ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহিষের মাংস গরুর বলে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৫ জুন ২০১৭

মহিষের মাংস গরুর বলে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর বাজারে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেষ মুহূর্তে গরুর মাংস ও মুরগি কিনতে ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। দুধ, চিনি, সেমাই ও পোলাওর চাল কিনতে অনেকেই ছুটছেন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও মুদি দোকানগুলোতে। কিনে আনছেন এসব পণ্য। মসলাজাতীয় পণ্যের কেনাকাটা বেড়েছে। চাহিদা বাড়ায় আরেক দফা দাম বেড়েছে গরুর মাংস ও মুরগির। এদিকে, মহিষ জবাই করার পরই তা গরুর মাংস হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। রাজধানীর কাপ্তানবাজার, কাওরানবাজার, মিরপুর সিটি কর্পোরেশন মার্কেট, মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটসহ ছোট-বড় সব বাজারে এখন মহিষের মাংস গরু হিসেবে উচ্চমূল্যে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ঈদ বাজার ধরতে শুক্রবার রাতে শত শত মহিষ কাটা হয়েছে। এ মাংস শনিবার সারাদিন বাজারগুলোতে বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, মাংস ব্যবসায়ীরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মহিষকে গরু হিসেবে বিক্রি করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাপ্তানবাজারের মাংস বিক্রেতা মাসুদ জানালেন, ঈদ সামনে রেখে মাংসের দাম বেড়ে গেছে। গরুর দাম বেশি হওয়ায় মাংসের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামে মাংস বিক্রি করা হলে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়বেন। তাই বাধ্য হয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মহিষ জবাইয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানালেন, এ বাজারে কোন মহিষ কাটা হয় না। তবে কাপ্তানবাজারের মাংস ক্রেতারা বলছেন, মাংসই বলে দিচ্ছে এটা মহিষের। তারপরও তারা স্বীকার করবে না। তিনি বলেন, মহিষের মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ নয়, তবে দাম কম। বাজার মনিটরিং কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব এসব মাংস চিহ্নিত করে তা কম দামে বিক্রি করার ব্যবস্থা করা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত দামের চেয়ে ৭৫ টাকা বেশি অর্থাৎ ৫৫০ টাকা দিয়ে গরুর মাংস সংগ্রহ করতে হচ্ছে ভোক্তাদের। খাসির মাংস মানভেদে ৬৫০-৮৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানী মাঝারি সাইজের মুরগির হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৮৫০ টাকায়। একটু বড় হলে তা হাজার টাকা দামে ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। দেশী মুরগির কোন দেখা মিলছে না বাজারগুলোতে। দু’-চারটি পাওয়া গেলেও উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এক জোড়া দেশী মোরগ বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ টাকায়। মুরগির দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের মুরগি ব্যবসায়ী হাবিব জানালেন, ঈদ সামনে। তাই ক্রেতা চাহিদা এখন সবচেয়ে বেশি। বাড়তি এই চাহিদা তৈরি হওয়ার কারণে ক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে মুরগি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, মাংসের পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে দুধ, সেমাই, চিনি এবং পোলাওর চালের। ইতোমধ্যে তরল দুধের দাম বেড়ে গেছে। বিভিন্ন বাজারে প্রতি লিটার মিল্ক ভিটা ও আড়ং দুধ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। এছাড়া গুঁড়া দুধের দামও কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়েই এসব পণ্য কিনছেন। মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের মুদি দোকানদার আসলাম জানালেন, সেমাই ছাড়া তো ঈদ-ই হয় না। তাই এবার বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও খোলা সেমাই দোকানে তোলা হয়েছে। ব্র্যান্ড সেমাইয়ের পাশাপাশি এবার খোলা সেমাইয়ের বিক্রি ভাল হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। তিনি বলেন, শুধু ঈদে আলাউদ্দিন সুইট মিটের সেই বিখ্যাত সেমাই বাজারে ছাড়া হয়। প্রতি প্যাকেট আলাউদ্দিন লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। সেমাইয়ের পাশাপাশি চিনি এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সুগন্ধি চালের চাহিদা বেড়েছে। এ বছর ভারত ও পাকিস্তান থেকে আসা কোহিনুর ও আলিশান ব্র্যান্ডের বাসমতি চাল প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কোহিনুর বাসমিত চাল ১৯৫-২০০ এবং আলিশান ব্র্যান্ডেরটি প্রতি কেজি ১৮০-১৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের কাছে এসব চালের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। পোলাওর চাল এরফান, চাষী এবং প্রাণ ব্র্যান্ডের আলাদা কদর রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। এসব ব্র্যান্ডের প্রতি কেজি পোলাওর চাল বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খোলা পোলাওর চাল ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে, নাড়ির টানে ইতোমধ্যে রাজধানী ফাঁকা হতে শুরু করেছে। এ কারণে কাঁচাবাজারে তেমন কোন ভিড় দেখা যায়নি। সবজির দামও কমে এসেছে। তবে কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে।
×