স্টাফ রিপোর্টার ॥ দাও শৈৗর্য, দাও ধৈর্য/হে উদারনাথ, দাও প্রাণ/দাও অমৃত মৃত জনে/দাও ভীত-চিত জনে/শক্তি অপরিমাণ ...। সম্মেলক সুরসুধায় এভাবেই শুরু হলো আয়োজন। নজরুলের সৃষ্টি থেকে নেয়া অনুপ্রেরণা শিল্পীর কণ্ঠ থেকে ছড়িয়ে গেল শ্রোতার প্রাণে। শুক্রবার শ্রাবণের সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ভেসে বেড়াল জাতীয় কবির কালজয়ী গানের সুর। উচ্চারিত হলো তার কবিতার পঙ্ক্তিমালা। এমন আয়োজনের উপলক্ষ ছিল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৮তম জন্মজয়ন্তী। অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় সদ্য প্রয়াত সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশকে। ‘সত্যের জয় হোক, সাম্যের জয় হোক’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ নজরুল সঙ্গীত সংস্থা আয়োজিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ছুটির দিনের সন্ধ্যায়।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে নজরুলকে নিবেদিত আলোচনায় প্রধান বক্তা ছিলেন নজরুল বিশেষজ্ঞ ড. রফিকুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সহসভাপতি জোসেফ কমল রড্রিক্স।
প্রধান বক্তার আলোচনায় রফিকুল ইসলাম স্মরণ করেন সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ ও সঙ্গীত গবেষক অধ্যাপক ড. করুণাময় গোস্বামীকে। তিনি বলেন, নজরুল সঙ্গীতকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষায় একজন সেনাপতির ভূমিকা রেখেছেন সুধীন দাশ। তিনি নজরুলের গান আদি সুরে ও বাণীতে স্বরলিপিকরণ করেছেন। এর ফলে নজরুলের গানে সমৃদ্ধ অবস্থানটি শিল্পীরা আয়ত্ত করতে পেরেছেন। অন্যদিকে ইংরেজীতে পিএইচডি করেও নজরুলকে নিয়ে গবেষণায় অনন্য ভূমিকা রেখেছেন ড. করুণাময় গোস্বামী। এ বছর নজরুলের সৈনিক জীবনের শতবর্ষ পূর্ণ হলো উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। এ কারণে এ বছরটি নজরুলের অনুরাগীদের কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর সেনাবাহিনীতে যোগদানের ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সমসাময়িক ইতিহাস চেতনাকে ধারণ করতে পেরেছিলেন নজরুল। নজরুলের এই আন্তর্জাতিকতা ধারণের বিষয়টি ছিল বিস্ময়কর। সেই সুবাদে তার কবিতা ও গল্পে উঠে এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের দুর্দশার চিত্র। ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সমৃদ্ধ হয়েছে তার চিন্তা-চেতনা। ওই সময়ের উপনিবেশবাদ তাকে যেমন ব্যথিত করেছে তেমনি অনুপ্রাণিত করেছে রুশ বিপ্লব। পেয়েছেন আন্তর্জাতিক ইতিহাস সম্পর্কে সম্যক ধারণা। এ কারণেই ওই সময়টিতে আপন সৃষ্টির মাধ্যমে একই সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকিত হয়েছিলেন নজরুল।
দুদিনের এই অনুষ্ঠানটি গীতি আলেখ্য, নৃত্যালেখ্য, একক গান ও আবৃত্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে। উদ্বোধনী আলোচনা শেষে সম্মেলককণ্ঠে ‘দাও শৈৗর্য, দাও ধৈর্য’ গানটি দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা পর্ব। এরপর একককণ্ঠে রেজাউল করিম গেয়ে শোনান ‘পথিক ওগো চলতে’। সালাহউদ্দিন আহমেদ গেয়ে শোনান ‘চাঁদ হেরিছে’। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর কণ্ঠে গীত হয় ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন’। মাহমুদুল হাসান গেয়ে শোনান ‘জাতের বজ্জাতি সব’। নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী পরিবেশন করেন ‘ভরিয়া পরান’ শিরোনামের গান। গানের ফাঁকে নৃত্য পরিবেশন করেন সামিনা হোসেন প্রেমা ও তার দল। নজরুলের বিভিন্ন কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন বাচিকশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহফুজা হক চামেলী, মোহিত খান ও বনা রানী হালদার। এছাড়া একককণ্ঠে নজরুলের সুরসুধা ছড়িয়েছেন কল্পনা আনাম, খায়রুল আনাম শাকিল, শামীমা পারভীন, শ্রাবন্তী ধর।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: