ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগ, আমাদের দায়িত্ব

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২১ জুলাই ২০১৭

সিডনির মেলব্যাগ ॥ মমতা ব্যানার্জীর অভিযোগ, আমাদের দায়িত্ব

বিপাকে আছেন মমতা ব্যানার্জী। ভারতে গণতন্ত্র থাকায় একটা বড় সুবিধে তারা মুখ খুলতে পারেন। কিছুদিন ধরে তিনি সমানে বিজেপি ও কেন্দ্রের শাসকদের দোষারোপ করে চলেছেন। মূলত বসিরহাটে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও দাঙ্গাকে ঘিরেই এই উত্তেজনা। সঙ্গে আছে দার্জিলিং সমস্যা। এর আগেও দার্জিলিং আলাদা হতে চেয়েছিল। জ্যোতি বসুর সরকার কঠোর হাতে সুভাষ ঘিসিংকে দমন করেছিলেন সে সময়। এসব তাদের ঘরোয়া ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশের মানুষ হিসেবে সীমান্তে শান্তি আর উভয় দেশের ভেতর বন্ধুত্বের বাইরে কিছু চাই না। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখতেই হয়, যেহেতু উভয় দিকে উভয় দেশে উত্তেজনা ও দাঙ্গা ফ্যাসাদ লাগানোর লোকের অভাব নেই ফলে যে কোন অপপ্রচার আর উস্কানিতে ভয় আছে বৈকি। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা সে কারণে মার খাক কিংবা বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হোক এটা কেউই চায় না। অথচ আজকাল সামাজিক মিডিয়ার কারণে প্রচার অপপ্রচারের রোগ মহামারীর আকার ধারণ করতে খুব একটা সময় নেয় না। মমতা দিদি তাঁর রাজ্যের সমস্যা সামলাতে গিয়ে আমাদের দেশের কথা টেনে না আনলে এই লেখা লেখার দরকার পড়ত না। এখন তিনি খোলামেলা বলছেন জামায়াতী সন্ত্রাসীরা নাকি বাংলাদেশ থেকে ঢুকে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি একটি বিশেষ জেলার নাম করে বলেছেন তারা সে জেলা থেকে ঢুকতে পারছে বিএসএফের সহায়তায়। এই জাতীয় কথা জীবনে প্রথম শুনলাম, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় তাদেরই একটি অঙ্গরাজ্যে পাশের দেশ থেকে সন্ত্রাসী ঢুকছে। এটা যদি সত্য হয় সেদেশ ও দেশের মানুষের তো এখনই দেশত্যাগ বা নিজেদের দেখভাল করার জন্য অন্য কিছু ভাবা জরুরী। মমতা ব্যানার্জী অবশ্য বুক ঠুকে বলেছেন তাঁর কাছে প্রমাণ আছে। বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের সমস্যা অনেক। আছে জঙ্গীবাদ আছে উস্কানি আছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলতে গেলে একাই লড়ছেন। মমতাদি যে জেলার নাম বলেছেন তার সঙ্গে বাংলাদেশের জামায়াত নেতাদের যোগ নিবিড়। বিশেষ করে দেশে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি হচ্ছিল তখন এই জেলায় সবচেয়ে বেশী তান্ডব দেখেছি আমরা। জ্বালাও পোড়াও থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনের মাথা থেঁতলে দেয়ার মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল এই জেলায়। সে থেকে আজ অবধি আমাদের দেশের সরকার ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা পরিশ্রম করে চলেছেন জঙ্গী দমাতে। সে জেলার কিছু দুষ্কৃৃতি পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে বড় বড় অঘটন ঘটিয়ে চলে আসবে আর ভারত সরকারের বর্ডার ফোর্স আঙ্গুল চুষবে এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তারপরও যদি তর্কের খাতিরে তার কথা মেনে নেই, কিভাবে প্রমাণ করবেন তিনি? আগে তো নিজের কথা নিজের দলের কথা ভাবুন। এ যাবত জঙ্গী দমন বা সে সব কারণে কি কি করেছেন তারা? আমাদের লাগোয়া রাজ্য আমাদের প্রতিবেশী হবার পরও বিপদের কালে পাশ ফিরে ঘুমিয়েছেন। উল্টো শোনা যায় ওপার বাংলা এপার বাংলার খুনী মস্তান ও টাকা চোরদের অভয়ারণ্য হয়েছে সরকারের সুবিধাবাদী লোকদের মদদে। বাংলাদেশ যখন এদের নির্মূলে যুদ্ধ করছিলাম মমতাদি তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? আপনাদের বঙ্গে পালিয়ে বেড়ানো সন্ত্রাসীদের ধরা বা ফিরিয়ে দেবার ব্যাপারে কোনদিন মুখ খুলেছেন? না কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন? আপনার বিরুদ্ধে বড় একটি অভিযোগ সংখ্যালঘু তোষণ। সংখ্যালঘুরা সবদেশেই কমবেশী বিপদে থাকে। আমাদের দেশে একতরফা মার খেলেও আপনার ওখানে তারাও মারে। তাদের ভালভাবে নিরাপদে থাকতে দেয়া আপনাদের কর্তব্য। কিন্তু তোষণের মাধ্যমে আপনি যাদের মাথায় তুলেছেন তারা তো সংখ্যালঘু না। তারা মস্তান বা দাঙ্গাকারী। আজ এর মাশুল দিতে গিয়ে আপনি বাংলাদেশের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন। যার সত্যতা কেউ জানে না। বাংলাদেশে সরকার আর যাই করুক জঙ্গীবাদ দমনে কঠোর। সমস্যা আছে বৈকি। তবু আমাদের দেশ পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে এগিয়ে আছে নানাদিকে। সে জায়গায় মমতার এই ঢালাও অভিযোগ বেদনার। তিনি যদি জানেনই তবে তাদের ব্যাপারে বাংলাদেশের সরকারের কাছে নালিশ করছেন না কেন? এতে তো উভয়ের লাভ। উভয় দেশে শান্তির ব্যাপারেও এ প্রক্রিয়া কাজে লাগবে। সেটা না করে সীমান্তে সন্ত্রাসীদের না ধরে আপনারা আমাদের উপহার দেন ফেলানীর মতো নিষ্পাপ কিশোরীর লাশ। পেটের দায়ে সীমান্ত পাড়ি দেয়া মানুষজনকে হত্যা করার পেছনে যত উৎসাহ তার সিকিভাগও যদি মস্তান বা সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর বেলায় থাকত পরিবেশ পাল্টে যেত। আমাদের সমাজ ও জীবনে হিংসার অভাব নেই। ইস্যুরও অভাব নেই। আপনি বোঝার ওপর শাকের আঁটি চাপিয়ে একে আর ভারি করবেন না। আপনার কোন ধারণা নেই উস্কানির ফলাফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ও প্রগতিশীল মানুষের জীবনে কতটা দুর্ভোগ নেমে আসতে পারে। তারা মার খেয়ে সীমান্ত পাড়ি দিক এটা কারও চাওয়া হতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভেতর অমীমাংসিত সমস্যাগুলো সমাধানের অন্তরায় হিসেবে আপনার জেদ বা ইগোকেও দায়ী করেন অনেকে। আপনি যে আমাদের ব্যাপারে একটু বেশি খুঁতখুঁতে সেটা সবাই জানে। কিন্তু এতবড় একটা অভিযোগ সে কারনে আসবে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। বাংলাদেশের সরকার ও সরকারী তরফ থেকে এখনও এ বিষয়ে কিছু বলা হয়েছে কিনা জানি না। যত শীঘ্র সম্ভব তাদের উচিত এ বিষয়ে মুখ খোলা। কারণ পশ্চিমবঙ্গের দাঙ্গা হাঙ্গামার জন্য সে দেশের জামায়াতীরা দায়ী না হয়ে আমাদের একটি জেলার জামায়াতীরা দায়ী এটা কেমন জানি বেখাপ্পা লাগছে। দেশের সম্মান ও ভাবমূর্তি আমাদের সবার কাম্য। মমত দি চাইলেই অভিযোগ তুলে পার পেয়ে যাবেন? আর যদি তার অভিযোগে সত্যতা থাকেত আমাদের সরকার বা বাহিনী নিশ্চয়ই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে দেরি করবে না। মমতা ব্যানার্জীর পশ্চিমবঙ্গ এখন বিপাকে। সেখানে বিজেপি বনাম তৃণমূলে লড়াই চলছে। লড়াই চলছে কেন্দ্র বনাম রাজ্যে। এমন সময়ে আমাদের কাঁধে বন্দুক তাক করার সুযোগ দেয়া অনূচিত। তবে আমরা নিশ্চয়ই শান্তি ও ভালোবাসায় বিশ্বাসী। শুভ বুদ্ধি ও প্রগতির জয় হোক উভয় দেশে।
×