ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দেশের শান্তি উন্নয়ন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য কামনায় বিশেষ মোনাজাত

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত: ১৭:৫১, ২৬ জুন ২০১৭

কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

মাজহার মান্না, কিশোরগঞ্জ ॥ দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় লাখো মুসল্লিদের অংশগ্রহণে ১৯০তম ঈদ-উল-ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় জামাত শুরুর ১৫, ৫ ও ১ মিনিট আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে নামাজ আরম্ভের ঘোষণা দেয়া হয়। গত বছরের ৭ জুলাই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ময়দানের পাশে চেকপোস্টে জঙ্গী হামলার ঘটনায় এবার বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থায় লাখো লাখো মুসল্লি এখানে নামাজ আদায় করেন। জামাতে ইমামতি করেন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ফরীদউদ্দিন মাসঊদ। এদিকে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদজামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মাঠের বাইরে-ভেতরে ও প্রবেশ পথে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। র্যা ব-পুলিশ, এপিবিএন, আনসার-ভিডিপি ছাড়াও এবার চার প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়। মাঠের ভেতর-বাহিরে পোশাক ও সাদা পোশাকে বিপুলপরিমাণ পুলিশ বাহিনীকে সহায়তা করে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক দল। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের ছাতা বা কোনো ধরণের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। মুসল্লিদের মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাসী করে মাঠে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। এবার বিশাল মাঠের চারস্তরের নিরাপত্তাসহ মাঠ ও আশপাশের এলাকার মোড়ে মোড়ে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা। গতিবিধি পর্যবেক্ষণে মাঠের ভেতর বসানো হয় উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র্যা ব সদস্যের কঠোর নিরাপত্তা ও নজরদারিতে শন্তিপূর্ণভাবে নামাজ শেষ হয়। পরে ইমাম দেশ ও মুসলিম উম্মাহর শান্তিু এবং সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন। এ সময় ইমাম মোনাজাতে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতাসহ মানবতার শান্তির জন্য বিশেষ দোয়া করেন। এবারও শোলাকিয়া মাঠ থেকে জামাত সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আইসহ কয়েকটি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল। এর আগে শান্তিপূর্ণভাবে জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান, পৌর মেয়র মাহমুদ পারভেজ, শোলাকিয়া মাঠের সদস্য সচিব ও সদরের ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মাসউদ প্রমুখ। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, বিভিন্ন রাজনীতিক দলের নেতা ও জেলার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন। অনেকেই জায়গা না পেয়ে পাশের রাস্তা ও খালি জায়গায় নামাজ পড়েন। এদিন শোলাকিয়া ঈদগাহ ও শহরকে সু-দৃশ্য তোরণ ও বিদ্যুৎ বাতির বর্ণিল আলোক সজ্জ্বায় সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। ঈদগাহে নামাজ আদায় করলে দোয়া কবুল হয় ও প্রচুর সওয়াব পাওয়া যায়-এ বিশ্বাস থেকেই কাকডাকা ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে দলবেধে শোলাকিয়ায় আসতে থাকে। মুসল্লি¬দের যাতায়াতের সুবিধার্থে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের চালু করে। ঈদের দিন বিভিন্ন সড়ক দিয়ে নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে শোলাকিয়ায় প্রবেশ করতে মুসল্লিদের বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে। মাঠের সুনাম ও নানা জনশ্রুতির কারণে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, গাজীপুর, মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, সিলেট, খাগড়াছড়ি, যশোর, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ দেশের দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন এ মাঠে নামাজ আদায় করতে। জামাতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মুসল্লিদের তৃষ্ণা লাঘবে দলমত নির্বিশেষে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী ও এলাকাবাসী মুসল্লিদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি, শরবত, খুরমা ও মিষ্টি দ্রব্য বিতরণ করেছেন। শহরের উপকন্ঠে নরসুন্দা নদের তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর অবস্থিত শোলাকিয়ায় প্রায় আড়াইশ’ বছর ধরে জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৮২৮ সালে প্রথম শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও একবার এ মাঠে ঈদুল ফিতরের জামাতে আদায়কারী মুসল্লিদের গণনা করে এক লাখ ২৫ হাজার (সোয়া লাখ) মুসল্লির উপস্থিতি পাওয়া যায়। তখন থেকে এ মাঠের নামাকরণ করা হয় সোয়ালাখিয়া মাঠ। কিন্তু; উচ্চারণ বিবর্তনের ফলে সোয়া লাখিয়া থেকে বর্তমানে মানুষের কাছে এ মাঠটি শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে।
×