ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চুক্তির বিভিন্ন দিক ঠিক করা হয়েছে ॥ নসরুল

কাতার থেকে এলএনজি আমদানির চুক্তি করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৯ জুন ২০১৭

কাতার থেকে এলএনজি আমদানির চুক্তি করছে সরকার

রশিদ মামুন ॥ কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি আমদানিতে চুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে কাতারকে ঘিরে মধ্যপ্রাচ্য সঙ্কটের মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে এই চুক্তি করতে যাচ্ছে দেশটি। এই সঙ্কটে বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল। বাংলাদেশ এলএনজি আমদানির জন্য এখনও পর্যন্ত একমাত্র ক্ষেত্র হিসেবে কাতারের সঙ্গেই সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে। এলএনজি আমদানির চুক্তির বিষয়ে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি বলেন, আমরা শীঘ্রই চুক্তি করতে যাচ্ছি। চুক্তির বিভিন্ন দিক এর মধ্যে ঠিক করা হয়েছে। এখন কার কাছ থেকে কতটুকু নেয়া হবে তা নির্ধারণ হচ্ছে। সরকার ২০১০ সাল থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন থেকে এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ নিয়ে এর আগে কাতারের সঙ্গে একটি এমওইউ সই করে বাংলাদেশ। ওই এমওইউ অনুযায়ী প্রতিদিন কাতার সরকার প্রতিদিন বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করতে সম্মত হয়। যদিও টার্মিনাল নির্মাণে সময়ক্ষেপণের কারণে এতদিন প্রক্রিয়াটি ঝুলে ছিল। কাতার ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। যেহেতু এককভাবে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানির জন্য কাতারের সঙ্গে এমওইউ করেছিল তাই কোন কারণে কাতার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশের সঙ্গে এমওইউটি আর রক্ষা করা সম্ভব হতো না। অন্যদিকে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন বাজার থেকে এলএনজি আমদানির প্রক্রিয়া করা কঠিন হতো। যদিও এই চুক্তির ফলে এখন সেই শঙ্কা আর থাকছে না। মহেশখালীতে একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করছে এক্সিলারেট এনার্জি। ইতোমধ্যে এলএনজি টার্মিনালটি নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগামী বছর শেষ নাগাদ এই টার্মিনালটি এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত হবে। এলএনজিকে জাতীয় গ্রিডে যোগ করার জন্য মহেশখালী থেকে ৯৪ কিলোমিটার পাইপ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আনা হবে তবে পরবর্তীতে আরও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করে সরবরাহ বৃদ্ধি করা হবে। দেশে গ্যাসের মজুদ এবং ব্যবহারের হিসেব বিবেচনা করলে এলএনজি আমদানির কোন বিকল্প নেই। পেট্রোবাংলাই বলছে, ২০২০-এর পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে থাকবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্র পাওয়া না গেলে ২০৩০ নাগাদ দেশে সকল খনির মজুদ একেবারে শেষের পথে থাকবে। সরকার এখন কেবলমাত্র বিদ্যমান খনিগুলো থেকে গ্যাসের উৎপাদন বৃদ্ধি করে চলেছে। যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য বড় রকমের হুমকি। এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে দেশে এখন গ্যাসের বিক্রয়মূল্য প্রতি হাজার ঘনফুটের দুই দমশমিক ১৭ ডলার। এখন সমপরিমাণ এলএনজি আমদানি মূল্য ৮ মার্কিন ডলার। এই সময়ে দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করা দৈনিকের দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের সঙ্গে মিশিয়ে বিক্রি করলে রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জ, সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যয় এবং সকল রকমের কর অন্তর্ভুক্ত করলে দাম পড়বে ৪ দশমিক ৩৫ ডলার। আর এলএনজি পৃথকভাবে বিক্রি করতে চাইলে দাম পড়বে ২৩ দশমিক ১১ ডলার। তবে সকল কর রেয়াত করলে এলএনজির দর পড়বে ১০ দশমিক ৪০ ডলার আর মিশ্রিত গ্যাসের দাম পড়বে ৪ দশমিক ১৪ ডলার। অর্থাৎ এখনই মিশ্রিত গ্যাসের দাম সরাসরি দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যত বেশি এলএনজি আমদানি হবে গ্যাসের দামও ততই বৃদ্ধি পাবে।
×