ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ ও বিদ্রোহে জ্বলছে ইরাক

প্রকাশিত: ০৭:৫১, ১২ জুলাই ২০১৭

যুদ্ধ ও বিদ্রোহে জ্বলছে ইরাক

গত বছরের আগস্ট মাসে ইরাকের দক্ষিণ মসুলের সমভূমি এলাকা থেকে পিছু হটার সময় আইসিস জঙ্গীরা এ অঞ্চলের পরাজিত বাহিনীগুলি যা করে থাকে ঠিক তাই করেছিল। তারা পোড়ামাটির কৌশল অবলম্বন করেছিল। ১৯৯১ সালে কুয়েত থেকে হটে যাওয়ার সময় সাদ্দামের সৈন্যরাও একই কাজ করেছিল। তারা চলে যাওয়ার পথে প্রায় ৭শ’ তেলকূপ জ্বালিয়ে দিয়েছিল। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার পর ইরাকী যোদ্ধারা বসরার বাইরে এবং এক বছর পর কিরকুকের তেলখনিগুলি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। তেলকূপ জ্বালিয়ে দিলে কয়েকটি উদ্দেশ্য পূরণ হয়। যেমন এর কালো ধোঁয়ায় আকাশ এমনভাবে ছেয়ে যায় যে আক্রমণকারী বিমানের পক্ষে লক্ষ্যবস্তু ঠাওর করা কঠিন হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত বিজয়ী শক্তি তেল সম্পদ করায়ত্ত করা থেকে বঞ্চিত হয়। আইসিস মসুল থেকে হটে যাওয়ার সময় যেসব তেলকূপ জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার অনেকগুলো এখনও জ্বলছে। ফরাসী ফটোসাংবাদিক এডুয়ার্ড এলিয়াস এ বছরের জানুয়ারি কাইয়ারাহয় গিয়ে দেখতে পান যে অগ্নিনির্বাপক দল মাসের পর মাস ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। এরা আসলে দমকল কর্মী নয়। বরং ইরাক সরকারের মালিকানাধীন নর্থ অয়েল কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার। তেলকূপের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা চাট্টিখানি কথা নয়। মাসের পর মাস ধরে তারা যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তাতেই বুঝা যায় কাজটা কত কঠিন। কুয়েতে মার্কিন তেলকূপের অগ্নিনির্বাপক দল ডিনামাইট ফাটিয়ে আগুন নিভিয়ে ছিল। ডিনামাইটের বিস্ফোরণে অকুস্থলে অক্সিজেন শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তাতেই আগুন নিভে যায়। কারণ অক্সিজেন ছাড়া আগুন জ্বলতে পারে না। কিন্তু ইরাকে এ পদ্ধতি প্রয়োগে সমস্যা হচ্ছে। তাই কাজ এগোচ্ছে ধীরগতিতে। প্রথমে তাপমাত্রা কমানোর জন্য আগুনের লেলিহান শিখার ওপর হোসপাইপ দিয়ে পানি ফেলা হয়। এটা না করে উপায় নেই। কারণ তাপমাত্রা ১ হাজার সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে যে তাপমাত্রায় প্লাস্টিকের হেলমেট গলে যায়। অগ্নিনির্বাপক দল এরপর তিন পার্শ্ববিশিষ্ট বহনযোগ্য খুপরির পিছন পিছন এগোয়। আগুণের তাপ বাড়া কমার ওপর নির্ভর করে কখনও তারা এগিয়ে যায় আবার কখনও পিছিয়ে আসে। সবচেয়ে জটিল কাজটা করা হয় এক্সকাভেটর থেকে। সেটা চালায় দুজন। কূপের মুখে ক্যাপ বসানোর চেষ্টা করার সময় একজন উচ্চৈঃস্বরে অপরজনকে যা করতে হবে করতে বলে। নরকের আগুনের তাপ এত তীব্র তারা দু-তিন মিনিটের বেশি সেখানে টিকতে পারে না। সরে আসতে বাধ্য হয়। তখন নতুন করে আবার গোটা প্রক্রিয়াটা শুরু করতে হয়। ধোঁয়ায় সবকিছু কালো হয়ে যায়। আশপাশের মাঠে চারণরত মেষের পশম থেকে শুরু করে নিকটবর্তী উদ্বাস্তু শিবিরের ভিতরের সবকিছু। ওখানকার লোকজনের ফুসফুসে টার বা আলকাতরার অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। ইরাকের তেলে প্রচুর সালফার আছে। এক শতাব্দী আগে তেল সন্ধানীর দল এখানে আসে। তারা কিরকুকের বাইরে পাথুরে ময়দানের এক জায়গা থেকে সন্ধান কাজ শুরু করে সেখানে কমপক্ষে আড়াই হাজার বছর ধরে আগুন জ্বলছিল। কথিত আছে যে রাজা নেবুচাদনেজার সোনার মূর্তি পূজা করার জন্য সাদরাচ, মেশহাচ ও আবেদনেগোকে এই প্রাচীন চিতার আগুনে নিক্ষেপ করেছিলেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×