ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটের সুন্দরবন, চন্দ্রমহল ও ষাটগম্বুজে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২৭ জুন ২০১৭

বাগেরহাটের সুন্দরবন, চন্দ্রমহল ও ষাটগম্বুজে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বাগেরহাটে সুন্দরবন, চন্দ্রমহল, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানহাজান আলী (রঃ) মাজারে দর্শনার্থী, পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভিড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, চন্দ্রমহল, ষাটগম্বুজ ও খানজাহান আলীর মাজার এলাকায়। ঈদের দিন থেকে এই ৪ট স্পটে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে সূত্রে জানা গেছে। ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠে সুন্দরবন। এ সময় হাজার হাজর দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় সামলাতে বনরক্ষীদের হিমশিম খেতে হয়। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরা মাতিয়ে তোলেন সুন্দরবন পর্যটন কেন্দ্র করমজলসহ সাগর উপকূল। সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে দেশী-বিদেশী পর্যটকের প্রচুর ভীড় লক্ষ্য করা যায়। সুন্দরবনের করমজলসহ কয়েকটি পর্যটন স্পটে ঈদের আগের দিন থেকে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। ঈদের দিন ও পরের দিন এই সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। মংলায় অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের মোটেলসহ সকল হোটেলে আসন পরিপূর্ন হয়ে যায়। বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধসহ পাস পারমিট নিয়ে দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে বিচরণ করতে হয়। সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, বানর, বিষধর সাপ, হিংস্র প্রাণীর দর্শনলাভের প্রত্যাশায় সুন্দরবনে ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাকৃতিক লীলাভূমি সুন্দরবন কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। সুন্দরবনের পর্যটন স্পট করমজলে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। ঈদের পরে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সুন্দরবনে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা দুর্লভ বন্য প্রাণীর দর্শন পেতে ইঞ্জিনচালিত নৌযান নিয়ে ছুটে আসে পর্যটন স্পট করমজলে । সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের কর্মকর্তা জানান, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের ছুটিতে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পর্যটকের আগমন ঘটে। এখানে হাজার হাজার দেশী-বিদেশী পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমনে আসেন। তবে পিতা-মাতার সাথে শিশুদের আগমন বেশি। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রন করতে বনরক্ষীদের হিমশিম খেতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। অপরদিকে ঐতিহাসিক তাজমহলের আদলে বাগেরহাটের প্রত্যন্তগ্রামে প্রায় অর্ধশত একর জায়গার ওপর নির্মিত চন্দ্রমহলেও এ সময়ে মানুষের উপচে পড়া ভীড় ছিল। এ চন্দ্রমহলে তত্ত্বাধায়ক মাহাবুব চাকলাদার জানান, এবার আবহাওয়া ভাল থাকায় চন্দ্রমহলে দর্শনার্থী সর্বস্তরের মানুষের সমাগম ঘটে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, এবার ঈদের ছুটিতে সার্বিক পরিবেশ ও আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। বন বিভাগ পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার আয়োজন করা হয়। ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানজাহান আলী মাজারে এবারের ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটে। এ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশের বহু সংখ্যক মানুষ ভ্রমনে আসেন। মাজারের দীঘিতে মিঠা পানির কুমির ছুয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন দর্শানার্থীরা। তবে বেশি আনন্দ করছেন পিতা-মাতার সাথে আসা শিশুরা। চাপাই নবাবগঞ্জ থেকে খানজাহান আলী মাজারে আসা কলেজ ছাত্রী ইয়াসমিন আকতার বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে এখানে এসে খুব আনন্দ পাচ্ছি, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কুষ্টিয়া থেকে স্বপরিবারে আসা হিরন বলেন, ‘মাজারের দিঘির কুমিরের মাথায় হাত দিয়ে খুব আনন্দ পেলাম। এর আগে একবার এসে কুমির দেখার সুযোগ হয়নি। এবার স্বপরিবারে বিনোদন স্পটগুলো ঘুরে অন্য রকম আনন্দ পাচ্ছি। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের যাদুঘরে রাখা বহু বছর আগের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে অনেকেই অবাক হন। সেখানে পটুয়াখালী থেকে আসা দর্শনার্থী এনামুল কবীর বলেন,‘ চাকুরী করার কারনে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু দেখতে পারি না। এবার ঈদের ছুটিতে এখানে এসে অনেক মজা করলাম। প্রায় ৬শ বছর আগে খানজাহানের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে খুব ভাল লাগল। বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাষ্টডিয়ান গোলাম ফেরদাউস জানান, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদে এবছর ঈদে দেশী-বিদেশী পর্যটকের আগমন আরও বেশী বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে হাজার হাজার পর্যটক ষাটগম্বুজ মসজিদ, যাদুঘর ও খানজাহান মাজার পরিদর্শন করছে।
×