ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুহম্মদ শফিকুর রহমান

ইসির রোডম্যাপ কে কোথায়

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২২ জুলাই ২০১৭

ইসির রোডম্যাপ কে কোথায়

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের রোডম্যাপ বা পথনির্দেশিকা বা কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ বিভাগ গত ১৬ জুলাই এই রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলে ফেললেন এটি বর্তমান সরকারকে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করানোর নীলনকশা। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় টিকবেই। তাই আগেভাগে কিছু একটা বলে রাখলেন। বেচারা ফখরুল কখন কি বলতে হবে, কি বলা উচিত, কি করা উচিত নয় তাও জানেন না। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে এমনটি হয়। ২০১৪ সালের জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পেট্রোলবোমা হাতে নিয়ে যে ভুল করেছেন তাতে করে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। রাজনীতির ব্যাপার। ভুলের খেসারত দিতেই হয়। তারাও দিচ্ছেন। একটি ট্রেন মিস করলে সেই ট্রেন আর ধরা যায় না, পরেরটার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এখন তো দেখা যাচ্ছে পরেরটাও মুখের দোষে অনিশ্চিত হবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়া ছাড়া দলটির হাতে দ্বিতীয় কোন অপশন নেই। এবার ভুল করলে রাজনীতি থেকে না-ই হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ২০১৩-তে জামায়াত-শিবিরের প্ররোচনায় যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দ- থেকে বাঁচাতে এবং ২০১৪-তে নির্বাচন বানচালের ব্যর্থ চেষ্টা করে যা হারিয়েছে : ১. সংসদের বাইরে রয়েছে, ২. রাজপথেও নেই, ৩. নেতৃত্বের প্রতি কর্মীদের আস্থা সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমেছে, ৪. বিরোধী দলে থেকেও জনগণের কাছে আস্থাশীল পজিটিভ রাজনীতি করা যে যায় তা প্রমাণ করতে ব্যর্থতা, ৫. ভোটার জনগণের কাছেও ‘আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড’ ইত্যাদি। সর্বোপরি যে দুর্বলতা অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে তা হলো চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার পুত্র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দুর্নীতির মামলায় শাস্তির আশঙ্কা। কিছু মিডিয়া ‘দুই নেত্রী’ ‘দুই নেত্রী’ বলে যত চিৎকারই করুক না কেন তা সমাজ রাষ্ট্রে এতটুকু প্রভাব ফেলেনি। বরং গত ৪ দশক ধরে নেত্রী একজনই এবং তিনি হলেন সময়ের সার্থক সাহসী দূরদর্শী রাষ্ট্রনেতা বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা। সারাবিশ্বে দশজনের বেশি নেই। এই দশজনের মধ্যেও শেখ হাসিনার অবস্থান প্রথম দিকে। পক্ষান্তরে বেগম খালেদা জিয়া নিহায়তই চেয়ারপার্সন। মিডিয়া তাকে ‘ম্যাডাম’ ‘আপোসহীন নেত্রী’ ‘দেশনেত্রী’ কত কিছু যে বানাল কোনটাই কাজ করল না। পক্ষান্তরে একটি উদাহরণই যথেষ্ট যে, শেখ হাসিনা ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ বা ‘ধরিত্রীর আদরের কন্যা’। এটি বিএনপি নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছেও বিশেষভাবে প্রভাব ফেলেছে। তারা মনে করে তাদের ম্যাডামও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন; কিন্তু ফলাফল শূন্য। বিএনপিতেও দু’চারজন দেশপ্রেমিক কর্মী রয়েছে। তারা মনে করে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার ব্যর্থতার ওপর দাঁড়িয়ে যেভাবে দ্রুতগতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাতে করে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তার হাতেই থাকুক আর খালেদা জিয়ার উচিত হবে হৃত ইমেজ উদ্ধারে রাজপথে কাজ করা। পুত্রের দিকে তাকিয়েও কোন লাভ হবে না, তারেক এখন রাজনীতির অর্থাৎ বিএনপি রাজনীতির বোঝা। ॥ দুই ॥ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দুদু-রিজভীরা নির্বাচন কমিশনের যে রোডম্যাপ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন বস্তুত তাদের শঙ্কায় কিছু আসে যায় না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসরণ করেই আগামী নির্বাচন হবে এবং সে নির্বাচনে বিএনপি হারবে জেনেও অংশগ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগ এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। তাদের সামনে ভিশন ২০-২১ অর্থাৎ ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি তথা সুবর্ণজয়ন্তী। আওয়ামী লীগ এই দুটি দিবসই ক্ষমতায় থেকে উদযাপন করতে চাইবে সেটাই স্বাভাবিক। এটাও ঠিক, আওয়ামী লীগ লক্ষ্য নির্ধারণ করেই বসে থাকেনি। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর থেকেই কাজ শুরু করেছে এবং এরই মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের পর্যায়ে তুলে এনে চাওয়াটাকে যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। ঘরে, অফিসে বসে বসে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে প্রতিপক্ষকে সমালোচনা করে কালক্ষেপণ করেনি, দিনরাত পরিশ্রম করে তবেই আজকের পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৫-১৬ ঘণ্টাই কাজ করেন। ষাটের দশকের প্রথম দিকে যখন আমেরিকা-কিউবা যুদ্ধ চলছে, তখন একটি কথা খুব জোরেশোরে প্রচারিত হয়েছে যে, জন এফ কেনেডি (আততায়ীর গুলিতে নিহত) দিনে কেবল ৫ মিনিট চেয়ারে বসে ঘুমোতেন (জঁংংধহং ধৎব পড়সরহম মুভিটি দেখলে তাই মনে হবে)। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব পালন করে চলেছেন নিরলস ক্লান্তিহীন দুশ্চিন্তাবিহীন। আজ আমরা মধ্যম আয়ের বাংলাদেশের এক গর্বিত নাগরিক। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো গর্বিত জাতির গর্বিত সন্তান। এখন কোন রসের কুলের আত্মীয় আমাদের ‘মিসকিন’ বলতে পারবে না, কোন শ্বশুরের বেটা তলাবিহীন ঝুড়ি বলতে পারবে না, বলতে পারবে না বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে কাতর আমাদের দেশ। সব মোকাবেলা করে আমরা এগিয়ে চলেছি। এখন কোন এয়ারপোর্টে সবুজ পাসপোর্ট দেখে কোন সাদা চামড়ার পরিবিবি বাঁকা চোখে তাকাবে না, বরং অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে মনে মনে বলবে- “যবু সধহ, যড়ি ফরফ ুড়ঁ ফড় ঃযধঃ?” এবং তাড়াতাড়ি ইমিগ্রেশন ফরমালিটিজ শেষ করতে পারলেই খুশি হবে। একজন মাত্র মানুষ এই গর্বের জায়গাটায় তুলে এনেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা, গর্বিত পিতার গর্বিত সন্তান। পিতা স্বাধীনতা, মানচিত্র, পতাকা এনে দিয়েছেন, আর কন্যা অভাব-অনটনে জর্জরিত, মিলিটারি আগ্রাসনে ক্ষত-বিক্ষত, জঙ্গীবাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ সব মেধা এবং দূরদর্শিতা দিয়ে মোকাবেলা করে নিম্ন আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। একজন মাত্র মানুষ, যিনি স্বপ্ন দেখতে জানেন, স্বপ্ন দেখাতে জানেন, স্বপ্ন বাস্তবায়নের যোগ্যতা ও ক্ষমতা রাখেন। একজন মাত্র মানুষ, যিনি পিতার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করতে পারেন- ‘ভিক্ষুকের জাতির কোন ইজ্জত নেই, এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ একজন মাত্র মানুষ, যিনি সেøাগান দেন- ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।’ তাই তো সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল এবং টিউলিপ সিদ্দিক একেকটি স্ফুলিঙ্গের নাম। শাকিব-মোস্তাফিজ-সৌম্যরা বিশ্বজুড়ে গর্বিত বাঙালী। এখন ২০১৭-এর মধ্যেই বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে না, তার আগেই উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হব। তবু মাঝে-মধ্যে কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়, কি করে এতটা আশাবাদী হচ্ছেন। উত্তর হলো আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাঙালী, আমরা তো আশাবাদী হবই। এই আশাবাদ বা আত্মবিশ্বাসই আমাদের ভবিষ্যত পথ দেখাচ্ছে, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনককে হত্যার পর মাঝে কখনও মিলিটারি জিয়া, কখনও তদীয় পতœী হাফ-মিলিটারি খালেদা বা কখনও মিলিটারি এরশাদ চেষ্টা করেছে চলার পথ সঙ্কীর্ণ করতে। কিছু ক্ষেত্রে সফলও হয়েছিল। তবে বেশিদিন নয়। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে সে সব অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়ার যে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন সেদিন, তাই আজ বাস্তবে রূপ লাভ করেছে। পঁচাত্তর-পরবর্তী উচ্ছন্নে যাওয়া এক বিকৃত প্রজন্মের বিপরীতে আজ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বুকে নিয়ে এমন এক প্রজন্ম জন্ম নিয়েছে যাদের আমরা এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা বলছি, যাদের বুকে সাহস আছে, আধুনিক শিক্ষা আছে, তেমনি আছে আদর্শ, যা দিয়ে তারা এরই মধ্যে সকল প্রকার পশ্চাৎপদতা, অধর্ম, কুসংস্কার, বিদেশী আগ্রাসন এবং রাজাকার আলবদর ও তাদের রগকাটা বংশধরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেছে। ওদের মুখে ‘জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, হাতে লাল-সবুজ পতাকা। কোন বাম বিভ্রান্তিও ওদের স্পর্শ করতে পারছে না। তবে বড়দের মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার সে সব লোক কেউ পার্লামেন্টে মেম্বাররূপে, কেউ পদ-পদবির জোরে লোভী-লুটেরারূপে আবির্ভূত হচ্ছে মাঝে মধ্যেই। দায়িত্ববানরা মশা মারতে পারে না। এরা আওয়ামী লীগ করে, কিংবা সহযোগী সংগঠন। এদের মধ্যে আদর্শ নেই, এমনকি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের দিকনিদের্শনাও অনুপস্থিত। কোন কোন এলাকায় এরা অতি অপছন্দের ব্যক্তি। তবু কেউ এগিয়ে আসতে সাহস পায় না। কখনও গু-ার ভয়, কখনও পুলিশের চোখ রাঙানি। কিছু এলাকায় পুলিশও এদের ভয়ে তটস্থ। এদের স্বেচ্ছাচারিতায় ওই সব এলাকা পেছনে পড়ে থাকছে। এরা আবার জনগণকে ভীষণ ভয় পায় তাই সামনে একটা-দুইটা হুন্ডা-গুডা, পেছনে পুলিশের গাড়ি ভেঁপু বাজাতে বাজাতে চলে। এরা সিভিল প্রশাসন এবং উন্নয়ন অফিসকে যা বলে তাই তারা পালন করে। সরকারের কোন উন্নয়ন কাজের ছোঁয়া এদের এলাকায় নেই। যার ফলে ওই এলাকা পশ্চাৎপদই থেকে যাচ্ছে। তবুও এরা জনপ্রতিনিধি, নেতা! এরা দলীয় নেতাকর্মী-সমর্থকদের আস্থা হারিয়ে পরগাছার ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করছেন। শেখ হাসিনা যখন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন তখন তারা যুদ্ধাপরাধীদের দলে ভেড়াচ্ছেন, কখনও দল ভারি করার জন্য, কখনও অর্থের বিনিময়ে। তারপরও কিছু মিসম্যানেজমেন্ট বাদ দিলে আগামী দিনের বাংলাদেশ আশার আলো দেখাচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক কাজ আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সেই অমর কাব্য- ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না।’ পারেনি, পারছে না তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বের বলিষ্ঠতায়। ॥ তিন ॥ এবার নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা করব এবং কে কোথায় আছে তা দেখার চেষ্টা করব, কি আছে রোডম্যাপে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে সব আইন ও বিধি বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো হলো : ক. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (২০১৩ পর্যন্ত সংশোধিত); খ. নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা, ২০০৮ (সংশোধনীসহ); গ. ঞযব ফবষরসরঃধঃরড়হ ড়ভ পড়হংঃরঃঁবহপরবং ড়ৎফরহধহপব ১৯৭৬ (ঙৎফরহধহপব); ঘ. সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও আচরণ বিধিমালা, ২০০৮; ঙ. রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা, ২০০৮ (২০১২ পর্যন্ত সংশোধিত); চ. স্বতন্ত্র প্রার্থী (প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন যাচাই) বিধিমালা, ২০১১ (সংশোধিত); ছ. নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন, ১৯৯১; জ. জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন, ২০১০; ঝ. ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯; ঞ. ভোটার তালিকা বিধিমালা ২০১২; ট. প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ভোটারপ্রতি নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারণের প্রজ্ঞাপন; ঠ. নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা, ২০১০ (জুন ২০১৭ পর্যন্ত সংশোধিত); ড. এঁরফবষরহবং ভড়ৎ ভড়ৎবরমহ ঊষবপঃরড়হ ড়নংবৎাবৎ, ২০১৩; ঢ. ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য বিশেষ নির্দেশাবলী। কমিশন মনে করে উপর্যুক্ত আইন ও বিধি বিধানের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অতীতে নির্বাচনে অবৈধ অর্থ ব্যবহার রোধ ও পেশিশক্তির ব্যবহার অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হলে এক্ষেত্রে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখার পথ সুগম হবে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপ করবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, ভোট কেন্দ্র স্থাপন ইত্যাদি বিশেষভাবে জরুরী। কেবল কমিশনে নিবন্ধিত দলের সঙ্গেই সংলাপ হবে, অনিবন্ধিতদের সঙ্গে নয়। সংলাপ শুরু হবে আগামী ৩১ জুলাই থেকে। প্রথমেই ডাকা হবে সুশীল সমাজকে, এরপর গণমাধ্যম, এরপর রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দলের মধ্যে আহ্বান করা হবে- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, সিপিবি, জাতীয় পার্টি, জেপি, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, বিকল্প ধারা, তরিকত ফেডারেশন, গণফোরাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট, খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ফ্রন্ট- মোট ৪০টি। জামায়াত এবং ফ্রিডম পার্টির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগ তো যৌক্তিক কারণেই নির্বাচন কমিশনকে সর্বপ্রকার সহায়তা দিয়ে যাবে। বিএনপির সামনে এখন অগ্নিপরীক্ষা। কি করবে? সহায়তা করা ছাড়া অন্য কোন অপশন নেই। নইলে আবারও ব্যাক-বেঞ্চে চলে যাবে। ॥ চার ॥ তবে হ্যাঁ, দিন যতই যাচ্ছে নতুন নতুন সঙ্কট সামনে আসছে। লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, কর্মের প্রয়োজনে ভোটারদের এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে স্থানান্তর, বিশেষ করে শহরমুখিতা। ডিলিমিটেশন বা কনস্টিটিউয়েন্সির (আস) সীমানা নির্ধারণ একটি জটিল ব্যাপার। জনসংখ্যা বা ভোটার সংখ্যা অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ মোটেই সহজ ব্যাপার নয়। তবে নির্বাচন কমিশনকে সংলাপে সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কে তাদের পবৎঃরভরপধঃব দেবে, ছদ্মবেশী জামায়াত-শিবির জঙ্গীরা ইলেকশন অবজারভার বা মানবাধিকার কর্মীর ছদ্মাবরণে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের মূলধারার বিপরীত শক্তির পক্ষের হয়ে কাজ করার চেষ্টা করবে। এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ঢাকা ॥ ২০ জুলাই ২০১৭ লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×