ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উপকূলে ঝড়োহাওয়া ॥ মেঘনায় ২ জেলের মৃত্যু ॥ খুলনায় ১১৩ মিলিমিটার রেকর্ড বৃষ্টি

দুর্বল নিম্নচাপ মৌসুমি বায়ুর অক্ষে মিশে দেশজুড়ে ভারি বর্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ জুলাই ২০১৭

দুর্বল নিম্নচাপ মৌসুমি বায়ুর অক্ষে মিশে দেশজুড়ে ভারি বর্ষণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হলেও সাগরে সক্রিয় থাকা মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিশে সারাদেশে শুরু হয়েছে ভারি বর্ষণ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই সারাদেশে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এদিন সকাল ছয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত খুলনা মহানগরীতে ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এছাড়া রাজধানী ঢাকাতেও বুধবার রাত খেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজধানীতে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মৌসুমি বায়ু সারাদেশের উপর সক্রিয় রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে আজ বরিশাল, ঢাকা, রংপুর ও সিলেট বিভাগের ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এদিকে নিম্নচাপের কারণে ভোলার লালমোহনের মেঘনা নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে দুজন জেলের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার এক পূর্বভাসে উল্লেখ করা হয়েছে ভারতের উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে মধ্যপ্রদেশ এলাকায় লঘুচাপে পরিণত হয়ে মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বাংলাদেশের উপর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসগরে তা প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। এদিকে সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি দুর্বল হয়ে পড়লেও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অফিস। এ কারণে চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ জানান, উড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থলনিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ আকারে উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপের পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঝড়ো হাওয়া আশঙ্কায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনা মহানগরীতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে খুলনাতে সকাল ৬টা থেকে খুলনায় ছয় ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হঠাৎ ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরের অধিকাংশ ছোট-বড় সড়ক। নাগরিক ভোগান্তি চরমে উঠেছে। সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সবচেয়ে বেশি। সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হয়েছে গন্তব্যেস্থলে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। বৃষ্টিতে এক ধরনের গৃহবন্দী হয়ে পড়ে নগরবাসী। খুব প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ বের হয়নি। ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে খুলনা নগরীর রয়্যাল মোড়, বাইতি পাড়া, তালতলা, শান্তিধাম মোড়, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেসের মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লা পোতা, শিববাড়ী মোড়, বড়বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, খালিশপুর, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজার, পশ্চিম রূপসা, খালিশপুর, দৌলতপুর, খানাজাহান আলী, আড়ংঘাটা এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যায়। নিম্নাঞ্চলের বস্তি ঘরগুলোতে হাঁটু পানি জমে যায়। সড়কের পাশের অধিকাংশ দোকান বন্ধ হয়ে যায় অনেক দোকারদারকে পানির ওপর দাঁড়িয়ে বা টুলের ওপর বসে কেনাবেচা করতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম অফিস জানায় বৈরী আবহাওয়ায় বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রামে দিনভর ছিল থেমে থেমে বৃষ্টিপাত। কখনও টিপ টিপ, আবার কখনও মুষল ধারে বৃষ্টিপাতে ডুবে যায় নগরীর নিচু এলাকাগুলো। নগরীর বাইরে জেলায়ও প্লাবণ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, স্থল নিম্নচাপের প্রভাব থাকায় আরও কয়েকদিন ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। সমুদ্র বন্দরগুলোর জন্য ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত বহাল আছে। এদিকে ভিয়েতনাম থেকে আসা চালবাহী জাহাজটি বন্দর জেটিতে ভেড়ানো হলেও আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় চাল খালাস করা সম্ভব হয়নি। আবহাওয়া দফতর জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৬২ দশমিক ৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। বৃষ্টির কারণে নগরীর আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, ছোটপুল, শুলকবহর, চকবাজার, কাপাসগোলা, চাক্তাই, মুরাদপুর, তিনপুলের মাথা, বহদ্দারহাটসহ নগরীর নিম্নাঞ্চলগুলোর সড়ক পানির তলে চলে যায়। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। নিম্নচাপের প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে দেশের সব ধরনের নৌযোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন দ্বীপের বাসিন্দারা। হাতিয়া উপজেলা প্রশাসন জানায়, নিম্নচাপের প্রভাবে নদী উত্তাল থাকায় এবং ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভোলা থেকে নিজস্ব প্রতিনিধি জানান, লালমোহনের কাছে মেঘনা নদী ঝড়ের কবলে পড়ে ১৪ জেলে নিয়ে একটি মাছ ধরা ট্রলার ডুবে গেছে। এর মধ্যে ১২ জেলে উদ্ধার হলেও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে জেলার লালমোহন উপজেলার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফাতেমাবাদ সøুইজ সংলগ্ন মেঘনা নদীতে এ ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলোÑ লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের ফাতেমাবাদ এলাকার মোঃ হোসেনের ছেলে কবির (৩৫) ও ফয়েজউল্যাহর ছেলে রাসেল (২০)। এদিকে পদ্মা নদীতে স্রোতের কারণে মাদারীপুর-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে চলাচলকারী ফেরিগুলো দ্বিগুণেরও বেশি সময় নিয়ে চলাচল করছে। ফলে ঘাট এলাকায় ছয় শতাধিক ছোট-বড় যানবাহন আটকে আছে। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীরা।
×