ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষাবন্দনা চারুকলায়

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে...

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২২ জুলাই ২০১৭

আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে...

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ এবার ভাল ভুগিয়েছে বর্ষা। কোথাও পাহাড় ধস। কোথাও বন্যা। এমনকি শহর ঢাকার রাস্তায় নৌকা উঠেছে। দেখে অনেকে ত্যক্ত বিরক্ত। ‘প্রিয় ঋতু’ ‘প্রিয় ঋতু’ বলা হতো। সে বলাটিও আর কানে আসছিল না। অথচ শুক্রবার সকালে কেমন যেন বদলে গেল সব। আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে/দুয়ার কাঁপে ক্ষণে ক্ষণে/ঘরের বাঁধন যায় বুঝি আজ টুটে...। শ্রাবণের এই আমন্ত্রণ কেউ উপেক্ষা করতে পারলেন না। পূর্বের অবস্থান থেকে রাজধানীবাসীকে অনেকটা টেনে নামাল সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিন চারুকলার বকুলতলায় চমৎকার বর্ষা উৎসবের আয়োজন করা হয়। নাচ গান কথা কবিতায় চলে বন্দনা। বর্ষা উৎসব। শুকনো হলে মানায়? হয়ত তাই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। নিচে ভেজা নরম মাটি। কাদাজল। অথচ মনের আনন্দেই পায়ে মাড়াচ্ছিলেন আগতরা। ঝিরিঝিরি হাওয়া যে বকুল ঝরে পড়ছিল মুহূর্তেই কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। এভাবে ঘড়ির কাঁটা যখন সাড়ে সাতটার ঘরে, শুভ সকাল বলে সবাইকে স্বাগত জানান আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। ততক্ষণে প্রস্তুত মঞ্চ। বৃক্ষের সবুজ আর কিশোর মনের কল্পনায় আঁকা রঙিন বৃষ্টি ব্যাকড্রপে। মঞ্চে এসে দাঁড়ান বিজন মিস্ত্রী। বাদরিয়া রাগ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষা বন্দনা। শিল্পীর গলা যত খুলতে থাকে ততই যেন আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠে প্রকৃতি। দশ মিনিটের পরিবেশনা কী যে ভাল লাগছিল! বিজন শেষ করতেই মঞ্চে আসে নৃত্য সংগঠন স্পন্দনের শিল্পীরা। মাইকে তখনÑমোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো/দোলে মন দোলে অকারণ হরষে।/ হৃদয়গগনে সজল ঘন নবীন মেঘে/ রসের ধারা বরষে...। গানটির সঙ্গে সুন্দর নেচে যায় মেয়েরা। কবিতায় বর্ষার কথা বলতে আসেন মাসকোর এ সাত্তার কল্লোল। এমনিতেই এই বাচিক শিল্পীর পরিবেশনা মুগ্ধ করে রাখে। এদিন আরও অধিকার করে নিল। কবি শামসুর রাহমান থেকে তিনি শুনিয়ে যানÑ হঠাৎ আজ বিকেলে চারদিক অন্ধকারে ডুবিয়ে/বৃষ্টি এলো। শত শত আরবি ঘোড়ার পদশব্দে মনে পড়লো তোমাকে...। কবিতার পর গানে গানে বর্ষা বন্দনা। দলীয় পরিবেশনা নিয়ে মঞ্চে আসে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। সমবেত কণ্ঠে তারা গানÑ এসো শ্যামল সুন্দর/আনো তব তাপহরা তৃষাহরা সঙ্গসুধা...। নৃত্যজনের শিল্পীরাও কবিগুরু থেকে বর্ষাকে উপস্থাপন করেন। ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য উপভোগ করেন দর্শক। বহ্নিশিখার শিল্পীরা বেছে নেন নজরুলের গান। ‘মেঘের ডম্বুরো বাজে’ গানটি তাদের জন্য কঠিন ছিল বটে। তবে সাবলীল গেয়েছেন। এর পর আবার নৃত্য। ‘পাতা ঝরা বৃষ্টি বলো কেন এনেছো’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমঞ্চ। জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকার জন্য রূপকথা’ কবিতা থেকে চমৎকার আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। আবু বকর সিদ্দিকের কণ্ঠে ছিল লোকসঙ্গীত। উকিল মুন্সীর ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে’ গেয়ে নাগরিক শ্রোতাদের আবেগে ভাসান তিনি। বর্ষা বন্দনা করে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, শ্যামা রহমান, মাহজাবীন রহমান শাওলী, মোঃ শমসের, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, রতœা সরকার, শ্রাবণী গুহ প্রমুখ। বর্ষা কথনে অংশ নিয়ে এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আমরা আশা করব, মানুষ প্রকৃতিকে ভালবেসে প্রকৃতি সুরক্ষা, ঋতুবৈচিত্র্য রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজনীয়, করণীয় সবকিছু করবে। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধে তারা আরও সচেতন হবেন। ঋতুবৈচিত্র্যর দেশ বাংলাদেশের নাগরিক মানুষও বর্ষা উৎসবে যোগ দিয়ে ‘বর্ষার মতো সজীব আর উদার’ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, বর্ষা প্রতি বছর পলিমাটি নিয়ে এসে উর্বর করে মাটি। ধুয়ে দেয় সব ময়লা। বর্ষার মতো সজীব হয়ে ওঠে দেশবাসী মনের সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলবেন, সঙ্কট নিরসনে এগিয়ে এসে আরও উদার হবেন।
×