ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মোটা চালের দাম কমতে শুরু করছে

প্রকাশিত: ০২:৩০, ২১ জুলাই ২০১৭

মোটা চালের দাম কমতে শুরু করছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে চালের মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টেনে ধরা গেছে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে মোটা চালের দাম। চাল সঙ্কট নিয়ে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল তা কেটে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, মোটা চালের দাম আর বাড়বে না। বর্তমান প্রতিকেজি মোটা চাল ৪৩-৪৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত দুসপ্তাহ আগেও ৪৩ টাকার এই চাল কিনতে ভোক্তাকে ৪৪-৪৫ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চিকন চালের দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে বেড়ে গেছে সবজির দাম। আলুর দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২৫ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি ও আমদানিকৃত রসুনের দাম কমেছে। আটা, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। শুক্রবার রাজধানীর কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও কাওরান বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, ভরা বর্ষায় রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়ে গেছে শাক-সবজি ও অন্যান্য তরকারির দাম, বেড়েছে মিঠা পানির মাছের দামও। তবে সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ার কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। কিছুটা কমেছে ইলিশ মাছের দাম। ছুটির দিনে সকালেই ক্রেতারা ভোগ্যপণ্য সামগ্রী কিনতে ছুটে যান বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু সবজিসহ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদেরকে বাজারের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বিভিন্ন রকম সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর গত দুই সপ্তাহে টমেটোর দাম কেজিতে বেড়েছে অন্তত ৫০ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন, অতিবৃষ্টি ও বানের পানির চাপে সবজি ক্ষেত কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছরই বর্ষার মওসুমে সবজির দাম কিছুটা বেড়ে থাকে। ফকিরাপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, করলা ৫০-৫৫ টাকা, পটল ৪০ টাকা, বেগুন ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেপে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, কচুমুখি ৪০ টাকা, ঢেঁড়শ ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায় প্রতিকেজি। ওই বাজারে বিক্রেতা রাসেল বলেন, টমেটোর দামটা একটু বেশি বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য বছরও বর্ষায় সবজির দাম একটু বেড়ে থাকে। গত দুই সপ্তাহে অধিকাংশ সবজির দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানান এই বিক্রেতা। এছাড়া খুচরা বাজারে মোটা চালের কিছুটা কমলেও মিনিকেট ও নাজিরশাইলের মতো চিকন চালের দাম কমছে না। গত দুই সপ্তাহে কিছু কিছু খুচরা দোকানে চালের দাম কমলেও অনেকে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি করছেন চাল। কাপ্তান বাজারের একজন খুচরা বিক্রেতা জানান, মিনিকেট ৫৪-৫৬ টাকায়, বিআর আটাশ ৪৮ টাকায় এবং মোটা চাল ৪৩-৪৬ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। তবে ঢাকায় চালের প্রধান পাইকারি বাজার বাবুবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানিকৃত চাল আসতে শুরু করায় সিন্ডিকেট ভেঙে গেছে, মিলাররা চালের দাম কমাতে শুরু করেছেন। বাবুবাজারের মিনিকেট ৫১ থেকে ৫২ টাকা, বিআর আটাশ ৪৫ থেকে ৪৬ টাকা, বিআর ঊনত্রিশ ৪৫ টাকা এবং মোটা চাল প্রতিকেজি ৩৯ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। চাল আমদানি আরও বাড়ছে ॥ সরকারী পর্যায়ে আড়াই লাখ মেট্রিকটন আমদানির পর এবার আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকও অস্থিতিশীলতা দূর করতে এবার বাকিতে চাল আমদানির সুযোগ করে দিয়েছে। এখন থেকে ৩ মাস বিলম্বে পরিশোধের শর্তে চাল আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরবরাহকারী তথা রফতানিকারক রাজি হলেই কেবল এ সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। চাল, ডাল, মরিচ, লবণ প্রভৃতি পণ্য আমদানির বিপরীতে রফতানিকারকদের নগদে অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন কারণে সম্প্রতি চালের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হওয়ায় আমদানি উৎসাহিত করতে এই শর্তে ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাস বিলম্বে পরিশোধের শর্তে চাল আমদানির সুযোগ পাবেন আমদানিকারকরা। এর আগে ব্যবসায়ীদের শূণ্য মার্জিনে চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থাৎ ন্যূনতম সিকিউরিটি মানি জমা না দিয়েও চাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দিয়ে গত ১৯ জুন সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে, নিত্যপণ্যের বাজারে দেশীয় জাতের মাছের দাম বাড়লেও ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। মাঝারি সাইজের প্রতিজোরা ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে ১৬শ’ টাকায়। এছাড়া রুই কাতলসহ আরও কয়েকটি মিঠা পানির মাছের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। রুই মাছের কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়, কাতল মাছের কেজি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চাষের কই আগের মতোই ১৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ১২০ থেকে দেড়শ টাকায়, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় কেজি বিক্রি হচ্ছে। জাত ও মানভেদে ৭০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি চিংড়ি মাছ।
×