ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পণ্যবাহী যান ইচ্ছে মতো চলছে মহাসড়কে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৫ জুন ২০১৭

পণ্যবাহী যান ইচ্ছে মতো চলছে মহাসড়কে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ঈদের আগে ও পরের তিনদিন মহাসড়কে পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ। তবে কাঁচামাল, ওষুধ ও গার্মেন্টস পণ্য পরিবহন করা যাবে। নির্দেশ কার্যকর হয়নি। রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ফিটনেসবিহীন মালবাহী ট্রাক উল্টে অন্তত ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা ১৫। সিমেন্টবোঝাই করা এই ট্রাকটি ঢাকা থেকে লালমনিরহাট যাচ্ছিল। ভোর পাঁচটার দিকে দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাকে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার ৫০ জন যাত্রী পরিবহন করা হয় বলে জানা গেছে। বাস্তবতা হলো, ঢাকা-থেকে রংপুর পর্যন্ত ট্রাকটি অবৈধভাবে যাত্রী পরিবহন করলেও মহাসড়কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ কারও চোখে পড়েনি! একদিকে সিমেন্টবোঝাই ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ অন্যদিকে মালবাহী পরিবহনে যাত্রী তোলাও বৈধ নয়। অথচ সবার চোখ সচেতনভাবেই ফাঁকি দেয়ায় প্রাণ গেল ১৭ জনের। সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার সময় চালক ঘুমাচ্ছিলেন, স্টিয়ারিং ছিল হেলপারের হাতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ সবকটি মহাসড়কেই চলছে পণ্যবাহী পরিবহন। এসব পরিবহনে যাত্রী তোলা হচ্ছে ইচ্ছেমতো। যাত্রীরা বলছেন, পরিবহন সঙ্কটের কারণে মালবাহী গাড়িতে যাত্রা করছেন তারা। পণ্যবাহী গাড়ির চালকদের কেউ বলছেন, নির্দেশ না পাওয়ার কথা। অনেকেই বলছেন, যাত্রীদের অনুরোধে গাড়িতে তোলা হয়েছে। শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে দেখা গেছে, ছোট ছোট পিকআপ ভাড়া করে বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন যাত্রীরা। বাস্তবতা হলো, সব পথেই ঝুঁকি নিয়ে ঈদযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ট্রেনের ছাদ থেকে বাম্পারসহ ইঞ্জিন পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। ১০ টাকা দিয়ে মই ভাড়া নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। তবুও প্রশান্তি। গাড়িতে ওঠা মানেই প্রিয়জনের কাছে পৌঁছানো যাবে তা নিশ্চিত। এমন চিন্তা থেকেই একচিলতে হাসি নিয়ে গ্রামের পথে। লঞ্চেও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সদরঘাট নদীবন্দর থেকে বেশি লঞ্চ ছেড়েছে বাড়তি যাত্রী নিয়ে। সড়কপথে পরিবহন সঙ্কট তো আছেই। যানজটের কারণে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তিন থেকে চার ঘণ্টা বিলম্বে বাস আসায় অগ্রিম টিকেট কাটা মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয় বেশ। শনিবার বেশি ভোগান্তি হয়েছে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ভোগান্তি তেমন ছিল না। তবে বিকেলে থেকে গাড়ির চাপ এই দুই মহাসড়কের বাড়ে। দুপুর পর্যন্ত টঙ্গী থেকে গাজীপুর পর্যন্ত সড়ক ছিল কার্যত ফাঁকা। বগুড়া রুটের যাত্রীরা জানিয়েছেন, যানজটের কারণে গাড়ি আসতে দেরি হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছাতে অন্তত আট ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতেও যানজট নেই। বেশিরভাগ সড়কই ফাঁকা। টার্মিনালমুখী ভিড় ছিল শনিবার দিনভর। এছাড়া মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলো কেন্দ্র করে মানুষের সমাগম ছিল। সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাস টার্মিনালে যাত্রীর বেশি চাপ থাকলেও বাসের সংখ্যা ছিল কম। অনেক কাউন্টারে যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কমলাপুরে কিছুটা বিড়ম্বনা ঈদে ঘরমুখো যাত্রী নিয়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ভোর থেকে কমলাপুর স্টেশন ছাড়ছে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের ট্রেন। শনিবার বিকেল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৩টি ক্রেন কমলাপুর ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে বেশি ভিড় দেখা গেছে, দেওয়ানগঞ্জের পথের তিস্তা এক্সপ্রেস, রাজশাহীর ধূমকেতু, চিলাহাটির নীলসাগর এক্সপ্রেস এবং দেয়ানগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে। ময়মনসিংহের কমিউটার এক্সপ্রেস, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, চট্টগ্রামের মহানগর প্রভাতীতেও ভিড় ছিল, তবে এই ট্রেনের ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী চড়তে দেখা যায়নি। রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালের কয়েকটি ট্রেন দেরি করে ছেড়েছে। তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন ছেড়ে গেছে সকাল পৌনে আটটায়। ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা নীলসাগর এক্সপ্রেসের। ৩৫ মিনিট দেরিতে সেটি চিলাহাটির উদ্দেশে ছেড়েছে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেসের কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৯টা পর্যন্ত সেটি স্টেশনেই আসেনি। অপেক্ষায় থাকা যাত্রীদের রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বেলা ১২টা ৪০ মিনিটে ছাড়বে রংপুর এক্সপ্রেস। শুক্রবারও রংপুরের এই ট্রেন দুই ঘণ্টা দেরি করে ছেড়েছিল। আগের দিনের ধাক্কা শনিবারও সামলে ওঠা যায়নি। কমলাপুরের স্টেশন ম্যানেজার সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেন ছাড়তে কিছুটা দেরি হচ্ছে। রংপুর এক্সপ্রেস গতকাল গেছে দেরিতে, এ কারণে আজ ঢাকায় ফিরতে বিলম্ব হয়েছে। ছাদে যাত্রী না উঠতে প্রতিটি ট্রেন ছাড়ার আগে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মাইকিং করা হয়। কে শোনে কার কথা। রেলওয়ে পুলিশকে দেখা গেছে যাত্রী নামিয়ে দিতেও। তবুও যে বাড়ি যেতে হবে। অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য যাত্রীরা। সব বাধা উপেক্ষা করে ছাদে যাত্রীদের ঠাসা ভিড় দেখা গেছে। উত্তরের পথে বিড়ম্বনা টাঙ্গাইলে বিচ্ছিন্ন জট এবং সিরাজগঞ্জে ২১ কিলোমিটার সড়কে যানবাহনে ধীরগতির কারণে গাড়ি না ফেরায় ঢাকার গাবতলী ও কল্যাণপুর থেকে উত্তরের পথের যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। শনিবার সকালে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাস কাউন্টারগুলোতে কথা বলে জানা গেছে, টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় যানজটের কারণে তাদের বাসগুলো সময়মতো ঢাকায় পৌঁছাতে পারছে না। সে কারণেই ঢাকা থেকে নির্ধারিত সময়ে ছাড়া যাচ্ছে না। হানিফ পরিবহনের একজন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গাইবান্ধা থেকে ঢাকা আসতে সময় লাগে সাধারণত সাত ঘণ্টা। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের যে গাড়ি ছেড়েছে, সেটি পৌঁছেছে সকাল ৭টার দিকে। কাউন্টার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার সকালের বাসগুলো ছাড়তে তিন থেকে চার ঘণ্টা বিলম্ব হচ্ছে। কল্যাণপুর থেকে জয়পুরহাটগামী শ্যামলী পরিবহনের ৭টার বাস ছেড়েছে ৯টায়। আর নওগাঁগামী সকাল ৭টার বাস সাড়ে ৯টার সময়ও ঢাকায় আসতে পারেনি। হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট আবদুল গণি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে হাটিকুমরুল পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রাস্তা দুই লেইনের। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার গাড়ি ওই পথে যায়। ঈদ উপলক্ষে গাড়ির সংখ্যা বেশি থাকায় সেখানে ২১ কিলোমিটার সড়কে গাড়ি চলছে থেমে থেমে। এদিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ধেরুয়া রেলক্রসিং, রসুলপুর, এলেঙ্গা, গোড়াই, সুভল্লা, করটিয়া, পাকুল্লায় খানাখন্দের কারণে যানবাহনের গতি কম। তবে বিকেল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব অংশে বড় ধরনের যানজট ছিল না বলে পুলিশ সুপার মাহবুব আলমের ভাষ্য। এই রুটে এখান দিয়ে চলছে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ খুলনা বিভাগেরও কয়েকটি জেলার গাড়ি। ঈদ উপলক্ষে গাড়ির সংখ্যাও অধিক। এ কারণে এই ২১ কিলোমিটারে গাড়ি চলছে থেমে থেমে। তবে কোথাও জট নেই। তাছাড়া রোড ডিভাইডার না থাকায় মাঝেমধ্যেই দু-একজন চালক নিয়ম ভেঙ্গে বিপরীতমুখী লেইনে ঢুকে তাড়াতাড়ি চলার চেষ্টা করায় মাঝেমধ্যে সমস্যা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ওসি মোহাম্মদ দাউদ বলেন, ঈদ উপলক্ষে গাড়ির চাপ অতিরিক্ত, তার ওপর পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুতে চলতে হচ্ছে আরও ধীরগতিতে। এ কারণে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে ঢাকা পর্যন্ত পুরো মহাসড়কে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা এলাকায় রয়েছে গাড়ির দীর্ঘ লাইন। এ কারণে সেতুর পূর্ব পাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় গাড়ি চলছে ধীরগতিতে। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ মহাসড়কে ২৬ হাজার ৭৩২টি গাড়ি চলাচল করেছে বলে পুলিশ সুপার জানান। গাজীপুরের পরিবহন কর্মীরাও গাড়ির এই ধীরগতির জন্য নলকা সেতুকে দায়ী করছেন। ভোগড়া বাইপাসে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, সিরাজগঞ্জে ঝামেলার কারণে গাড়ি সময়মতো আসতে পারছে না বলে আমরা এখান থেকে সময়মতো ছাড়তেও পারছি না। এ কারণে আমরা এখন অগ্রিম টিকেটও বিক্রি করছি না। গাড়ির চাপ বেশি হওয়ায় পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া-আরিচা ঘাটে যানবাহন পারাপারে কিছুটা ভোগান্তি হয়েছে। দুপুরের আগে গাবতলী বাস টার্মিনালে ভোগান্তির শিকার যাত্রীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তারা জানান, বাস আসার খবর নেই। সড়কে যানজট। টিকেট মিলছে না। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে না কখন বাস আসবে। সব মিলিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়েছেন যাত্রীরা। ১০ বছরের তুলনায় যানজট কম ॥ সেতুমন্ত্রী ঈদযাত্রায় উত্তরবঙ্গের পথে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের খবরের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, জট বিগত ১০ বছরের তুলনায় কম। ধীরগতি আছে, সেটা সহনীয়। শনিবার সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রা পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগের যে কোন সময়ের চেয়ে মহাসড়কে যাত্রার মান এবারে ভাল। ভোগান্তি কম। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে চলাচলে চন্দ্রায় যে দীর্ঘ জট লেগে থাকত, গত ১০ বছরের চেয়ে এবার সেটা কম। তিনি বলেন, আজও অনেক জায়গায় রাস্তায় কিছুটা ধীরগতি আছে। এটা অতিরিক্ত চাপের কারণে। আশা করি, জনগণ সেটা মেনে নেবে। এর আগে সকাল ১০টায় সেখানে পৌঁছে বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়ে যাত্রী ও ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ঈদযাত্রার খোঁজখবর নেন মন্ত্রী। দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে আছে দাবি করে কাদের বলেন, আমি এ কথাটা একবারও বলব না যে, যাত্রীরা পুরোপুরিভাগে ভোগান্তিহীন যাত্রা করছে। ঢাকা থেকে ৮০ লাখ মানুষ গ্রামে যাচ্ছে ঈদ করতে। এখানে আমরা বলেছি, দুর্ভোগ সহনীয় পর্যায়ে রাখব। এবং তা আমরা পেরেছি। তবে শনিবারের ঈদযাত্রায় উত্তরের পথেও যানজটের কারণে গাড়ি না আসায় গাবতলী ও কল্যাণপুর এলাকার বাস কাউন্টারের সামনে যাত্রী এভাবে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় শনিবার। উত্তরের পথে যানজটের কারণে গাড়ি না আসায় গাবতলী ও কল্যাণপুর এলাকার বাস কাউন্টারের সামনে যাত্রী এভাবে অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায় শনিবার। সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এদের ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গেছে। পরিবারগুলো পথে বসে যাবে। এ জন্য আমি ড্রাইভারদের আরও সতর্কভাবে গাড়ি চালানোর জন্য বলব। আর যাত্রীদের উদ্দেশে বলব, জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ে ঈদের আনন্দ একেবারে মাটি হয়ে যেতে পারে। যাত্রী সাধারণ ও চালকদের যাত্রাপথে ‘আরও সতর্ক’ হওয়ার আহ্বান জানান কাদের। অতিরিক্ত ভাড়া ও ট্রিপ না নেয়ার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, অতিরিক্ত ট্রিপ নেয়ার জন্য গাড়ি স্পিডে চালানো থেকে বিরত থাকুন। গাড়ি চালনায় আরও সতর্ক হোন। মালিকদের আমি বলব, কিছু কিছু জায়গায় অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ শুনেছি। এটা থেকে বিরত থাকুন। যাত্রীদের অসাবধানতার কারণেই রংপুরের সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। দুর্ঘটনায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সবার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একটি সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে করে ওই যাত্রীরা বাড়ি যাচ্ছিলেন। সামান্য কিছু অর্থ বাঁচাতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ওই ট্রাকে করে যাচ্ছিল। ট্রাকটি ফিটনেসবিহীন ছিল। ঈদের সময় রাস্তায় কিভাবে ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। নৌপথে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা শনিবার ভোর থেকেই সদরঘাটে লঞ্চ যাত্রীর উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে ৩৩টি লঞ্চ সদরঘাট থেকে ছেড়ে যায় জানিয়ে ঘাট কর্তৃপক্ষ বলছে, শুক্রবারের ঈদযাত্রায় সারা দিনে ঘাট থেকে ১২৫টি লঞ্চ ছেড়েছে, যেখানে স্বাভাবিক সময় দিনে ৬০ থেকে ৬৫ লঞ্চ ছেড়ে যায়। এরপরও শুক্রবার তেমন যাত্রী পাননি জানিয়ে শনিবার কিছু যাত্রী আসা-যাওয়া করছে বলছেন এমভি টিপু লঞ্চের ম্যানেজার মোঃ ফারুক হোসেন। তবে তার অভিযোগ, লঞ্চে যাত্রী না ভরতেই কর্তৃপক্ষ ঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়তে বাধ্য করছে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর কর্তৃপক্ষ বলছে, যথাযথ নিয়ম মেনেই লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। ভিড় থাকলেও বেশিরভাগ যাত্রী নির্বিঘেœ লঞ্চে উঠতে পারছেন। তবে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কেবিন না পাওয়ায় ডেকে বসে যাওয়া নিয়ে চিন্তিত বরিশালের যাত্রী মোবারক হাওলাদার। তিনি বলেন, লঞ্চ আছে, কিন্তু কোন কেবিন পাচ্ছি না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ-বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক (টিআই) হুমায়ূন করিব বলেন, সকাল ৮টা পর্যন্ত পন্টুনে যাত্রীর খুব চাপ ছিল। এ সময় পন্টুনের হুড়োহুড়ি ও চাপাচাপি হলেও কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। শনিবার শুক্রবারের চেয়ে যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে বলেই মনে করছেন তিনি। এদিকে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মোঃ মওদুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, পিক আওয়ারে অর্থাৎ দুপুর ১২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সদরঘাট এলাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশের ২৩৬ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি দেন। অন্য সময়ও শতাধিক পুলিশ থাকে। এছাড়া নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব সদস্য ছাড়াও বিএনসিসির স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, পুরো এলাকায় ঘটনাবলি সিসি টিভির মাধ্যেমে মনিটরিং করা হচ্ছে। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতকর কিছু দেখা গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হচ্ছে। দুপুরের পর সদরঘাটে যাত্রীর চাপ আরও বাড়তে থাকে। লঞ্চ মালিকরা বাড়তি যাত্রী পরিবহনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত যাত্রী নিয়েই বেশিরভাগ লঞ্চ ঘাট ছেড়ে গেছে। এছাড়া নদীর মাঝখানে ও আশপাশের ঘাটেও যাত্রী তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে বিলম্বে লঞ্চ ছাড়াকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সঙ্গে লঞ্চ কর্তৃপক্ষের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এমভি ফারহান-৫ নামের লঞ্চটি নির্ধারিত সময়ের অনেক বেশি ঘাটে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিল। অথচ পুরো লঞ্চটিতে ছিল কানায় কানায় যাত্রী। অথচ সময়মতো না ছাড়ায় যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হন। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
×