ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদকে সামনে রেখে সরব রংপুরের বেনারসিপল্লী

তাঁতের খট খট শব্দে বেনারসি শাড়ি বানাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২৫ জুন ২০১৭

তাঁতের খট খট শব্দে বেনারসি শাড়ি বানাতে ব্যস্ত শ্রমিকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, রংপুর ॥ তাঁতের খট খট শব্দে দিনরাত চলছে শাড়ি বানানোর কাজ। নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে বেনারসিপল্লীর শ্রমিকরা। রাতদিন যেন একাকার হয়ে গেছে। ঈদের শাড়ির ব্যাপক চাহিদা হওয়ায় রংপুরের বেনারসিপল্লী এখন সরব। রংপুরের বেনারসিপল্লী আবার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে। বেনারসিকে ঘিরে সুদিনের স্বপ্ন দেখছেন এখানকার মালিক-শ্রমিকরা। রংপুর মহানগরের প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গঙ্গাচড়া উপজেলায় গড়ে উঠেছে বেনারসিপল্লী। এক সময় গজঘণ্টা ইউনিয়নের তালকু হাবু গ্রামের বেনারসিপল্লীর নাম ছিল দেশজুড়ে। ২০০৫ সালে প্রায় ১০০ তাঁতি ওই এলাকায় বেনারসিপল্লী গড়ে তোলে। এখানকার পণ্যের মান ছিল দেশের অন্যান্য স্থানের পণ্যের চেয়ে অনেক ভাল। বিপণন ও আর্থিক সমস্যার কারণে এক সময় মুখ থুবড়ে পড়ে এ শিল্প। আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায় বেশিরভাগ কারখানা। বেকার হয়ে পড়েন এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ৫০০ কারিগর। তাদের কথা চিন্তা করেই এই শিল্পকে পুনরোজ্জীবিত করতে সরকার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য সরকার ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এ টাকা দিয়ে ৪০টি তাঁত বসানো হয়েছে। একজন তাঁত মালিক মতিয়ার রহমান জানান, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা ও রুচির প্রতি নজর রেখে কারিগরদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এরপর তারাই অত্যাধুনিক বেনারসি শাড়ি ও অন্যান্য কাপড় তৈরি করছেন। তাতের খট খট শব্দে এখন মুখর হয়ে উঠছে বেনারসিপল্লীর এ শিল্প। তিনি আরও জানান, তাঁত শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ কাজ চলছে। তাঁত মালিকদের সুদমুক্ত ঋণ দেয়া হচ্ছে। ওই এলাকায় ৬৭টি পরিবারের মধ্যে সমন্বয় করে তাঁত স্থাপনের জন্য ৬৮০ বর্গফুট আয়তনের ৪০টি শেড নির্মাণ করার কাজ হয়েছে। সেগুলোতে চলছে বেনারসি শাড়ি তৈরির কাজ। এরপর সেখানেই থাকছে বেনারসি শাড়ির প্রদর্শনী কেন্দ্র। তাঁত মালিক রোস্তম আলী জানান, এক সময় তার নিজের ৩০টি তাঁত ছিল। পুঁজি সঙ্কট, কাঁচামাল এবং বাজার ব্যবস্থাপনার কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়। এখন তিনি নিঃস্ব। সরকার এ শিল্পের দিকে নজর দেয়ায় আবার শিল্পটি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এখন বেনারসি তৈরির কাজে মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো এলাকা। গঙ্গাচড়ার তালুক হাবু এলাকার রহমান উইভিং তাঁত শিল্পের মালিকের কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কারিগরদের তাঁত চালানোর খুটখাট শব্দ। তাদের এদিক-সেদিক তাকানোর যেন সময় নেই। ওই কারখানায় কথা হয়, কারিগর আবদুল মতিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে বেনারসি শাড়ির চাহিদা বেড়ে গেছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে আমাদের রাতদিন কাজ করতে হচ্ছে। এ কারখানার মালিক ফরিদা আখতার জানান, তার এখানে ৮টি তাঁত রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২৪ ঘণ্টাই চলছে কাজ। এক সপ্তাহে যেখানে ১৬টি শাড়ি তৈরি হতো সেখানে এখন ৩০টি শাড়ি তৈরি হচ্ছে। এসব শাড়ি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অভিজাত বিপণিবিতানে সরবরাহ করা হচ্ছে। একই এলাকার নিশাত বেনারসি ফ্যাক্টরির মালিক কুদ্দুস মিয়া জানান, এখানকার বেনারসিপল্লী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এতে করে এ অঞ্চলের বেকার লোকজনের বেকারত্ব দূর হবে। এ এলাকার নামও ছড়িয়ে পড়বে দেশ-বিদেশে। তার তাঁত রয়েছে ২০টি। কারিগর আছিয়া জানান, ভাই এখন কথা বলার সময় নেই। এখানে আমরা তৈরি করছি বুটি জামে বাহার, বেলবুটি, সাটান, নক্সি, ফুলকলিসহ বিভিন্ন প্রকারের শাড়ি। এখান থেকে দোকানি-মহাজনেরা পাইকারি দরে শাড়ি কিনে নগরীর অভিজাত প্রতিষ্ঠানে বেশি দামে বিক্রি করছে। প্রশিক্ষণার্থী লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের আমেনা, মোহসেনা, ফাতেমা এবং কবিতা বেগম জানান, বেনারসি শাড়িসহ অন্যান্য কাপড় তৈরির জন্য ৬০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা বানাতে পারছেন বেনারসি শাড়ি। এতে করে তাদের বেকারত্ব ও দারিদ্র্যতা ঘুচেছে। আনোয়ারা ও ফরিদা জানান, একেকজন কারিগরের একেকটি শাড়ি তৈরি করতে তিনদিন থেকে চারদিন সময় লেগে যায়। একটি শাড়ি তৈরি বাবদ তাদের দেয়া হয় এখন ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। তাদের বানানো ওই শাড়িই বাজারে বিক্রি হয় ২ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
×