ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ রাশেদুজ্জামান রাকিব

সন্তানেরা হোক দায়িত্বশীল

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ২০ জুলাই ২০১৭

 সন্তানেরা হোক দায়িত্বশীল

ছোট্টবেলায় স্বপ্ন দেখে উঠত খোকা কেঁদে/দু’হাত দিয়ে বুকের কাছে রেখে দিতাম। বেঁধে/দু’হাত আজও খুঁজে/ভুলে যায় যে একদম/আমার এ ঠিকানা তাই বৃদ্ধাশ্রম। নচিকেতার এই গান যেন এ দেশের অধিকাংশ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের অসহায় সময়ের করুণ আর্তি। আমাদের দেশে যৌথ পরিবারের বদলে একক পরিবার একচ্ছত্র জায়গা করে নিচ্ছে। মূলত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও সামাজিকভাবে একক পরিবারের সুবিধা বিবেচনাপ্রসূত এর চাহিদা ও গ্রহণযোগ্যতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জীবন সায়াহ্নে দণ্ডায়মান পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধার ওপর। কেননা, অধিকাংশ শিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষের আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব, পরিবারের অতিরিক্ত সদস্যের দায়িত্ব নেয়ার প্রতি অনীহা, সংকীর্ণ মনমানসিকতা ও বাবা-মার প্রতি অবহেলার দরুন বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়া মানুষগুলো সঙ্গীহীন অমানবিক জীবনযাত্রার সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ সমস্যা আরও বেশি হয়ে পড়ে এদের দুজনের মধ্যে একজনের পরলোকগমনে। তখন একজনকেই জীবনের সব পরাজয়, ব্যর্থতা ও নির্মম জীবনের হিসেব কষতে হয় একাকী। বাংলাদেশে এ বার্ধক্যের হার শতকরা ৬.১ জন। এর মধ্যে একেবারে হতদরিদ্রের সংখ্যা শতকরা ৩৭ জন এবং একাকী জীবনযাপন করতে হয় শতকরা ২০ জনকে। যদিও বাংলাদেশ সরকার দেশে ১৭ লাখ বেকারের বার্ধক্য ভাতা প্রকল্প চালু করেছে। তবুও এখনও অনেকে আর্থিক, মানসিকভাবে মানবেতর জীবনযাপন করে। ভাবতে অবাক লাগে যে, যেই ছেলে বা মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে, লেখা-পড়ার খরচ যোগাতে একসময় এই বাবা নিজের সব সুখ বিসর্জন করে দিয়েছে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রম করেছে, নিজের জমানো সম্পদ-ভিটেমাটি সব বিক্রি করে দিয়েছেনÑ সেই বাবার জন্য একটু জায়গা কিন্তু এদের বাসস্থানে হয় না। যে মার বুকের দুধে নিজের সন্তানের দেহ পুষ্ট ও বলিষ্ঠ হয়েছে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে দুধ-কলায় মাখানো ভাত সন্তানের পেটে কেমনে যায়? সময় মানুষকে অসহায় করে তোলে। বার্ধক্য ও ঠিক শিশুর মতো পরনির্ভরশীল সময়। এ সময় এদের আর্থিকভাবে যেমন অকুণ্ঠ সমর্থন আবশ্যক, তদ্রƒপ এদের মানসিক প্রশান্তির জন্য তৃপ্তিকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত আমাদের, বিশেষ করে সব সন্তানের। এঁদের বৃদ্ধাশ্রমে রাখা হলে মানসিকভাবে এরা বিপর্যস্ত হয়। করুণ আর্তিতে জীবনটা অসহনীয় হয়ে ওঠে। পৃথিবীতে তো মাত্র একবারই আসা। কিন্তু এ সময়ে যদি সকলের কাছে থেকে সহানুভূতি না অর্জন করা যায়; জীবনের কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। আমাদের সমাজে অনেকে আছে যারা অগাধ ধন-সম্পদের মালিক হয়েও শুধুমাত্র সন্তানদের অবহেলা ও উদাসীনর জন্য নিঃসঙ্গ অবস্থায় থাকে। অথচ এ বার্ধ্যক্যের সময়টা সকল বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কাম্য ছেলে ও মেয়ের তাদের সন্তানদের সঙ্গে হেসে খেলে জীবনটা পার করে দেয়া। কিন্তু স্বার্থের সঙ্গে আপোসহীন নৈতিকতা বর্জিত শিক্ষায় গড়ে ওঠা ও পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী তাদের সেই পাষাণ সন্তানেরা তাদেরকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×