ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থবিল পাস

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৯ জুন ২০১৭

অর্থবিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ নতুন ভ্যাট আইন প্রত্যাহার, ব্যাংক আমানতের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক পুনর্নির্ধারণসহ বেশ কিছু শুল্ক প্রস্তাব পুনর্বিন্যাসের মধ্যদিয়ে বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থবিল ২০১৭ পাস হয়েছে। এ বাজেট পাসের সময় অর্থমন্ত্রী বহুল বিতর্কিত ভ্যাট আইন প্রত্যাহার করে নেন। সেই সঙ্গে ব্যাংক আমানতের এক লাখ টাকা পর্যন্ত শুল্ক মওকুফ করে ৫ লাখ টাকার ওপর আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক পুনর্বিন্যাস করেন। অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটকে আবারও তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট উল্লেখ করে বলেন, ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থকে তুচ্ছ করে দেশের বৃহত্তর কল্যাণে ত্যাগ স্বীকার না করে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর কোন দেশই উন্নত বিশ্বের কাতারে শামিল হতে পারেনি। দেশকে উন্নত করতে হলে আমাদেরও একইভাবে ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির উর্ধে উঠে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে আমরা একটি সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণে সফল হবই হব। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থবিল উত্থাপন করলে তার বিরোধিতা এবং বিলের ওপর সংশোধনী প্রস্তাব করেন বিরোধী দলের কয়েক সংসদ সদস্য। অবশ্য কণ্ঠভোটে তাদের প্রস্তাব ও সংশোধনীগুলো নাকচ হয়ে যায়। তবে সরকারী দলের দুই হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার ও মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীনের আনীত কয়েকটি সংশোধনী এবং জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের দুটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী। পরে সংশোধিত আকারে অর্থ বিলটি পাস হয়। যেসব খাত থেকে অর্থমন্ত্রী শুল্ক প্রত্যাহার ও পুনর্বিন্যাস করলেন অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটের শুল্ক প্রত্যাহার ও পুনর্বিন্যাস প্রসঙ্গে বলেন, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে একটি সমাজকল্যাণমূলক কার্যক্রম হিসেবে আমরা বিবেচনা করব এবং ধ্যান অথবা যোগ (মেডিটেশন)-এর ওপর আগামী ২ বছরে কোন ভ্যাট আরোপ হবে না। কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং তার যন্ত্রাংশ এখন দেশে তৈরি হচ্ছে। এগুলোকে মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রজ্ঞাপনে অন্তর্ভুক্ত করে তাদেরকে মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হবে। শিপ ব্রেকার্স এ্যান্ড রিসাইকল এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের বিষয়ে বর্তমানে বলবৎ প্রজ্ঞাপনই বহাল থাকবে। তবে মোটরসাইকেল শিল্পের ওপর স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে আরোপনীয় সমুদয় মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি প্রদানের প্রস্তাব করেন। এছাড়া মাইক্রোসফট বাংলাদেশ লিমিটেড অনেক সফটওয়্যার আমদানি করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রদান করে। এবং কতিপয় পণ্য বিনা আমদানি শুল্কে আমদানি করে। যেসব পণ্যে আমদানি শুল্ক নেই তার ওপর প্রস্তাবিত ভ্যাট অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর উৎপাদনের ওপর আরোপিত শুল্ক বা কর হার অবনমিত করে সংযোজনকারীদের ওপর প্রযোজ্য ৩০ শতাংশের স্থলে ২০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবার নির্মিত এলপিজি কন্টেনারের ওপর আমদানি পর্যায়ে কোন ভ্যাট আরোপ না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার এখনও ব্যাপকভাবে আমদানিনির্ভর। তাই স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে আমদানি পর্যায়ে লৌহনির্মিত এলপিজি কন্টেনারের ওপর ভ্যাট বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে আরও বলেন, মোটরসাইকেলের সব যন্ত্রপাতি উৎপাদনকে সাহায্য করার জন্য গত বছরের অর্থবিলে প্রগ্রেসিভ উৎপাদনকে কিছু কর/শুল্কের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এবারে তাদের অগ্রগতি লক্ষণীয় না হওয়ায় সেটি বাদ দেয়া হয়। তবে তারা জানিয়েছেন, অতিসত্বরই তারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করবেন এবং সেই বিবেচনায় এর ওপর বর্ধিত শুল্ক করাদি মওকুফ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, জাপান দূতাবাস এবং নিটোল নিলয় কোম্পানি আমাদের জানিয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে হোন্ডা এবং অন্যান্য কোম্পানি মোটরসাইকেল এবং মোটরগাড়ির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করবে। সেই বিবেচনায় এজন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ওপর আমদানি পর্যায়ে হ্রাসকৃত হারে শুল্ক-কর আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন। দেশে সোলার প্যানেল তৈরি হওয়ায় অধিকহারে সোলার প্যানেলের ওপর যে আমদানি শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছিল সেটি বাদ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল থাকবে। তবে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে গুঁড়া মসলা জাতীয় মরিচ, হলুদ, ধনিয়ার ট্যারিফ মূল্য বহাল রেখে ভ্যাটের হার নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভ্যাট প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যগণ এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে আমি মূসক আইনের পূর্ণ কার্যকারিতা পিছিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করছি। আগের ধারাবাহিকতায় কিছু সংশোধন করে ২০১২ সালের আইনই যেভাবে গত চার বছর ধরে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়িত হচ্ছে ঠিক তেমনিভাবে আমাদের বর্তমান সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ব্যাংক আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক তিন স্তরে আরোপ করা হয়েছে। এগুলো হলো- ১ লাখ টাকা পর্যন্ত শূন্য, এক লাখ এক টাকা থেকে থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫০ টাকা। পাঁচ লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫০০ টাকা, ১০ লাখ এক টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ২৫০০ টাকা, ১ কোটি এক টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১২০০০ টাকা এবং ৫ কোটি টাকার উর্ধে ২৫০০ টাকা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বাজেটের ওপর আলোচনা-সমালোচনা প্রসঙ্গে বলেন, বাজেট উপস্থাপনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সব দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় দু’ চারটি শুল্ক বা কর হারে বৃদ্ধির প্রস্তাবাবলীর ওপর। ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাবের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ছিল একটি বিতর্কের বিষয়। অনেক সংসদ সদস্য এবং গণমাধ্যম ভুলেই গিয়েছিল যে, এই শুল্কটি ২০০২ সাল থেকে দেয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বলেছেন, এই বাজেটটি একটি শ্রেষ্ঠ তামাশা। মূল্য সংযোজন কর নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। এই আইন এদেশে প্রবর্তিত হয় ১৯৯১ সালে। সেটা পুরোপুরি সংশোধন করে একটি খসড়া ২০০৮ সালেই প্রস্তুত হয়। আমরা এই আইন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, ডায়ালগ, বিতর্ক ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে ২০১২ সালে আইনটি পাস করি। তবে বলে দিই, এটি কার্যকর হবে ২০১৬ সালে। ২০১৬ সালে এর কার্যকারিতা আরও এক বছর পিছিয়ে দেয়া হলো। কিন্তু তাতেও মনে হয় করদাতাদের আমরা সন্তুষ্ট করতে পারিনি। তিনি বলেন, এবারের বাজেট ঘোষণার পর দেশের সর্বস্তরে এর পক্ষে-বিপক্ষে যেভাবে আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে তা আমার কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। আমাদের সরকার জনগণের সরকার। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর জনগণের মতামত সঠিক পথে চলার নির্দেশনা দেয়। বাজেটে প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমরা প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি ৭.৪ শতাংশ। এটি অর্জনের বিষয়ে কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। ২০১৫-১৬ সালে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.০৫ শতাংশ। এর বিপরীতে আমরা ৭.১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছিলাম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। এর বিপরীতে বিবিএস’র সাময়িক হিসাবে আমাদের প্রবৃদ্ধি এসেছে ৭.২৪ শতাংশ। তার মানে হচ্ছে, আমরা বিগত ২ বছর যাবৎ আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছি। এ ধারা সামনের দিনগুলোতে অব্যাহত থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমাদের প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তির অন্তর্ভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদানসমূহের সাম্প্রতিক ইতিবাচক পরিবর্তন আমার এই দাবির সপক্ষেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। খাত ভিত্তিক প্রবৃদ্ধি তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের এপ্রিলনাগাদ আমদানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১১.৭ শতাংশ এবং একই অর্থবছরের মে নাগাদ রফতানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩.৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল মাসে ব্যক্তিখাতে ঋণ প্রবাহের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬.২১ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৫.৫৯ শতাংশ। প্রবাস আয়প্রবাহ নিয়ে আমরা কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে ছিলাম। তবে প্রবাস আয় প্রবাহ সম্প্রতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের মে মাসে আমাদের প্রবাস আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৩৮ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরে একই সময়ে ৮.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। এ পর্যপ্ত প্রাপ্ত (মে ২০১৭) তথ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে মোট ৮ লাখ ৩৭ হাজার প্রবাস নিয়োগ হয়েছে, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬ লাখ ২২ হাজার। আশাকরি প্রবাস আয়কে ঘিরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির অনিশ্চয়তা অচিরেই দূর হবে। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি নির্দেশক অন্যান্য চলকগুলোর মধ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উৎপাদন সূচক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং ও মাইনিং খাতের উৎপাদন সূচক চলতি অর্থবছরে ডিসেম্বরনাগাদ ৭.৪১ শতাংশ ও ২.৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার ও হার ব্যবধান অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এতে ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বাড়বে। আবার চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে নীট সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩০.৭ শতাংশ। মূলত দীর্ঘদিন যাবৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকা, নীতি কৌশলগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা ও এগুলোর সুসমন্বিত প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অব্যাহত সরকারী উদ্যোগের সারণেই ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধির পথকে প্রশস্ত করেছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে এডিপি বাস্তায়ন হয়েছে ৬৪.৭২ শতাংশ, যা বিগত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৬১.৮৫ শতাংশ। এটি সরকারী খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, সহায়ক মুদ্রানীতির অনুসরণের কারণে দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রয়েছে। এটি টেকসই উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য একটি আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জিডিপির ৭.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জনে আমরা মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি জিডিপির ৩১.৯ শতাংশ। এসব বিষয় বিবেচনায়, আমার বিশ্বাস আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব। কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধির বিষয়ে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে না মর্মে অনেকেই মতপ্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ত্রৈমাসিক শ্রমজরিপ ২০১৫-১৬ প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ২০১৩ সালের ৪.৩ শতাংশ হতে ২০১৫-১৬ সালের শেষ প্রান্তিকে ৪.০ শতাংশে নেমে এসেছে, যা যে কোন বিচারে উল্লেখ করার মতো। কর্মসংস্থান সঞ্চারি প্রবৃদ্ধি না হলে বেকারত্বের হার কমা সম্ভব হতো না। বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধিকে সচল রাখার বিষয়ে আমরা বরাবরের মতো এ বাজেটে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছি। আমরা পর্যায়ক্রমে শিল্প স্থাপনের বাধাসমূহ দূরীকরণে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন, পিপিপির দক্ষ ও গতিশীল আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি, বেসরকারী বিনিয়োগ অর্থায়নে ফান্ড স্থাপন, বিদেশী বিনিয়োগে বাধা অপসারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ সব চলমান উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের উন্নয়ন আকাঙ্খা পূরণে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধিত হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার কমার কারণে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় সঞ্চয়পত্র হতে অধিক ঋণ গ্রহণ করতে হচ্ছে। ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে যা সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণের কারণে কোন পেনশনভোগী, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত কেউ যাতে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, অনন্তকালের জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্দিষ্ট থাকতে পারে না। সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ে আর মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমে। বিষয়টি তাই আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তবে, আমরা চাচ্ছি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। এজন্য আমরা এর একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য-ভা-ার তৈরি করব যেখানে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সঙ্গে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে। পাশাপাশি, পেনশন সুবিধা সর্বস্তরের জনগণের জন্য বিস্তৃত করতে চাই।
×