ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ২৫ জুন ২০১৭

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের নাযাতের দশকও শেষ। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর এখন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর অত্যাসন্ন। ঈদ-উল-ফিতর মানে রোজা ভাঙ্গার উৎসব। একমাস ধরে সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে রোজাদার যে কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছে, আজ তা থেকে উত্তীর্ণের সময় ক্রমেই ঘনিয়ে এসেছে। চতুর্দিকে তাই আজ ঈদের আমেজ সুস্পষ্ট। মুসলিম সমাজ জীবনে ঈদ-উল-ফিতরের অবারিত আনন্দধারার তুলনা চলে না। কারণ, প্রথমত এ আনন্দ-উৎসবের আমেজ গরিবের পর্ণ কুটির হতে ধনীর বালাখানা পর্যন্ত সমানভাবে মুখরিত। শহর-নগর, গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র এর ঢেউ বি¯ৃÍত। দ্বিতীয়ত, এ আনন্দ অতি পবিত্র ও নির্মল। সহীহ হাদিস শরীফসমূহে বছরের যে পাঁচটি রাতকে অতি মর্যাদাপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এর মধ্যে ঈদ-উল-ফিতর পূর্ববর্তী রাত অন্যতম। হাদিস শরীফে এসেছে, রমজানের ইফতারের সময় প্রত্যেক দিন আল্লাহ সুবহানাল্লাহুতায়ালা এক হাজার জাহান্নামিকে নরকমুক্ত করেছেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য দোযখে যাওয়া অবধারিত ছিল। আর রমজান মাসের শেষদিন যখন আসে আল্লাহ সেদিন রমজানের প্রথম থেকে ওইদিন পর্যন্ত যত পাপীতাপীকে ক্ষমা করেছেন, তার সমসংখ্যক অপরাধীকে ক্ষমা করে দেন (সুবহানাল্লাহ...)। তাই দেখা যায়, নেককার মানুষরা শব-ই-কদরের ন্যায় ঈদপূর্ব রাতেও ইবাদতে মশগুল হন। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদিঃ) এক দীর্ঘ হাদিসে বর্ণনা করেন: যখন ঈদ-উল-ফিতরের রাতের আগমন হয়, ওই রাতকে পুরস্কার দানের রজনি হিসেবে অভিহিত করা হয়। যখন ঈদের সকাল নামে তখন আল্লাহ প্রতিটি দেশে ফেরেস্তা পাঠান। তারা পথের ধারে অবস্থান নেন এবং ডাকতে থাকেন। তাদের আহ্বান মানুষ ও জিন ব্যতীত সব মাখলুকই শুনতে পায়। তারা বলেন, ‘ওহে উম্মতে মুহাম্মদী (সঃ)! বের হয়ে এসো মর্যাদাবান প্রতিপালকের পানে। তিনি অধিক পরিমাণে দান করে থাকেন, মারাত্মক অপরাধও ক্ষমা করে দেন।’ বস্তুত ঈদ-উল-ফিতরের দিবস হচ্ছে পুরস্কারের দিন, আত্মোপলব্ধির দিন। সমাজ ও যুগের নানা অবক্ষয়ের ছোঁয়ায় ঈদের অনুষ্ঠানেও নানা অতিরঞ্জিত বিষয় ও বাড়াবাড়ি এসে পড়েছে। আমাদের এ বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে মহানবী (সঃ) এর প্রবর্তিত পবিত্র ঈদের শিক্ষা ও বরকত হতে আমরা বঞ্চিত না হই। আজকের লাগামহীন ঈদের আনন্দে আমাদের অনেকে ঈদের ওপর বর্ণিত ধর্মীয় গুরুত্ব ও মর্যাদার কথা বেমালুম ভুলে থাকেন। যার কারণে আমরা লক্ষ্য করছি, মুসলমানদের ঈদ ক্রমশ হয়ে পড়েছে নিষ্প্রাণ, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যহীন। বস্তুত রমজান যেমন সাধনার মাস; এতে সিয়াম, কিয়ামসহ কঠিন ইবাদত সমূহের মাঝামাঝি রয়েছে ইফতার-সেহরির আনন্দদায়ক মুহূর্তগুলো। তেমনি ঈদ আনন্দও কিছু বিধিনিষেধে পরিপূর্ণ যা অনিয়মতান্ত্রিকতাকে নিরুৎসাহিত করে এক সুশৃঙ্খল ও ধারাবাহিক দায়িত্ব-কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দেয়। ঈদের নামাজের প্রাক্কালে কিছু মুস্তাহাব কাজ করার বিধান রয়েছে। এর মধ্যে- ১. ঈদগাহে গমনের পূর্বে ফজরের পর কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ, ২.গোসল করা, ৩. মিসওয়াক করা, ৪. খুশবু ব্যবহার করা, ৫. উত্তম কাপড়চোপড় পরিধান করা ৬. ঈদের নামাজে গমনের পূর্বে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা ৭. প্রত্যূষে বিছানা ত্যাগ করা, ৮. সকাল সকাল ঈদগাহে উপস্থিত হওয়া, ৯. হেঁটে হেঁটে ঈদগাহ অভিমুখে গমন করা, ১০. চলতে পথে নিচুকণ্ঠে তাকবির (আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর ওয়ালিল্লাহিল হামদ্) বলে যাওয়া। ১১. এক পথে যাওয়া, ভিন্ন পথে আসা, ১২. সাজগোজ করা, ১৩. উন্মুক্ত আকাশের নিচে খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করা। ঈদের আনন্দে যেন আমরা ঈদের পালনীয় আহকামগুলো ভুলে না যাই, সেদিকে আগে থেকে সতর্ক থাকতে হবে। মাসব্যাপী এ কলামে আমরা রোজা, নামাজ ও যাকাতের বিভিন্ন বিধিবিধান নিয়ে আলোচনা করেছি। একইভাবে ইসলামে অন্যান্য আদব ও সৌন্দর্যগুলোও তুলে ধরেছি। আমাদের উদ্দেশ্য Ñএ মোবারক মাসে এ কলামের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিজ্ঞানসম্মত ও সময়োপযুক্ত আচরণগুলো হৃদয়ে স্পর্শ করে যায়। আল্লাহ আমাদের উদ্দেশ্য কবুল করুন!
×