ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া

প্রকাশিত: ০৬:২০, ১৮ জুলাই ২০১৭

ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া

বর্তমানে বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকাতে চিকুনগুনিয়া জ্বরে মারাত্মক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। অসংখ্য মানুষ ইতোমধ্যে চিকুনগুনিয়াতে ভুগছেন; অনেক মানুষ এখনও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ চিকুনগুনিয়া জ্বরের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। সকল বয়সের সকল স্তরের মানুষ প্রায় সমহারে এতে আক্রান্ত হন। এটি একটি মশাবাহিত রোগ। সাধারণত জ্বর, ব্যথা বিশেষত জয়েন্টের ব্যথা, ক্ষুদা-মন্দা ও বমি ভাব-চিকুনগুনিয়ার প্রধান লক্ষণসমূহ, চিকুনগুনিয়া জ্বরের প্রধান লক্ষণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে। ৫-৭ দিনের মধ্যে জ্বর কমে যাচ্ছে। কিন্তু জয়েন্টের ব্যথা (বিশেষ করে পায়ের গোড়ালি) ও পা ফুলা থেকে যাচ্ছে পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ যাবত। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ জ্বর। কেননা, এ সময়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে, রক্তের গ্লুকোজ কমে যেতে পারে, চিকুনগুনিয়ার পরবর্তী শ্বাসনালীর সংক্রমণ হতে পারে (নিউমোনিয়া)। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি ও তৈরি হতে পারে। চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের মধ্যে ডায়াবেটিসের রোগীরা সবচেয়ে বড় দল। একইভাবে চিকুনগুনিয়া জ্বরে যাদের মারাত্মক পরিণতির স্বীকার হতে যাচ্ছে। সে দলেও ডায়াবেটিস রোগীরা সব চেয়ে আগানো। ঢাকাতে ইতোমধ্যে অনেক ডায়াবেটিস এর রোগীর চিকুনগুনিয়া জ্বর ও ডায়াবেটিস এর জ্বটিলতা নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। অথবা হাসপাতালে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন। ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া হলে তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। কারণ নি¤েœলিখিত পরিস্থিতিগুলোর মোকাবেলার পূর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন। রক্তের গ্লুকোজ বেশি বেড়ে যাওয়া : যে কোন রকম সংক্রমণ বা প্রদাহে রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যেতে পারে। যেমন- চিকুনগুনিয়া হতে পারে। যাদের টাইপ ১ ডায়াবেটিস আছে তাদের অবস্থা আরও মারাত্মক হতে পারে। এই ক্ষেত্রে রক্তের কিটোন বডি পেতে পারে। যা একটি মৃত্যু ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা অনেকে ভাবেন, যেহেতু ঠিকমতো খেতে পারছেন না, তাই রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু এই রকম জ্বরের কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। বরং উল্টোটাও হতে পারে। রক্তের গ্লুকোজ কমে যাওয়া : ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে, যদি ঘন ঘন বমি হতে থাকে, তাহলে রক্তের গ্লুকোজ কমে যাবার সম্ভাবনা থাকে, আবার কিছু কিছু ওষুধ ও এর জন্য দায়ী হতে পারে। সেজন্য রক্তের গ্লুকোজ মেপেই সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরী। তবে নিজ থেকে কোন ওষুধ পরিবর্তন না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে ডায়াবেটিসের রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে, নি¤েœলিখিত বিষয়গুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন * অতি দ্রুত আপনার চিকিৎসক এর শরণাপন্ন হবেন। * পূর্ণ বিশ্রাম নিবেন (কমপক্ষে এক সপ্তাহ) * প্যারাসিটামল ওষুধ গ্রহণ বাদে অন্য কোন ওষুধ শুরু করবেন না বা ডায়াবেটিস-এর কোন ওষুধ বন্ধ করবেন না। * কোন কোন সময় সেবন করা উপকারী হতে পারে। * দিনে ছয় বার বা তার চেয়ে বেশি বার রক্তের গ্লুকোজ মাপবেন। * জল বা জলীয় খাদ্য গ্রহণ বাড়িয়ে দিবেন তবে তা যত কম ক্যালরী সমৃদ্ধ হয় তত ভাল। * কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলের রস পান করা সুবিধাজনক হতে পারে। ডায়াবেটিস রোগীর চিকুনগুনিয়া জ্বর হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন * রক্তের গ্লুকোজ অনেক বেড়ে গেলে (১৬ মিলি মোল/লিটার) * রক্তের গ্লুকোজ বারতে না পারলে। * বমি অথবা পাতলা পায়খানা হলে। * শ্বাসকষ্ট হলে। * অজ্ঞান প্রবণতা দেখা দিলে। * তীব্র দূর্বলতা দেখা দিলে। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে চিকুনগুনিয়ার প্রভাব বহুমাত্রিক হতে। আফ্রিকান কিছু কিছু গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে, যাদের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ঝুঁকি কম, তারাও চিকুনগুনিয়ায় ভোগার পর তাদের ডায়াবেটিস হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়। যে রকম লক্ষণ দেখা দিক না কেন, ডায়াবেটিস রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হলে দ্রুত ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেওয়া জরুরী। ডাঃ শাহজাদা সেলিম সহকারী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
×