ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাছ উৎপাদনে দেশ ক্রমান্বয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২০ জুলাই ২০১৭

মাছ উৎপাদনে দেশ ক্রমান্বয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমানে দেশে মাছের উৎপাদন প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন। আর আগামী ৩ বছরেই অতিরিক্ত ৬ লাখ মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। ২১ সালের মধ্যে মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করার লক্ষ্য থাকলেও এর আগেই তা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। দেশের মৎস্য খাতের পরিবর্তন ক্রমেই লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠছে। ধারাবাহিক গড় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কারণে খাতটি বর্তমানে প্রসংশনীয়। তবে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বিজ্ঞান সম্মত ও প্রযুক্তিবান্ধব উপায়ে মাছ চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে। মাছ চাষের প্রান্তিক পর্যায়ে প্রযুক্তির প্রসার ঘটাতে হবে। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানী খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ প্রাঙ্গণে ‘কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলা ২০১৭’-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উপলক্ষে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে এই মেলার আয়োজন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। পরে তিনি অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে মেলার স্টল ঘুরে দেখেন। মেলায় সরকারি-বেসরকারি একাধিক প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। কোন কোন স্টল থেকে ক্রোতারা পাবেন মাছ কেনার সুযোগও। এছাড়াও মাছের পোনা, প্রযুক্তিবান্ধব মাছ চাষের পক্রিয়া ও মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে বিভিন্ন এলাকায় নেয়া সরকারের কর্মকান্ডও তুলে ধরা হয়েছে মেলায়। পাঁচদিন ব্যাপী চলমান এই মেলা শেষ হবে আগামী ২৪ জুলাই। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মৎস্য সম্পদে দেশের যে উন্নয়ন তা সত্যিই গর্বের বিষয়। দেশে বর্তমানে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হলেও ২১ সালের মধ্যে তা ৪৫ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। কিন্তু দেশে যে হারে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আগামী ৩ বছরেই এই অতিরিক্ত ৬ লাখ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। মাছ উৎপাদনে দেশ মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে আমরা কিছু মাছ আমদানি করছি আর কিছু মাছ রফতানি করছি। স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন শেষে ভবিষ্যতে মাছের রফতানি আরও বৃদ্ধি করা হবে। তিনি বলেন, মাছে যে পরিবর্তন তা খুবই লক্ষ্যণীয়। মাছ রফতানিতে গড় প্রবৃদ্ধিও খুবই বেড়েছে। কৃষির যে উন্নয়ন তা সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তি ব্যবহারে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। দেশে মাছ ও সবজির উৎপাদন যেভাবে বাড়ছে তা পুষ্টিতে খুবই বড় অবদান রাখছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেন, বর্তমানে বাজারে মাছের কোন অভাব নেই। গত বছর অলিতে গলিতে ঈলিশ পাওয়া গেছে। এ বছরও ঈলিশ ধরা পড়ছে। ঈলিশ আমাদের ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। সরকারের গৃহীত ব্যবস্থাপনা ও কৌশলের কারণে দেশে ক্রমাগত ঈলিশের উৎপাদন বাড়ছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন গড়ে যদি আমরা ৫৫ থেকে ৬০ গ্রাম মাছ খাই তাহলে আমাদের ৬২ লাখ মেট্রিক মাছের প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের উৎপাদন ৪০ লাখ মেট্রিক টন। বর্তমানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও দেশে মাছের উৎপাদন বেশি হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র বলেন, ’২১ সালের মধ্যে ৪৫ লাখ মেট্রিক মাছের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আমরা এর চেয়ে বেশি উৎপাদন করতে পারবো। দেশ মাছ উৎপাদনে ক্রমান্বয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যারা সমুদ্রে মাছ ধরতে যায় তাদেরকে অনেক সময় মহাজনের কাছ থেকে নৌকা ও জাল নিতে হয়। আমরা যদি দরিদ্র জেলেদের নৌকা ও জাল কেনার জন্যে ঋণ দিতে পারি তাহলে তাদের দারিদ্রতা কমে আসবে। যারা সমুদ্রে মাছ ধরে তাদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে এসময় তিনি অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। সভাপতির বক্তব্যে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ বলেন, সর্বশেষ অর্থবছরে ৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকার মাছ রফতানি হয়েছে। বর্তমানে মৎস্য খাতের গড় প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪। গত ৫ বছরে মৎস্য খাতে নতুন করে ৪২ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। আর বর্তমানে খাতটিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ জড়িত রয়েছে। তিনি বলেন, সুমদ্রে মাছ ধরার ক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা বাড়েনি। ট্রলারের সঙ্কট রয়েছে। সমুদ্রে সক্ষমতা বাড়াতে ১৬ টি চেকপোস্ট দরকার হলেও বর্তমানে মাত্র ১ টি চেকপোস্ট রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
×