ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নান্দনিকতার ছোঁয়ায় অন্দরের সাজ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৭ জুলাই ২০১৭

নান্দনিকতার ছোঁয়ায় অন্দরের সাজ

মাছেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে গাছের ছায়ায় স্বচ্ছ পানিতে। সামনে যেতেই ভয় পেয়ে পাথরের আড়াল থেকেই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গাছের ছায়ায় পারে ছোট একটা ডিঙ্গি নৌকা। রাতে খোলা আকাশের নিচে সবুজ ঘাসের গালিচায় শুয়ে আকাশের তারা গোনা কিংবা জ্যোৎস্না রাতে ঘর জুড়ে চাদের আলোর খেলা। সকালে সূর্যের মিষ্টি আলোর স্পর্শে ঘুম থেকে জেগে ওঠা। ইট পাথরের এই জঙ্গলে কথাগুলা খুব অবাস্তব মনে হতেই পারে। আর ব্যস্ত এই জীবনে প্রকৃতির কাছে যাওয়ার সুযোগটা খুব কম। কিন্তু প্রকৃতি থেকে একটুখানি সবুজ এনে যদি আপনার ছোট নীড়ে সাজিয়ে দেওয়া যায় তাহলে কিন্তু খুব একটা মন্দ হয় না। আসুন জেনে আসি এরকমই নান্দনিক একটি বিষয়কে। ‘ওহঃবৎরড়ৎ উবংরমহ’ ‘অন্দরের সজ্জা’ কিংবা ‘অভ্যন্তরীণ সাজ’। গৃহের অভ্যন্তরের প্রতিটি স্থানকে সুন্দর করে পরিপূর্ণ ব্যবহার করাকেই মূলত অন্দর সজ্জা বলা হয়। একজন মানুষ ব্যক্তি হিসেবে কেমন, তিনি কি পছন্দ করেন সব কিছুই তার গৃহ সজ্জার মধ্যে ফুটে উঠে। যদিও ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলতে অনেকেই নিজের ঘরটাকে কিংবা ঘরের আসবাবপত্রকে গুছিয়ে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাকে বুঝে থাকেন। কিন্তু এটা আসলে শুধু অন্দরের সজ্জা নয় বরং আরও ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, পরিবারের গৃহিণীরা কম বেশি নিজেদের মতো করে ঘর সাজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। কোথায় কোন আসবাবপত্র বসবে কিংবা ঘরের কোন দেয়াল কী রং করানো হবে সেটা গৃহিণীরাই ঠিক করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত শপিং মল থেকে জিনিস কিনে ঘরের বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে দিয়েই কাজ শেষ করে ফেলেন। সেটা কখনও ভাল লাগে কখনও বা ঘরের সঙ্গে একদমই মানানসই হয় না। এটাকে আসলে ইন্টেরিয়র ডিজাইন না বলে ডেকোরেশন বলাই ভাল। আবার কখনও দেখা যায় বাইরে প্রাকৃতিক আলোর প্রাচুর্য কিন্তু আপনার ঘরটাতে একবারেই আলো প্রবেশ করতে পারছে না। কিংবা খুব বেশি সবুজের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করছে অথচ প্রকৃতি থেকে সবুজ ব্যাপারটাই হাওয়া!!! এই সবকিছু মাথায় রেখেই মূলত ইন্টেরিয়র ডিজাইনের আবির্ভাব। ইন্টেরিয়র ডিজাইন মূলত হলিস্টিক ব্যাপার। আপনার ঘরের দরজাটা কেমন, কোথায় বা কোন ধরনের নকশা করলে সুন্দর লাগবে, জানালাটা কোথায় থাকলে প্রাকৃতিক আলোর সঠিক ব্যবহার হবে অথবা ঘরের বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হবে না সেটা খুঁজে বের করে আপনার ঘরটাকে নান্দনিক রূপে ফুটিয়ে তোলাই মূলত ইন্টেরিয়র ডিজাইনের উদ্দেশ্য। অনেকে মনে করে থাকেন যে অল্প জায়গা হয়ত ডিজাইন করার জন্য উপযুক্ত না কিংবা অল্প জায়গায় ডিজাইন করলে সেটা ভাল লাগবে না। আসলে ধারণাটা ঠিক নয়, কারণ আপনার ঘরের চারটি দেয়ালই ডিজাইনারের কাছে ছবি আকার ক্যানভাস। ক্যানভাস যত ছোটই হোক না কেন শিল্পী তার শিল্প সত্তাটাকে সেখানে ঠিকই ফুটিয়ে তোলেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে কেন পেশাদার ডিজাইনারের শরণাপন্ন হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ- প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নির্মিত স্থানকে সজ্জিত করতে আমাদের প্রয়োজন পড়ে হরেক পদের টাইলস, মার্বেল, ওয়ালপেপার, সিলিং প্যানেলিং, পাথর, কাঠ, গ্লাস ও মেটাল ইত্যাদি। এই ম্যাটেরিয়াল সিলেকশনে গিয়েই একজন মানুষ মূলত একজন পেশাদার ডিজাইনারের শরণাপন্ন হন। তার যৌক্তিক কারণও আছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তির রুচিবোধ ভুল আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে বেশ কিছু ভুল সিদ্ধান্তে অর্থের অনিষ্ট সাধন হয়। কেননা কোন ম্যাটেরিয়ালের ব্যবহার কোথায় হবে সেটা জানা সম্ভব তাদের পক্ষে যাদের কেবল টেকনিক্যাল বিষয়ে জ্ঞান আছে এবং সেই বিষয়ে দক্ষ। ইন্টেরিয়র ডিজাইনের বেশিরভাগ সময় কিন্তু বিল্ডিংইয়ের ডিজাইন এরপর আর্কিটেকচার সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে এদিক সেদিক করতে হয়। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় দরজা জানালা বা দেয়ালকে নতুন ভাবে গড়ে নিতে হয়।আর এ ক্ষেত্রে বিল্ডিংটি যেন কোনভাবেই ঝুকির সম্মুখীন না হয় সেটি বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে। সুতরাং এ বিষয় সংশ্লিষ্ট কাজে একাডেমিক জ্ঞান না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
×