ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে নরপশু পিতার যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ২৩:১০, ২০ জুলাই ২০১৭

শেরপুরে কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে নরপশু পিতার যাবজ্জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ শেরপুরে এবার নিজের ঔরসজাত কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের চাঞ্চল্যকর মামলায় হানিফ উদ্দিন (৪২) নামে এক নরপশু পিতার যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু আদালতের বিচারক (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ মুসলেহ উদ্দিন আসামীর উপস্থিতিতে জনাকীর্ণ আদালতে ওই রায় ঘোষণা করেন। হানিফ উদ্দিন সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট হদিপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের পুত্র এবং ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। আত্মীয়-স্বজনসহ আইনজীবীদের ঘৃণার কারণে ওই মামলায় আসামী পক্ষে কেউ আইনী লড়াই করেননি। আদালত সূত্র জানায়, হানিফ উদ্দিন বিয়ের পর থেকেই স্ত্রীকে নিয়ে সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের ধোপাঘাট হদিপাড়া গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই হিসেবে বসবাস করছিল। হানিফ অলস ও জুয়ারী প্রকৃতির হওয়ায় অনেক কষ্টে সংসার চালাতে হতো স্ত্রীকেই। ওই অবস্থায় তাদের সংসারে ২ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। ভিকটিম (১৪) তাদের বড় মেয়ে এবং সে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে বাড়িতেই থাকতো। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর রাতে নিজের বসতঘরে সুযোগমত পেয়ে নরপশু সেই বড় মেয়েকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। এরপর আরও কয়েক দফায় হানিফ মেয়ের পর পাশবিক নির্যাতন চালায়। ওই অবস্থায় ধর্ষিতা কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তার মাসহ আত্মীয়-স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদে সে পিতার দ্বারা কয়েকমাস যাবত ধর্ষণের তথ্য ফাঁস করে। ওই ঘটনায় একই বছরের ২০ অক্টোবর ধর্ষিতা কিশোরীর মা বাদী হয়ে নরপশু পিতা হানিফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে শেরপুর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একই দিন ওই মামলায় ধর্ষিতা কিশোরীর আদালতে জবানবন্দি ও জেলা সদর হাসপাতালে ডাক্তারী পরীক্ষা করা হয়। আর নিরাপত্তার অভাবে ২৩ অক্টোবর ধর্ষিতা কিশোরীকে পাঠানো হয় গাজীপুরের কোনাবাড়ী কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে। অন্যদিকে ২৫ অক্টোবর গ্রেফতার হয় আসামী হানিফ উদ্দিন। পরদিন সে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী হানিফের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯ (১) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জীবন চন্দ্র বর্মণ। পরবর্তীতে ১৭ জানুয়ারি ধর্ষিতা ঢাকার আজিমপুর ছোটমনি নিবাসে (বেবি হোম) থাকাবস্থায় তার গর্ভ থেকে একটি ছেলে শিশুর জন্ম হয় এবং ৩ দিন পর শিশুটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। ২০ মার্চ মামলাটি বিচারের জন্য শিশু আদালতে বদলি হয় এবং পরদিনই আসামীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ৯ জুলাই ধর্ষিতার মা সংবাদদাতা বাদী ও ধর্ষিতার জবানবন্দি-জেরা গ্রহণ এবং ১৮ জুলাই চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ আরও ৬ জন সাক্ষীর জবানবন্দি-জেরা গ্রহণ শেষে একই দিন আসামী পরীক্ষা ও যুক্তিতর্ক শেষ করে ২০ জুলাই রায়ের তারিখ ঘোষিত হয়। শিশু আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু জানান, পিতার দ্বারা কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের ওই চাঞ্চল্যকর মামলায় প্রথম থেকেই আসামীপক্ষে কোন আইনজীবী ছিলেন না। সবার ঘৃণার কারণেই ওই অবস্থা হয়েছে। এছাড়া মামলাটির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড না হওয়ায় আসামীপক্ষে কোন স্টেট ডিফেন্সও দেওয়া হয়নি।
×