ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাজনীন বেগম

গৃহকর্মী আদুরির পক্ষে লড়েছেন এ্যাডভোকেট সালমা আলী

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ২১ জুলাই ২০১৭

গৃহকর্মী আদুরির পক্ষে লড়েছেন এ্যাডভোকেট সালমা আলী

এই মুহূর্তে নারী নির্যাতন প্রতিদিনের একটি সহনীয় ঘটনা। সংসারে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাঙ্গনে, কৃষি এবং শিল্প কারখানায়, অবকাঠামো নির্মাণে, গণপরিবহনে, রাস্তাঘাট কিংবা ফুটপাথে চলার সময়ে নারীরা নিগৃহীত হচ্ছে অনেকটা অকারণে, অপ্রয়োজনে, যা প্রতিদিনের ঘটনাপ্রবাহের নিয়মিত স্রোতের এক অনিবার্য পরিণতি। এটা এখন মানুষকে আর উদ্বিগ্ন করে না, ভাবায় না এমনকি কোন ধরনের প্রতিবাদ প্রতিরোধ পর্যন্ত তৈরি হয় না। সহিংস আর নৃশংস দুর্ঘটনাগুলো সুস্থ স্বাভাবিকের মতো নিত্য পথপরিক্রমার সহযাত্রী। কিন্তু হঠাৎ করে একটি অস্বাভাবিক ঘটনা সবাইকে চমকে দেয়, সেই দিকে প্রত্যেকের নজরও কাড়ে। গৃহকর্মী নির্যাতনের রায়ে আসামির যাবজ্জীবন কারাদ-। কিছুদিন আগেও জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক এ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেছিলেন গৃহকর্মী নির্যাতনের মামলার কোন বিচার এখনও পর্যন্ত সম্পন্ন হতে পারেনি। অনেক বিচার প্রক্রিয়া আইনী ব্যবস্থার জটিলতায় ঘুরপাক খেলেও আসামিরা সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় যেতে আরও যে কত সময় নেবে তা কেউ জানে না। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য গত ১৮ জুলাই গৃহকর্মী আদুরিকে দুঃসহ নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করা রায়ে গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদীকে সারা জীবন কারাবাসের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ্যাডভোকেট সালমা আলীই নিপীড়িতা আদুরির পক্ষে আইনী লড়াইয়ে নিজের বলিষ্ঠ ভূমিকাকে জোরদার করেছেন। ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মিরপুরের পরিত্যক্ত ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে আদুরিকে অত্যন্ত নৃশংস অবস্থায় ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ উদ্ধার করে। সারা শরীরে গরম খুন্তি আর ইলেকট্রিক ইস্ত্রির আঘাত আর যন্ত্রণার লোমহর্ষক চিহ্ন। যা দেখে সুস্থ মানুষ ভয়ে আর আর্তনাদে শিহরিত হয়। সেই সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে অপর একজন রক্তে, মাংসে গড়া সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ। আদুরি ছিল যার প্রতিমুহূর্তের কাজের সহকারী। যাদের ছাড়া সম্পন্ন গৃহকর্ত্রীদের একদ-ও চলে না। আর কাজের সামান্য এদিক ওদিক হলেই তাদের ওপরই চলে সহিংস অত্যাচার। এমনও হতে দেখা যায় আদুরিদের মতো সমবয়সী সন্তান অনেক পরিবারে অবস্থান করছে। তাদের সামনে যে পরিমাণ অবিচারের মাত্রায় গৃহকর্মীদের নাজেহাল করা হয় তাকে কি নিজের সন্তানটা শারীরিকভাবে হয়তবা কিন্তু মানসিকভাবে কি আদৌ সুস্থ থাকে? পারিবারিক পরিবেশ যদি এমন কদর্য আর সভ্যতা বিবর্জিত হয় তাহলে নিজের শিশু সন্তানটির সুস্থ মানসিক বিকাশ কি বিপন্ন অবস্থায় দাঁড়াবে না? এসব মানবিক দায়বদ্ধতাকে সচেতন করতে না পারলে তা সংক্রামক ব্যাধির মতো সংসার থেকে সমাজের নির্মল আবহকে বিষময় করে তুলবে। আদুরির ওপর হয়ে যাওয়া অবিচারের শাস্তি পাওয়াটা অপরাধীর জন্য প্রাপ্য ছিল এবং আইনও তার ওপর অর্পিত দায়িত্বকে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে সম্পন্ন করে বিচারিক ব্যবস্থার মান রেখেছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ। এই সুষ্ঠু আইনী প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করতে পারলে সমাজের এসব নির্যাতন অত্যাচারের মাত্রা কমে আসবে এ আশা ব্যক্ত করা যায়। পটুয়াখালীর এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিতৃহীন বালিকা আদুরি। নয় ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট। সংসারের অভাব অনটনের টানাপোড়েন মা শাফিয়া মাত্র ১১ বছর বয়সে আদুরিকে পাঠান ঢাকা শহরে গৃহকর্মীর কাজ করার জন্য। মেয়ে শুধু খেয়ে-পরেই বাঁচবে না মাসিক কিছু টাকাও সঞ্চিত হবে ভবিষ্যত জীবনের জন্য। সে স্বপ্ন ধুলায় মিশে যেতে সময় লাগে না কিছু মানুষের মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। গৃহকর্ত্রী নদীকে শুধু সারাজীবন কারাদ-ই নয় এক লাখ টাকার অর্থদ-ও দেয়া হয়। যা পাবে নির্যাতিতা আদুরি। এতকিছুর পরও আদুরির ওপর নির্মমতার দাগগুলো মুছে যাওয়া কি সহজ হবে?
×