত্র ব্যায়াম ও খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, উদ্যানজুড়ে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এই কিছুদিন আগেও পুরান ঢাকা, ধানম-ি, এলিফ্যান্ট রোড, হাতিরপুল, পরীবাগ, মগবাজার, সেগুনবাগিচা ও নয়াপল্টন এলাকার তরুণরা উদ্যানের শিখা চিরন্তন, স্বাধীনতা জাদুঘর কিংবা গ্লাস টাওয়ারের আশপাশে ফাঁকা মাঠে ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে মেতে উঠতেন। কিন্তু বর্তমানে নিরাপত্তারক্ষীরা পার্কে ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে দেখলেই লাঠি নিয়ে তেড়ে আসছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য চত্বর সংলগ্ন উদ্যানের গেটের অদূরে বৃক্ষমায়া নামক একটি সংগঠনের সদস্যরা গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত শরীর চর্চার পর সামনের ফাঁকা একটু স্থানে ফুটবল খেলতেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের বাধার মুখে কিছুদিন যাবত ব্যায়াম ও খেলাধুলা বন্ধ। এ সংগঠনের সদস্য শরীর চর্চা প্রশিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রতিদিন ভোরবেলায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ পার্কে হেঁটে ব্যায়াম করে ও খেলাধুলা করে শরীর সুস্থ রাখেন। ঢাকা শহরে খেলার মাঠ তুলনামূলক কম থাকায় তারা এ পার্কটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু হুট করে ব্যায়াম ও খেলাধুলা নিষিদ্ধ করায় শত শত মানুষের সুস্থ থাকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত মোটেই ঠিক হয়নি। এ সংগঠনের সদস্য সরকারী এক কর্মকর্তা বলেন, সৌন্দর্য বর্ধনের নামে পার্কে ব্যায়াম ও খেলাধুলা বন্ধ রীতিমতো অন্যায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শতকরা ৭০ ভাগ এলাকা আবর্জনা ও বনজঙ্গলময় পরিবেশ। ওই সব আবর্জনা ও বনজঙ্গল পরিষ্কার না করে হুট করে কেন ব্যায়াম ও খেলাধুলা বন্ধ করা হলো তা বোধগম্য হচ্ছে না। পার্কে নিয়মিত আসেন এমন কয়েক ব্যক্তি জানান, যারা ব্যায়াম ও খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্থ থাকতে চান তাদের পার্কে ব্যায়াম করতে না দিলেও পার্কে গাঁজাখোরদের আস্তানা ঠিকই আছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গাঁজা ও নেশাখোরদের নির্জন স্থানে বসে আয়েশ করে মাদকগ্রহণের সুযোগ করে দিতেই কি ব্যায়াম ও খেলাধুলা বন্ধ করা হয়েছে? নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পার্কে সব ধরনের খেলাধুলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
×