ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঁচ বছরে এডিবি দেবে সাড়ে ৮শ’ কোটি ডলার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২১ জুলাই ২০১৭

পাঁচ বছরে এডিবি দেবে সাড়ে ৮শ’ কোটি ডলার

এম শাহজাহান ॥ ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ায় আগামী পাঁচ বছরে এডিবির কাছ থেকে বাংলাদেশ সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পাবে। এ অর্থ ব্যয় হবে দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, জলবায়ু পরিবর্তনজিনত ক্ষতিসাধন এবং সামাজিক সুরক্ষার মতো বড় প্রকল্পগুলোতে। সম্প্রতি সংস্থাটির পরিচালনা বোর্ড এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) দেশে বিনিয়োগ কাঠামোর টেকসই উন্নয়নে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপির অর্থায়নে ৫২৬ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) মাধ্যমে এ অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। সূত্রমতে, দাতাদের ঋণ ব্যবহার সক্ষমতায় এশীয় দেশগুলোর মধ্যে এখন এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এ কারণে দেশটিকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখছে এডিবি। সংস্থাটির কাছ থেকে সবচেয়ে কম সুদে আগামী পাঁচ বছরে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার বা ৭০ হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা নিতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনগণ যাতে এ ঋণে উপকৃত হতে পারে সে বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এজন্য সরাসরি জনকল্যাণে জড়িত এসব প্রকল্পে এডিবির অর্থ ব্যয় করা হবে। ইতোমধ্যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য (২০১৬-২০২০ সাল) তারা যে ‘কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি’ গ্রহণ করেছে সেখানে বাংলাদেশকে প্রায় সাড়ে আট বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঋণ এ যাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ ফিলিপিন্সের ম্যানিলা থেকে টেলিফোনে জনকণ্ঠকে বলেন, খুবই ভাল সংবাদ যে, এডিবির বোর্ড সভায় রাষ্ট্রীয় ঋণদান সংস্থা ইডকলকে ৫২৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার বিষয়টি অনুমোদন হয়েছে। এ অর্থ পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে ইডকল ঋণ হিসেবে বিতরণ করবে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এডিবির ঋণ বিতরণ আটকেছিল। আলাপ-আলোচনা এবং ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বাড়ায় সংস্থাটির আস্থার সঙ্কট দূর হয়েছে। আর এ কারণে এডিবি থেকে বড় অঙ্কের ঋণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, রূপকল্প-২১ এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যেতে হলে স্বল্পসুদের এ ঋণ আমাদের প্রয়োজন। অর্থ সঙ্কটের কারণে ইডকল ঋণ বিতরণ করতে পারছিল না। অনেক আবেদন জমা পড়ে আছে। এ বাস্তবতায় এ অর্থ অবকাঠামো উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। জানা গেছে, এডিবিতে ইমেজ এতটাই ভাল যে, সংস্থাটি এখন বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ঋণ সহায়তা দিতে চায়। এর আগে সংস্থাটি তাদের কান্ট্রি পার্টনারশিপ স্ট্র্যাটেজি ২০১১-১৫-তে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছিল। এবার তারচেয়ে প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বেশি দিচ্ছে। সংস্থাটির এডিএফ ঋণ সহায়তার দিক থেকে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এডিবি বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে দেখেছে, বাংলাদেশ ঋণ নিয়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে। এমনভাবে এ ঋণ ব্যবহার হচ্ছে, যার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। এজন্য এখন বাংলাদেশকে ইতিবাচক চোখে দেখছে এডিবি। কান্ট্রি পার্টনারশিপ নিয়ে সংস্থাটির এক প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, এডিবি বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ ঋণ সহায়তা দিচ্ছে। কারণ দেশটির অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য অবকাঠামো নির্মাণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। এ ঋণ সহায়তা দেশটির সরকারী ও বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে। এডিবি আরও বলেছে, তারা বাংলাদেশের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যে অর্থনৈতিক করিডর গড়ে উঠেছে সেটি তারা কক্সবাজার পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে চায়। ইডকল যেসব খাতে ঋণ দেবে এডিবি পরিচালনা বোর্ড দেশে বিনিয়োগ অবকাঠামোর টেকসই উন্নয়নে বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) অর্থায়নে ৫২৬ মিলিয়ন ডলার অনুমোদন করেছে। এ সহায়তার মধ্যে ৫শ’ মিলিয়ন ডলার মাঝারি ও বড় আকারের পিপিপির অবকাঠামো প্রকল্পের অর্থায়নে এবং ২৬ মিলিয়ন ডলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও দেশের গ্রামীণ এলাকায় জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধি অর্থায়নের জন্য বিতরণ করা হবে। উভয় ধরনের ঋণ তৃতীয় পাবলিক-প্রাইভেট ইনফ্রাস্ট্রাচার ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটির (পিপিআইডিএফ-৩) আওতায় দেয়া হবে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (আইডিসিওএল) দক্ষতা আরও বৃদ্ধির জন্য ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ ফান্ড থেকে ৫০ হাজার ডলার কারিগরি সহায়তা অনুমোদন করা হয়েছে। দেশে এখন পিপিপির অধীনে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ইডকলের পরিচালক আব্দুল হক জনকণ্ঠকে জানান, এডিবির ঋণ সহায়তার এ অর্থ পিপিপির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে ঋণ হিসেবে দেয়া হবে। ভৌত অবকাঠামো বিশেষ করে বিদ্যুত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, ট্রান্সপোর্ট, বাইপাস বা সার্কুলার রোড নির্মাণ, আইসিটি ও তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, বন্দর উন্নয়ন এবং সামাজিক অবকাঠামোর আওতায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো কর্মসূচী বাস্তবায়নে এ অর্থ ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হলে অবকাঠামো উন্নয়নে বড় বিনিয়োগ প্রয়োজন। ইডকল শুরু থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করে আসছে। এডিবির অর্থায়নে ইডকল আরও ভাল প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারবে বলে আশা করছি। এ ঋণ সহায়তার বিষয়ে এডিবির প্রধান আর্থিক সেক্টর বিশেষজ্ঞ পিটার মারো সম্প্রতি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন বাংলাদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এ প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য দেশটির অবকাঠামোতে বেসরকারী বিনিয়োগ আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তিনি বলেন, পিআইডিএফ-৩-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এডিবির অবদান অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।
×