ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুম্বলের কথা বলে রশিদকে উদ্বুদ্ধ করেন কোচ রাজপুত

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২৪ জুন ২০১৭

কুম্বলের কথা বলে রশিদকে উদ্বুদ্ধ করেন কোচ রাজপুত

অনলাইন ডেস্ক ॥ দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসে। চার দিনের ম্যাচ। সুদর্শন ছেলেটিকে মাঠের বাইরে বসে থাকতে দেখেন তিনি। পরে নেটে ছেলেটিকে বল করতে দেখে অবাক হয়ে যান, ওকে কেন প্রথম এগারোয় রাখা হয় না! ম্যানেজার বলেন, ওঁকে শুধু সীমিত ওভারে খেলানো হয়। পরের চার দিনের ম্যাচে ছেলেটিকে মাঠে নামান তিনি। আর সেই ম্যাচে আট উইকেট তুলে নেন রশিদ খান। আর তিনি, লালচাঁদ রাজপুত, তখন থেকেই আফগান ক্রিকেট কর্তাদের কাছে ভরসার লোক। এক বছরের মধ্যেই সেই ভরসার প্রতিদান পেল আফগানিস্তান। টেস্ট স্ট্যাটাস। সে দিন রশিদকে যাঁর কথা বলে তাতিয়েছিলেন কোচ রাজপুত, তাঁর নাম অনিল কুম্বলে। শুক্রবার মুম্বই থেকে ফোনে আফগানদের ভারতীয় কোচ বলছিলেন, ‘‘ওকে বলেছিলাম, তুমি তোমার স্বাভাবিক বোলিংটা করে যাও। বেশি কিছু পরিবর্তন করার দরকার নেই। একেই তোমার বলের গতি যথেষ্ট। তার উপর গুগলিটাও ভাল দাও। অনিল কুম্বলেকে দেখো। ও জোরে লেগ স্পিন করে কত উইকেট পেয়েছে। তোমারও এটাই করা উচিত। তার পর ও নিয়মিত কুম্বলের বোলিংও দেখতে শুরু করে ইউটিউবে।’’ কিন্তু একটা রশিদ খান দিয়ে যে টেস্ট জেতা যাবে না, আরও তৈরি করতে হবে, তা জানেন রাজপুত। ২০০৭-এ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের কোচের এখন সবচেয়ে বড় কাজ তাঁর দলের ক্রিকেটারদের মানসিকতায় বদল আনা। ক্রিজে টিকে থেকে বড় ইনিংস খেলার মানসিকতা। কুড়ি উইকেট নেওয়ার মানসিকতা। বললেন, ‘‘ওরা সাধারণত আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে ভালবাসে। ঝোড়ো ব্যাটিং করে প্রচুর রান করব। কিন্তু টেস্ট খেলতে গেলে যে সেই মানসিকতায় বদল আনা দরকার, এটাই ওদের মাথায় ঢোকাতে হবে আমাকে। এটাই এখন আমার চ্যালেঞ্জ।’’ গত বছর জুনে ইনজামাম-উল-হকের জায়গায় আফগান দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর যে তা অনেকটাই করতে পেরেছেন রাজপুত, তার প্রমাণ সম্প্রতি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে বড় রান। রাজপুত বলেন, ‘‘আগে আড়াইশো-তিনশোর বেশি তুলতে পারত না আফগানিস্তান। কিন্তু এ বছর আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমরা পাঁচশো রান তুলে ডিক্লেয়ার করেছি। এতেই তো প্রমাণ হয়, ছেলেদের বড় রানের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে।’’ এক বছর আগে যখন আফগানিস্তান থেকে কোচিংয়ের প্রস্তাব আসে তাঁর কাছে, তখন বেশি ভাবেননি রাজপুত। সেই সময়ের কথা তুলতে বলেন, ‘‘একটা জাতীয় দলের কোচ হওয়ার প্রস্তাবই আমার কাছে বড় ব্যাপার ছিল। ভেবেছিলাম যে, আফগানিস্তানের মতো একটা দলকে টেস্ট খেলা দেশের তালিকায় আনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জটা কিছুটা হলেও তো নিতে পেরেছি।’’ টেস্ট স্বীকৃতি যে পেতে চলেছে তাঁর দল, সেই আশা ছিলই তাঁর মনে। রশিদদের কোচ জানালেন, ‘‘আফগান বোর্ড কর্তারা চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। আর আমরা মাঠে ভাল খেলছিলাম। জিম্বাবোয়েকে হারিয়েছি, আয়ারল্যান্ডকে হারিয়েছি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ওয়ান ডে সিরিজ ড্র করেছি। তাই আশা ছিলই। দলের ছেলেরা সবাই খুব খুশি।’’ রশিদ ছাড়াও আর এক আফগান অফ স্পিনার এ বার আইপিএলে খেলেছেন, মহম্মদ নবি। রাজপুত বলেন, ‘‘এই দু’জন তো দলের বড় ভরসা বটেই। তবে জুনিয়র দলে একটা ছেলে আছে বাঁ হাতি রিস্ট স্পিনার। ওকেও আমি চেয়েছি। কিন্তু এতেই হবে না। আরও ক্রিকেটার চাই আমাদের। টেস্ট জিততে গেলে বড় রান, কুড়ি উইকেট দু’টোই দরকার।’’ আফগান বোর্ড ক্রিকেটের উন্নতির জন্য পিছিয়ে নেই। তাদের উপদেষ্টা কোচ হিসেবে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিল সিমন্স। ফিল্ডিং কোচ দক্ষিণ আফ্রিকার রায়ান ম্যারন। ফিজিও পাকিস্তানের আজিম মালিক। এঁদের নিয়েই আপাতত সংসার রাজপুতের। এই সংসারে রদবদলের সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন কোচ। ক্রিকেটের তেমন গৌরবের ইতিহাস নেই, আফগানিস্তান বলতে বরং চোখের সামনে ভেসে উঠবে সারাক্ষণ গোলাগুলি বর্ষণ এবং আতঙ্কের এক দেশ। ১০ জুলাই লর্ডসে সেই দেশের ক্রিকেটারেরাই এমসিসি দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামবেন। অদূরে অপেক্ষা করবে টেস্টের উড়ান! সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×