ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়তি বাস ভাড়া আদায়ের অভিযোগ;###;এখনও বাড়ি ফেরার চাপ টার্মিনালে

গ্রাম ছেড়ে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০১:২৫, ২৯ জুন ২০১৭

গ্রাম ছেড়ে কর্মস্থলমুখী মানুষের ঢল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঈদের ছুটি শেষ। গ্রাম ছেড়ে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন মানুষ। কিন্তু বৃহস্পতিবার রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালে গিয়ে কিছুটা ভিন্ন চিত্রও লক্ষ করা গেছে। এখন বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ বেশি। যানজট কিংবা চাকরীর প্রয়োজনে যারা পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননি তারা এখন যাচ্ছেন। ছুটিও পেয়েছেন অনেক বেশি। পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কর্মস্থলে ফেরা মানুষের চাপ থাকলেও এখনও বাড়ি যাচ্ছেন অনেকেই। কোন বাস খালি যাচ্ছে না। তেমনি কোন ট্রেনে আসন খুব একটা খালি নেই। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রী সন্তোষজনক। আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ আরো বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তারা। বৃহস্পতিবার ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরা মানুষের সবচেয়ে বেশি ভীড় দেখা গেছে কমলাপুরে। যারা বাসে এসেছে তাদের অনেকেই বাড়তি ভাড়া নেয়া ও টিকেট বিড়ম্বনার অভিযোগ করেছেন। ছুটি শেষে বুধবার ভোর থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করে মানুষ। বৃহস্পতিবার সকালে ঈদ ফেরত মানুষের মিছিল আরো বড় হয়েছে। মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ আর ভিড়-ভাট্টা না থাকায় যানজটহীন নগরীতে স্বস্তিতেই পা রাখছে সবাই। অল্প সময়ের মধ্যেই আসতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন অনেকে। মহাখালী বাস টার্মিনালে কিশোরগজ্ঞ থেকে আসা যাত্রী হাসিফ জানালেন, সড়কে কোন ভোগান্তি নেই। একেবারে নির্ভেজাল ভাবেই আসতে পেরেছি। তবে প্রিয়জনদেও ছেড়ে আসার কষ্টা তো আছেই। তিনি জানান, টিকেট প্রতি ৫০টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। ময়মনসিংহ থেকে সৌখিন পরিবহনে আসা যাত্রী আব্দুল্লাহ জানালেন, জনপ্রতি ৩০০টাকা করে নেয়া হয়। একই বাসে বাড়ি যান তিনি। ২৪ তারিখ বাড়ি যেতেও তাকে সম পরিমাণ ভাড়া গুনতে হয়েছে। এ ব্যাপারে কাউন্টার মাস্টার কোন কথা বলতে রাজী হননি। তবে এই পরিবহনের সবকটি বাসে যাত্রীদের উদ্দেশ্যে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ঝুলানো দেখা গেছে। এতে লেখা রয়েছে, বাড়তি বাড়া বা দাঁড়িয়ে যাত্রী পরিবহন করা হলে উল্লেখিত নম্বরে ফোন করে অভিযোগ দিন। আদনান নামের আরেক যাত্রী বলেন, মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহের দূরত্ব সর্বোচ্চ ১২২ কিলোমিটার। অথচ এই দূরত্বে বাস ভাড়া আসে ২০৭ টাকা। যদিও মহাখালী থেকে ময়মনসিংহ টার্মিনালের দূরত্ব ১১০ কিলোমিটারের বেশি নয়। কারণ ঢাকা-ময়মনসিংহের জিরো কিলোমিটার থেকে দূরত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। তবুও ঢাকা-ময়মনসিংহগামী সবকটি বাস যাত্রী প্রতি নিয়মিত আদায় করছে ২২০টাকা। ঈদ উৎসবে যা ৩০০ কোটা অনেক সময় ছাড়িয়ে যায়। প্রকৃতঅর্থে এই রুটে ১৮০টাকার বেশি বাস ভাড়ার কথা নয়। নেত্রকোনা থেকে শাহজালাল পরিবহনে আসা যাত্রী বিকাশ জানালেন, ২৫০টাকা ভাড়ার স্থলে ৩০০ টাকা নেয়া হয়েছে। যাত্রীদের প্রতিবাদ করার কোন উপায় নেই। কারণ যাত্রী বেশি হওয়ায় কাউন্টার থেকে যা চাওয়া হয়েছে তাই দিতে বাধ্য হয়েছেন সবাই। পাবনা, সিলেট, সুনামগজ্ঞ, টাঙ্গাইল, ভৈরব, নরসিংদী, জামালপুর, শেরপুর, মদন, আটপাড়া, গৌরিপুর সহ মহাখালী টার্মিনালে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে যাত্রীরা বাড়তি বাস ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন। সকালে গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, হানিফ গোল্ডেন লাইনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী,কুষ্টিয়া ও রংপুর থেকে ঈদ ফেরত যাত্রীরা ঢাকায় নামছেন। আর রাজধানীতে গণ ও প্রাইভেট উভয় পরিবহনই কম থাকায় ঝক্কিহীনভাবেই গন্তব্যে পৌঁছান তারা। তবে আজ শুক্রবার ও শনিবার এ চিত্র একেবারেই বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা। সে সময় যাত্রী উপস্থিতি যেমন বেশি হবে, তেমনি বেড়ে যাবে যানবাহনের চাপ। আজকের স্বস্তি তাই কাল পরিণত হবে পারে বিড়ম্বনায়। নীলফামারী থেকে শাজাহান তপন ৮ ঘণ্টায় আলম এন্টারপ্রাইজের একটি বাসের করে সকাল সাড়ে ৭টায় নেমেছেন গাবতলীতে। তিনি বলেন, ঈদের আগের যাত্রা থেকে এখন অনেক আরাম ও স্বস্তিতে ঢাকায় ফিরেছি। বাস ও জেলা টার্মিনালগুলোতে যাত্রীদের উপস্থিতি ভালোই ছিল। ঠাকুরগাঁ থেকে রুবেল হোসেন ১২ ঘণ্টায় গাবতলী এসেছেন হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে। তিনি বলেন, কোনো ভোগান্তি হয়নি। সঠিক সময় ঢাকায় এসেছি। গাবতলী বাস টার্মিনালের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টার কর্মকর্তারা বলছেন, এখন চাপ কম থাকায় যাত্রীরা অনেকটা আরাম এবং স্বস্তিতে রাজধানীতে ফিরছেন। তবে শুক্রবার ও শনিবারে চিত্র থাকবে ভিন্ন। যাত্রী চাপ ও পরিবহন বেশি থাকবে বলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হতে পারে। মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, এখন বাড়ি ফেরা মানুষের ভীড় যথেষ্ট। ঈদের পরদিন থেকেই মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন যেমন, তেমনি আসছেনও। বাড়তি বাড়া নেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা নয়। এ ব্যাপারে সকল পরিবহন কোম্পানীকে সতর্ককরে দেয়া হয়েছে।
×