ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদ আনন্দে মেতেছে সারদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ২৬ জুন ২০১৭

ঈদ আনন্দে মেতেছে সারদেশ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ ‘আতর-সুবাসে কাতর হ’ল গো পাথর-দিল/দিলে দিলে আজ বন্ধকী দেনা-নাই দলিল/কবুলিয়তের নাই বালাই।’ প্রাণে প্রাণে এমনই আবেগের বন্ধন নিয়ে ফের এসেছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সংযমের মহিমায় সিয়াম সাধনার পর যেন বাঁধভাঙা আনন্দের প্রাপ্তি। সাম্যের শিক্ষায় বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর পালন করছেন সোমবার (২৬ জুন)। ঈদ মোবারক। রবিবার সন্ধ্যায় ১৪৩৮ হিজরি সনের শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সোমবার ঈদ পালনের দিন নির্ধারিত হয় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায়। রবিবারের সূর্য ডোবার পরই শুরু হয়ে গেছে শাওয়াল মাস, ঈদের দিন। ঈদের আনন্দে মাতছে পুরো দেশ। পুরনো দুঃখ-ব্যথা ভুলে নতুন পোশাক পড়ে খুশির জোয়ার উঠছে প্রাণে প্রাণে। তবে নতুন পোশাকে শিশুদের ঈদ আনন্দটাই বেশি। রাজধানী এখন চিরচেনা যানজট কোলাহলের রূপ হারিয়ে অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পড়েছে। আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে রেল, সড়ক ও নৌপথে রাজধানীর অসংখ্য মানুষ গ্রামে ছুটে গেছেন। পথে পথে পোহাতে হয়েছে নানান ভোগান্তি। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে অন্যান্যবারের চেয়ে এবার ঈদ যাত্রা অনেক দুর্ভোগহীন হয়েছে। ঈদের দিন সকালে সারাদেশের মুসলমানরা ঈদগাহ ও মসজিদে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেছেন। সামর্থ্যবান মুসলমানেরা ফিতরার মাধ্যমে ঈদে গরীব-দুঃখীদের অর্থ ও নতুন বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেন। তবে কিছুদিন আগে পার্বত্যাঞ্চলে অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধসে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যুশোক কাটিয়ে ঈদে আনন্দ উদ্বেল হয়ে উঠতে পারবে না সেখানকার মানুষ। এরসঙ্গে রংপুরের পীরগঞ্জের বড়দরগায় ট্রাক উল্টে ১৭ জন পোশাক শ্রমিকের প্রাণহানির ঘটনাও গভীর বেদনায় স্পর্শ করেছে দেশবাসীকে। এবার ঈদে ৫ দিনের ছুটি পেয়েছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এজন্য শেষ অফিস গত ২২ জুন থেকেই শুরু হয়েছিল ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়। সেই থেকে সাক্ষাতে, মোবাইলে, এসএমএসে, ফেসবুকে, মেইলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিয়ম চলছে। শুভেচ্ছা বিনিময় চলবে ঈদের পুরো দিন। নতুন পোশাক পড়ে ঈদের দিন ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ ভুলে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেছে। বেড়াতে যাবেন একে অপরের বাড়ি, করাবেন মিষ্টিমুখ। ঈদের দিন সেমাই, পায়েস, মিষ্টান্ন, কোরমা, পোলাও, খিচুরিসহ নানান পদের মুখরোচক খাবার রান্না হচ্ছে ঘরে ঘরে। শিশু-কিশোররা নতুন পোশাক পড়ে সালামি আদায়ে তৎপর থাকবে ঈদের পুরো দিন। রাজধানীতে জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, কূটনীতিকসহ সকল স্তরের মানুষ অংশ নেন। গত বছর রমজানের শেষের দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁ ও ঈদের দিন দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে এবার ঈদকে সামনে রেখে দেশব্যাপী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আষাঢ় মাস হলেও দেশের উপর মৌসুমী বায়ু (বর্ষা) কম সক্রিয় থাকায় ঈদের দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টি হলেও এতে ঈদের আনন্দকে ম্লান করতে পারবে না বলেই মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আলাদা বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ও মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে রবিবার ঈদুল ফিতর পালিত হয়েছে। এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রবিবার বাংলাদেশের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঈদুল ফিতর পালন করা হয়েছে। ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণ কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। ঈদের দিন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, আধা-সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সড়কে শোভা পাচ্ছে আরবি ও বাংলায় ঈদ মোবারক লেখা পতাকা। চাঁদ দেখা কমিটির সভায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন, ধর্মসচিব মো. আব্দুল জলিল, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাকছুদুর রহমান পাটোয়ারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, স্পারসোর চেয়ারম্যান শাহ মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমাদ, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমেদ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব মাওলানা আবু রায়হান ও চকবাজার শাহী জামে মসজিদের খতীব মাওলানা শেখ নাঈম রেজওয়ান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×