ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী কে

প্রকাশিত: ০৭:৫২, ১২ জুলাই ২০১৭

গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী কে

গত ১৪ জুন লন্ডনের ল্যাকাস্টার ‘ওয়েস্ট এস্টেট’-এর ২৪ তলা এ্যাপার্টমেন্ট ভবন গ্রেনফেল টাওয়ারে এক ভয়াবহ অগ্নিকা-ে কমপক্ষে ৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। ভবনে প্রায় ৬শ’ লোক ছিল। প্রায় আড়াইশ’ দমকল কর্মী আগুন নিভানোর চেষ্টা চালায়। তারপরও ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আগুন জ্বলছিল। যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে বিত্তশালীদের অন্যতম একটি এলাকায় এমন ভয়াবহ ট্র্যাজেডি কিভাবে ঘটতে পারল সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। অগ্নিকা- থেকে অনেক মর্মন্তুদ কাহিনী বেরিয়ে এসেছে। সন্তানের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে এক মা তাকে এপার্টমেন্ট থেকে বাইরে ছুঁড়ে ফেলে। রাস্তায় থাকা এক লোক বাচ্চাটিকে ধরতে গিয়ে নিজের হাত ভেঙ্গে যায়। গ্রেনফেল টাওয়ার ব্রিটেনের বর্তমান সামাজিক ব্যাধিগুলোর বিষাদের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সেই ব্যাধিগুলো হচ্ছে রাজনৈতিক শ্রেণীর জনবিচ্ছিন্নতা, সরকারের ৭ বছর স্থায়ী ব্যয়সংকোচ ব্যবস্থা, ক্রমবর্ধমান আর্থ-সামাজিক বৈষম্য এবং জীবনযাত্রার মানের দ্রুত অবনতি। গ্রেনফেল টাওয়ার যে এলাকায় অবস্থিত সেই কেনসিংটন এলাকায় ধনী গরিবের বৈষম্য বিশেষভাবে দৃশ্যমান। সেখানে বাড়ির গড় মূল্য যুক্তরাজ্যে গড় বার্ষিক আয়ের সাড়ে ৩৮ গুণ। বলাবাহুল্য গ্রেনফেলের বাসিন্দাদের বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের লোক। তথ্য প্রমাণ থেকে বেরিয়ে এসেছে যে গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডি রোধ করা যেতে পারত যদি কর্তৃপক্ষ ও নিয়ন্ত্রকদের গাফিলতি না থাকত। ভবনটি সম্প্রতি পলিইথাইলিন কোর লাগানো এলুমিনিয়াম ব্যবহার করে সংস্কার করা হয়েছিল। অথচ মাত্র ৬৩০০ ডলার খরচ করলেই সেই পলিইথাইলিন কোর যুক্ত এলুমিনিয়ায়কে অগ্নিপ্রতিরোধক করা যেতে পারত। ভবনটিতে পানি ছিটানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না। নিয়ম আছে যে ২০০৭ সালের পর নির্মিত হাইরাইজ ভবনগুলোতেই কেবল এই ব্যবস্থা থাকতে হবে। ফায়ার-সেফটি নোটিসগুলোতে গ্রেনফেল টাওয়ারের বাসিন্দাদের আগুন লাগলে সেখানেই থাকতে বলা হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ ভবন দেখাশোনার দায়িত্বে নিয়োজিত কেনসিংটন এ্যান্ড চেলসি টেনেন্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন এবং নগর পরিষদ উভয়েই তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে। গত বছর একটা ব্লগ পেস্টে এখনও বলা হয় যে শুধুমাত্র বিপর্যয়কর কোন ঘটনাই তাদের নজর কাড়তে পারে। এতদিন এই ভবনের মানুষগুলোর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার প্রতি কর্ণপাত করা হয়নি, কোন প্রতিকারমূলক ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি।’ ১৪ জুনের ট্র্যাজেডির পর মানুষের ক্রোধ এখন স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ওপর গিয়ে পড়েছে। এ ব্যাপরে বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে তেরেসা মে’র রক্ষণশীল দল ও তার সরকারকে। কারণ জমির মালিকদের অধিকতর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা সংবলিত নিয়মকানুনের বিরুদ্ধে তাঁর রক্ষণশীল দল বার বার ভোট দিয়েছে। আর তাঁর সরকার নাকি এপার্টমেন্ট ভবনের অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পর্যালোচনা বিলম্বিত করেছে। হতাহতদের প্রতি সংবেদনশীলতার অভাবের জন্য স্বয়ং তেরেসা মে তীব্ররূপে সমালোচিত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডির পটভূমিতে রয়েছে তীব্র আবাসন সঙ্কট। যদিও সরকার বলছে যে এই এলাকার গৃহহারা প্রত্যেক মানুষকে বাড়ি দেয়া হবে তথাপি বাস্তব চিত্র হচ্ছে সেটা হবে অসম্ভব। কারণ গৃহহারা সকল মানুষকে একটা করে বাড়ি দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সামাজিক অবসান কেনসিংটনে নেই। গ্রেনফেল টাওয়ার ট্র্যাজেডি এমনিতেই সঙ্কটগ্রস্ত তেরেসা মে’র সরকার কে যে নতুন সঙ্কটে ফেলবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×