ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পকলা পদক ২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির আহ্বান

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রুখতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রাখুন

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ জুলাই ২০১৭

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রুখতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রাখুন

বিডিনিউজ ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ রুখতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের গুরুত্ব তুলে ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার শিল্পকলা পদক-২০১৬ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ঘটনা বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। বস্তুত কোন ধর্মই সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। আমাদের শিশু, কিশোর ও যুবাদের ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিষবাষ্প থেকে দূরে রাখতে তাদের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের জানাতে হবে, আমাদের এই মাতৃভূমিতে জঙ্গীবাদ বা সাম্প্রদায়িকতার কোন স্থান নেই। হাজার বছর ধরে নানা জাতি-ধর্মের মানুষ এই ভূখ-ে শান্তিপূর্ণভাবে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের সুমহান ঐতিহ্য। সম্মিলিতভাবে এ ঐতিহ্যকে অব্যাহত রাখতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সৃজনশীল জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালের পুরস্কারের জন্য মনোনীত সাতজনকে পদক দেন রাষ্ট্রপতি। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- সঙ্গীতে মিতা হক, চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার, যন্ত্রসঙ্গীতে প-িত পবিত্র মোহন দে, নৃত্যকলায় মোঃ গোলাম মোস্তফা খান, আলোকচিত্রে গোলাম মুস্তাফা, লোকসংস্কৃতিতে সিরাজউদ্দিন খান পাঠান এবং নাট্যকলায় সৈয়দ জামিল আহমেদ। পদকের সঙ্গে সবাইকে এক লাখ টাকার চেক ও সনদ দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে দেশের লোকসংস্কৃতির ঐত্যিহের কথা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, আমাদের লোকসাহিত্যের ঐতিহ্য বহু প্রাচীন ও সমৃদ্ধ। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও লোকগাঁথা। এসব সম্পদ সংগ্রহ করে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা গেলে এগুলোই হতে পারে বিশ্ব সংস্কৃতি ও সভ্যতার মূল্যবান সম্পদ। তাই আমি শিল্পী সমাজের প্রতি অনুরোধ জানাব আপনারা এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রয়াস চালাবেন। আমরা সবাই আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে চাই। আর সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন একমাত্র শিল্পীরাই দেখাতে পারে। শিল্পীরাই পারে অসুন্দরের মধ্য থেকেও সুন্দরকে বের করে আনতে। পদকপ্রাপ্তদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা স্মরণ করিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি। আজ যারা পুরস্কৃত হলেন, আপনারা সমাজের ‘সেলিব্রিটি’, ‘তারকা’, বা ‘আইডল’। আপনারা জনপ্রিয়। সাধারণ মানুষ বিশেষত তরুণ সমাজ আপনাদের অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাই মানুষের প্রতি আপনাদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি। আমি আশা করি আপনারা আপনাদের শিল্পকর্মে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও জাতিসত্তার পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, মাদকাসক্তিসহ সামাজিক সমস্যাবলী তুলে ধরবেন। এতে সাধারণ মানুষ অনেক বেশি সচেতন হবে এবং সৃজনশীল সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। নিজ নিজ ক্ষেত্রে নৈপুণ্য, উৎকর্ষ ও বিশেষ অবদানের জন্য আপনারা আজ শিল্পকলা পদকে ভূষিত হলেন। এটি অত্যন্ত গৌরবের, সম্মানের। আমি আশা করি, এই পুরস্কার আপনাদের নিজ নিজ অঙ্গনে আরও অবদান রাখতে উৎসাহিত করবে। আপনাদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণ শিল্পীরাও উৎসাহিত হবেন। আমি মনে করি এ পুরস্কার আপনাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি সচিব মোঃ ইব্রাহিম হোসেন খান। আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, শিল্পী মিতা হক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ। পরে শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দেখেন রাষ্ট্রপতি।
×