ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচন ॥ প্রাধান্য পাবে ডিজিটাল প্রচার

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২১ জুলাই ২০১৭

আগামী নির্বাচন ॥ প্রাধান্য পাবে ডিজিটাল প্রচার

এমদাদুল হক তুহিন ॥ ‘প্রতিটি গ্রাম থেকে একজন করে প্রতিনিধি নির্বাচন করে একটি টিম তৈরি করেছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিভাবে প্রচারে অংশ নিতে হয় তাদের সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। সরকারের উন্নয়ন তথ্য প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে অপপ্রচার প্রতিরোধেও তাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত করে তুলছি। হাট পরিক্রমানামক ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গ্রামের হাটগুলোতে গিয়ে বড় পর্দায় অর্থাৎ মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। প্রচার এ অনুষ্ঠানটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খুব বেশি আকর্ষণ করেছে।’Ñ কথাগুলো বলছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর। কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এই তরুণ মনোনয়ন চাইবেন কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে। প্রযুক্তির সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক থাকায় কৌশল হিসেবে প্রাধান্য দিচ্ছেন ডিজিটাল প্রচারকে। নারী নেত্রী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তিও ডিজিটাল মাধ্যমের প্রচারকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন। আওয়ামী লীগের হয়ে নাটোর-৪ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী এই নেত্রী জনকণ্ঠকে বলেছেন, ‘তরুণদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার সহজ পন্থা সামাজিক যোগাযোগ। তাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তৃণমূলে রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ার সব তথ্য তুলে ধরছি ফেসবুক, গুগল প্লাস ও টুইটার এ্যাকাউন্টে।’ আর মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক তরুণ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তৃণমূলে নিজের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। কেউ কেউ যুক্ত হয়েছেন ইউটিউব চ্যানেলে। এসব চ্যানেলে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের ভিডিও ছাড়াও আপলোড করা হচ্ছে বিশেষ তথ্য বা প্রামাণ্যচিত্র (ডকুমেন্টারি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডিজিটাল প্রচারের ক্ষেত্রে আগামী নির্বাচনে ফেসবুক লাইভ বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক দলসহ নেতাকর্মীরা ফেসবুকের বিশেষ এই ফিচার ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত বড় বড় সভা-সমাবেশ প্রচারের ক্ষেত্রে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে লাইভ কার্যক্রম শুরু করছে। পেজ থেকে চলতি অর্থবছরের বাজেট অধিবেশনের লাইভ কার্যক্রম জনসাধারণের নজর কেড়েছে। অপর বৃহৎ দল বিএনপিও প্রযুক্তি ব্যবহারে ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, সামনের নির্বাচনে নির্বাচনী ব্যয়ের বড় একটি অংশ খরচ হবে ডিজিটাল প্রচারে। আর তরুণরাই এগিয়ে থাকবে এদিক থেকে। বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) সভাপতি ও বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বার জনকণ্ঠকে বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ২৫ ভাগ ভোটারের বয়স থাকবে ২৩ বছরের নিচে। অর্থাৎ ২৫ ভাগ ভোটার তরুণ। এছাড়া ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সের অধিকাংশ মানুষই ডিজিটাল মাধ্যমে যুক্ত। এতে প্রায় ৪ কোটি ভোটারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সম্পর্ক গড়ে উঠবে ডিজিটাল মাধ্যমে। অনেক ক্ষেত্রে ছোট্ট একটা নির্বাচনী সভার চেয়ে ফেসবুকের একটি স্ট্যাটাসের বার্তা বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাবে। তাই ডিজিটাল মাধ্যমকে যারা অবহেলা করবে নির্বাচনী প্রচারে পিছিয়ে পড়বে তারা। আমেরিকা ও ভারতের নির্বাচনেও ডিজিটাল প্রচার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারেও এটি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে। দেশের প্রথম সারির একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন রাসেল অনিল। জনকণ্ঠকে তিনি বলেছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রচারে বিজ্ঞাপনী সংস্থাকে কিভাবে ব্যবহার করবে এটা তাদের মানসিকতার ব্যাপার। উন্নত বিশ্বে রাজনৈতিক প্রচারের পুরো অংশ বিজ্ঞাপনী সংস্থার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেশে এই সংস্কৃতির চর্চা গড়ে ওঠেনি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও রাজনৈতিক পোস্টারে মৌলিক কোন পরিবর্তন আসেনি। সাধারণত যে স্লোগানগুলো দেয়া হয় সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই জনগণের হৃদয়ে স্থান দখল করতে পারে না। কারণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তেমনভাবে সৃষ্টিশীল নন। এ ক্ষেত্রে তাদের বিজ্ঞাপনী সংস্থার ওপর নির্ভর করা উচিত। বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কাজ করেন এমন আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও এমপি-মন্ত্রীরা ডকুমেন্টারি তৈরিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তবে এর অধিকাংশেই সরকারী উন্নয়ন বার্তা তুলে ধরা হচ্ছে। তবে প্রচারে উন্নত বিশ্বের মতো দেশীয় সংস্কৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। এদিকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডিজিটাল প্রচারে তারা বেশ এগিয়ে। তাদের একজন সুফি ফারুক ইবনে আবু বকর। পেশায় তথ্যপ্রযুক্তিবিদ। অন্তত এক দশক আগে দেশের প্রথম সারির একটি মোবাইল অপারেটরের হেড অব আইটির দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। রাজনৈতিক পরিবার থেকে আসা সুফি ফারুক নিজের প্রচারে তথ্যপ্রযুক্তির সমন্বয়ে গ্রহণ করেছেন অভিনব সব কৌশল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলের প্রচার বাড়াতে কুষ্টিয়া-৪ আসনের প্রতিটি গ্রাম থেকে একজন করে প্রচার কর্মী নিয়োগ করেছেন। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দলের প্রচার চালাচ্ছেন। জানালেন ফেসবুকের পাশাপাশি গুগল প্লাস, টুইটার, লিংকড ইন এবং ইউটিউব চ্যানেলেও তিনি দলের প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলনের আগে ‘বিশ্বসভায় শেখ হাসিনা’ নামে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন তিনি। আর ইউটিউবে আপলোড করা ওই প্রামাণ্যচিত্রটি এখন পর্যন্ত দেখেছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ। কুষ্টিয়া-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী সুফি ফারুক জনকণ্ঠকে বলেন, ‘প্রচারের ক্ষেত্রে কিভাবে কন্টেন্ট তৈরি করতে হয় অনেক সময় তারা তা জানে না। তাদের সে বিষয়েও প্রশিক্ষিত করে তুলছি। তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা বাড়াতে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের তথ্য দুটিই সরবরাহ করা হচ্ছে। কারণ, অনেক সময় সব তরুণ উন্নয়নের সব তথ্য জানে না।’ তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার যে উন্নয়ন ভাবনা তা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরছি। নৌকার পক্ষে ভোট চাইছি। তবে কোন জায়গায় বলছি না যে আমাকেই ভোট দিতে হবে। যে নৌকা নিয়ে আসবে তাকেই ভোট দিতে অনুরোধ করছি।’ জানালেন, এলাকায় তিনি ‘শেখ হাসিনা হেলথ ক্যাম্প’ নামেও একটি স্বাস্থ্য কর্মসূচী পালন করে আসছেন। এর আওতায় তৃণমূলের দরিদ্র মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয় গুরুত্বপূর্ণ ওষুধও। তৃণমূলের রাজনীতির বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সরব নারী নেত্রী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি। বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা এই নেত্রী দীর্ঘদিন ধরেই নিজের ফেসবুক আইডি, টুইটার, গুগল প্লাস ও ইউটিউব চ্যানেলে দলীয় প্রচার চালিয়ে আসছেন। জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তুলে ধরছেন নিজের মতামত। সামাজিক মাধ্যমে অবগত হয়ে পাশে দাঁড়াচ্ছেন অসহায় মানুষেরও। নাটোর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি জনকণ্ঠকে বলেছেন, জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলে কাজ করে যাচ্ছি। এলাকায় নিয়মিত উঠান বৈঠক ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছি। বাড়ি বাড়ি ঘুরে শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। জানালেন, অনলাইনে নিয়মিত প্রচারের জন্য তরুণদের সমন্বয়ে গড়ে তুলেছেন একটি দল। তার মতে, সামনের নির্বাচনে সভা-সমাবেশ প্রচারের ক্ষেত্রে ফেসবুক লাইভ একটি মুখ্য হাতিয়ার হয়ে উঠবে। রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে ওঠা মুক্তির রাজনৈতিক হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই। ছিলেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা। তার বাবা অধ্যাপক আবদুল কুদ্দুস সেখানকার পাঁচবারের এমপি। মুক্তি জানালেন, বাবার অনুপ্রেরণাতেই তিনি রাজনীতিতে এসেছেন। বাবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এলাকায় দলীয় প্রচার এবং স্থানীয় মানুষের মাঝে সময় দিতে চেষ্টা করেন। আর এসব বিষয়ে বাবাই তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে নারীর ক্ষমতায়ন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারী উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিয়ে তৃণমূলে আরও ব্যাপকভাবে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে এই নেত্রীর। আওয়ামী লীগের হয়ে রাজবাড়ী-২ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে শেখ সোহেল রানা টিপু তৃণমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডেও প্রচারে অংশ নিয়েছেন। মাঠ পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিটি অংশ তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এই সভাপতি বর্তমানে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দায়িত্বে রয়েছেন। জনকণ্ঠকে জানালেন, ফেসবুক ও টুইটারে নিজের নির্বাচনী প্রস্তুতির জানান দিচ্ছেন তিনি। তার ভাষায়, উঠান বৈঠকে নেত্রীর উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছি। সামাজিক ইস্যুতে অংশ নেয়া প্রতিটি কর্মকা-ের বার্তাই সামাজিক মাধ্যমে জানানো হচ্ছে। ফেসবুকে তার নাম সার্চ করে দেখা গেল ‘শেখ সোহেল রানাকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ নামে একটি গ্রুপ রয়েছে। এতে প্রায় হাজের খানেক সদস্য রয়েছে। প্রত্যেকেই তুলে ধরছে রানার পক্ষে মতামত। এর বাইরেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ময়মনসিংহ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ নেতা সামীউল আলম লিটন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক এই সহ-সম্পাদক প্রস্তাবিত ময়মনসিংহ জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদের দায়িত্বে রয়েছেন। জানালেন, নিজের রাজনৈতিক কর্মকা-ের প্রতিটি অংশ তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিজ এলাকায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়া কয়েকজন নেতাকর্মীর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের চিকিৎসা ব্যয় বহন করেছেন। আর ফেসবুকে আপলোড করেছেন সেসব ছবিও। জানালেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনিও ডিজিটাল প্রচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। আওয়ামী লীগের হয়ে ময়মনসিংহ ৪ ও ১০ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনি। বয়সে কিছুটা প্রবীণ হলেও যুক্ত আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নিত্যদিনের রাজনৈতিক কর্মকা- তুলে ধরে অংশ নিয়েছেন ডিজিটাল প্রচারে। নেত্রকোনা-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেট চাইবেন তরুণ নেতা অসীম কুমার উকিল। ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদকের। জনকণ্ঠকে তিনি বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই প্রকৃত আধুনিক বাংলাদেশের চেহারা উঠে আসে। আমার নির্বাচনী প্রচারেও ডিজিটাল মাধ্যম মুখ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফেসবুক ছাড়াও গুগল প্লাস, টুইটার ও ইউটিউবে যুক্ত রয়েছি। ভবিষ্যতে প্রচারের বিভিন্ন অংশ ইউটিউবেও আপলোড করা হবে। আর নেত্রকোনা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন শফি আহমেদ। তিনিও যুক্ত রয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। জনকণ্ঠকে জানালেন, তিনিও ডিজিটাল প্রচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তৃণমূলে রাজনৈতিক কর্মকা-ের সকল তথ্য তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কিশোরগঞ্জ-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম রেনু। কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এই সদস্য বর্তমানে পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন। বয়সে কিছুটা প্রবীণ হলেও যুক্ত আছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর ফেসবুকে তার পক্ষে সরব রয়েছে একদল তরুণ। তারা তুলে ধরছেন তৃণমূলের সব রাজনৈতিক কর্মকা-। জনকণ্ঠকে জানালেন, ডিজিটাল মাধ্যমের প্রচারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন তিনিও। আওয়ামী লীগের হয়ে পিরোজপুর-১ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে দায়িত্বে রয়েছেন। জানালেন, তৃণমূলে প্রচারে বাইরেও নিজের রাজনৈতিক কর্মকা- তুলে ধরছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। নড়াইল-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতা এফ এম শাহীন। মনোনয়ন পেতে অংশ নিয়েছেন ডিজিটাল প্রচারে। তৃণমূলে অংশ নিয়ে নির্যাতিত নেতাদের পাশে দাঁড়ানোসহ শেখ হাসিনার উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরছেন নিজের ফেসবুক আইডি ও পেজে। সম্প্রতি শেখ হাসিনার নামে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করে আপলোড করেছেন ইউটিউবে। গণজাগরণ মঞ্চের নেতা কামাল পাশা চৌধুরীও নেত্রকোনা ৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা আলোচনায় উঠে এসেছেন তারা হচ্ছেনÑ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন (চট্টগ্রাম-১৫), তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন (পটুয়াখালী-১), সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন (নেত্রকোনা), মিসবাহউদ্দিন সিরাজ (সিলেট), এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী (চাঁদপুর-৩), কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট এবিএম রিয়াজুল কবীর কাউসার (নরসিংদী-৫), কেন্দ্রীয় নেতা মারুফা আক্তার পপি (জামালপুর), ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শাহে আলম (বরিশাল-২), এএইচএম মাসুদ দুলাল (নারায়ণগঞ্জ-৩), খলিলুর রহমান (বরগুনা-১), মাহমুদ হাসান রিপন (গাইবান্ধা-৫), সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), অজয় কর খোকন (কিশোরগঞ্জ-৫), পনিরুজ্জামান তরুণ (ঢাকা-১), ড. আওলাদ হোসেন (ঢাকা-৪), যুবলীগের ইসমাঈল হোসেন সম্রাট (ঢাকা-৮), যুবলীগের মঈনুল হোসেন খান নিখিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু (ঢাকা-১৫), নারী সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট নূরজাহান বেগম মুক্তা (চাঁদপুর-৫), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১৪), জহিরউদ্দীন মাহমুদ লিপটন (ফেনী-৩), একই আসনে অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, আশরাফ হোসেন (পিরোজপুর-৩), বদিউজ্জামান সোহাগ (বাগেরহাট-৪), আকতারুজ্জামন বাবু (খুলনা-৬), আবদুল মালেক (পটুয়াখালী-২), জিয়াউল হক জুয়েল (পটুয়াখালী-২), ইঞ্জিনিয়ার কাজী আবদুল ওয়াহিদ (মুন্সীগঞ্জ-২), ফয়সাল বিপ্লব (মুন্সীগঞ্জ-৩), এ্যাডভোকেট মোল্লা আবু কাউসার (ঢাকা-৮), গোলাম রব্বানী চিনু (ঢাকা-১৩), ইকবাল হোসেন সবুজ (গাজীপুর-৩), ড. আবদুস সোবহান গোলাপ (মাদারীপুর-৩), ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১), মঈন উদ্দিন মঈন (ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া-২), এম এ মমিন পাটোয়ারী (লক্ষ্মীপুর-১), নাফিউল ইসলাম নাফা (নীলফামারী-৪), রবিউল ইসলাম রবি (ঠাকুরগাঁও-৩) ও ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল হারুন-অর-রশীদ (বরগুনা-২)। এর বাইরেও মনোনয়ন পেতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে একাধিক তরুণ নেতা। এদিকে, ফেসবুকে এখন ‘এমপি হিসেবে দেখতে চাই’ লিখে সার্চ দিলেই বেশ কয়েকজনের নাম চলে আসছে। এর মধ্যে একটি পোস্টে দেখা গেল, পিরোজপুর-১ আসনে এস এম রেজাউল করিমকে এমপি হিসেবে দেখতে চেয়েছেন সুজন চক্রবর্তী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রেজাউলের একটি ছবি পোস্ট দিয়ে তিনি তার এই অনুভূতি প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ ঘেঁটে দেখা গেছে, সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে দলীয় পাল্লা ভারি করতেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্পর্কিত একাধিক ভিডিও আপলোড করা হয়েছে এই পেজটিতে। জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনও এবার প্রথমবারের মতো লাইভ করা হয়েছি পেজটি থেকে। টুইটারেও রয়েছে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল এ্যাকাউন্ট। এতে প্রায় ৭৭ হাজার ফলোয়ার রয়েছে। আর টুইট করা হয়েছে প্রায় ১১ হাজারের মতো। দেশের অপর আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিও যুক্ত রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে যুক্ত হয়েছেন ফেসবুক, টুইটার ও ব্লগে। সেসব এ্যাকাউন্ট থেকে খালেদার জিয়ার নিত্যদিনের কর্মকা-ের আপডেট জানানো হচ্ছে। বিএনপির তরুণ নেতারাও প্রযুক্তি ব্যবহারে দিকে বিশেষ মনোযোগী হয়ে উঠছেন। তারা তাদের কর্মকা- মেলে ধরছেন ডিজিটাল মাধ্যমে। তবে, যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলাম ডিজিটাল মাধ্যমে অপপ্রচারে লিপ্ত। প্রচারের চেয়ে অপ্রচার চালাতেই তারা বেশ পারদর্শী। কট্টরপন্থী ও ধর্মকে ব্যবহার করে হঠাৎ রাজনীতিতে আবির্ভাব হওয়া হেফাজতে ইসলামও প্রযুক্তিবান্ধব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রচারেও লক্ষণীয়।
×