ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমস্যা আপনার সমাধান আপনিই

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৭ জুলাই ২০১৭

সমস্যা আপনার সমাধান আপনিই

দৈনন্দিন জীবনে একজন মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। একেবারেই ঝামেলাবিহীন মানুষ আপনার পক্ষে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারপরেও আপনি যখন কাউকে তার কুশল জিজ্ঞাসা করবেন, তিনি তার সমস্যার কথাটি এড়িয়ে গিয়ে আপনাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে তার জীবন কত নির্ঝঞ্ঝাট, কত নিখুঁত। সাধারণত এক অর্থে এই উত্তরগুলো সম্পূর্ণ ভুল এবং অর্থহীন। এটাই বাস্তব যে আপনার জীবনেও অন্যান্য মানুষের মতোই সমস্যা আছে। এ ধরনের সাধারণ কিছু সমস্যাগুলো নিয়েই আজকের আয়োজন। শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্নে প্রশ্নে একটু খোঁজাখুঁজি করা যাক। সেগুলো হতে পারে আপনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা অবসাদ কিংবা আপনার প্রিয় কোন বদাভ্যাস, যেটাকে আপনি বদাভ্যাস বলে মনে করেন কিন্তু ছাড়তে নারাজ অথচ সেটাকে পুঁজি করে দিনের পর দিন নিজেকে দোষ দিয়ে যাচ্ছেন কিংবা এর থেকেও বড় কিছু। আমরা প্রশ্নগুলোর দিকেই তাকাই ১. কারও সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ? ২. হতাশায় ভুগছেন? ৩. মিথ্যা বলা কি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে? ৪. প্রয়োজনীয় কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে? ৫. কোনরকম আসক্তি আছে? ৬. কিছু হলেই অভিযোগ করতে ছোটেন কি? ৭. পৃথিবীর সব মানুষের ব্যাপারে তিক্ত অনুভূতি আছে কি? ৮. নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ নেই? ৯. গড়িমসি করার অভ্যাস ছাড়তে পারছেন না? মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগত সমস্যা দ্বারা আক্রান্ত। যেগুলো আগেই প্রশ্ন আকারে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যেই একটা বড় সমস্যা লুকিয়ে আছে, তা হলোÑ সামনে সমস্যা বা ঝামেলা থাকলেও সেটা কাটিয়ে ওঠার কোন চেষ্টা না করা। আর এই ভুলের ফলাফল হয় এই রকম, সমস্যার মুখোমুখি আমাকে হতেই হবে সেটা একটু আগে অথবা একটু পরে। মনে রাখবেন, আপনার সমস্যার কারণে পৃথিবী কিন্তু থেমে থাকবে না। আপনার সমস্যা যতই বড় হোক না কেন। সবসময়ই ‘কিন্তু’ কথাটি এসে যায়। তবে আমি এ কথাও বলছি না যে, আপনার সমস্যা সমাধান কোন ব্যাপারই না। তবে এটা নিশ্চিত যে, আপনাকে চেষ্টা করতে হবে অন্যভাবে, বেছে নিতে হবে অন্য কোন রাস্তা। অর্থাৎ আপনার চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। সমস্যায় পড়লে আপনি অনুভব করেন আপনার নিজের অসহায়ত্ব, নিজের সীমাবদ্ধতা। কারণ আপনি যদি জানতেন যে কিভাবে আপনার সমস্যা দূর করতে হবে, তাহলে আপনি নিজেই তা করে ফেলতে পারতেন। অর্থাৎ আপনি স্বীকার করছেন যে আপনার সমস্যা আপনি নিজে সমাধান করতে অপারগ। বিষয়টি আপনার কাছে অবশ্যই জটিল । তবে তার মানে এটা নয় যে আপনার পক্ষে সমস্যার সমাধান করা পুরোপুরি অসম্ভব । আপনাকে আরও বেশি চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সমস্যা সমাধান সম্পর্কে আইনস্টাইনের বক্তব্যটি অসাধারন, ‘ডব পধহহড়ঃ ংড়ষাব ড়ঁৎ ঢ়ৎড়নষবসং রিঃয ঃযব ংধসব ঃযরহশরহম বি ঁংবফ যিবহ বি পৎবধঃবফ ঃযবস.’অর্থাৎ যে চিন্তা করে আমরা সমস্যা তৈরি করে ফেলেছি, সেই একই চিন্তা ধরে রেখে এর সমাধান করা যাবে না। আপনার সমস্যার সমাধান করতে হবে আপনাকেই। কেননা কিছুই না করার চাইতে কিছু করাটাই শ্রেয়, তাই নয় কি? বেশিরভাগ মানুষই এ অবস্থায় অসহায় এবং ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। এবং আপনার প্রতি অনুরোধ রইল, নিজেকে এই বেশিরভাগ মানুষের কাতারে ফেলবেন না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আপনি অবশ্যই পারবেন। আপনার অবস্থান হোক আপনার সমস্যার উর্ধে। এখানে একটু আত্মবিশ্বাসের কথায় আসি, সাধারণত বলা চলে, সমস্যা সমাধানের খাতিরে আত্মবিশ্বাস অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আপনার দৃঢ় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে পারে আপনার সমস্যা সমাধানের প্রখরতা। তেমনি আবার দুর্বল আত্মবিশ্বাসের অভাবে আপনার পুরো পরিশ্রমটাই প- শ্রমে হয়ে যেতে পারে ম্লান। তবে সবকিছুই বেশি ভাল না, বলা যায় অতিমাত্রার আত্মবিশ্বাস আপনার ব্যক্তিত্ব বা আপনার চিন্তা চেতনার প্রখরতাকে না বাড়িয়ে বরং অপরের মনে জন্ম দিতে পারে আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবের, যেটা আপনি না চাইলেও হবে। সাধারণভাবে বলতে গেলে উদাসীনতা বলতে কোন কিছুতে কাউকে পরোয়া না করে করে যাওয়াকে বোঝানো হয়। তবে ভাল-খারাপ কোন কিছুকে গুরুত্ব না দেয়াও উদাসীনতার অন্তর্ভুক্ত। এই উদাসীনতার ব্যাপারগুলো সংক্রামক হারে ছড়িয়ে পড়ে, হতে পারে আপনার ব্যবসার ভবিষ্যত, সংসার, চাকরিজীবন, প্রেম ভালবাসা সংক্রান্ত এসব। তবে এসব নিয়ে আপনি যদি চিন্তা না করেন, তবে কী করে সেখান থেকে সমাধান আশা করবেন? আপনার সামনের দিকে এগিয়ে প্রধান ভিত্তি হলো এসব সমস্যার সমাধান করা। সেই সমস্যা ভেদ করে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সমস্যা সমাধান নিয়ে হতাশার বালাই ধরতে গেলে সবারই একটু একটু আছে। ওই যে, আগে বলেছিলাম হাল ছেড়ে দেয়া, মূলত আপনার সম্ভাবনার রাস্তা একেবারেই বন্ধ করে দিতে পারে এই নাম না জানা প্রতিষেধকহীন রোগটি। হ্যাঁ, হতাশা যে কোন কিছু ধ্বংস করে দিতে পারে, সে ক্ষমতা তার আছে। তবে এখানে আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে আশার নামক ভেলায় চেপে। আপনার হাতে একটাই উপায়, সমস্যার সমাধানে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। আপনার সমস্যা আপনা আপনি যাবে না, এটিকে সরাতে হবে, হ্যাঁ, আপনাকেই। আরেকটি কথা, সমস্যা নিয়ে শুধু শুধু অভিযোগ করে আপনি হয়ত সহানুভূতি পেতে পারেন, কিন্তু এটির বিন্দুমাত্র সমাধান পাবেন না। আপনার অভিযোগের পালা শেষ হলে আবারও আপনাকেই এটির মুখোমুখি হতে হবে।
×