ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকিতে বারনই পানি সংরক্ষণ প্রকল্প ॥ বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

রাজশাহীতে নগরবর্জ্যে বিষাক্ত বারনই

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৪ জুন ২০১৭

রাজশাহীতে নগরবর্জ্যে বিষাক্ত বারনই

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী নগর থেকে বেয়ে যাওয়া তরল বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে জেলার বারনই নদী। প্রতিদিন এ নদীতে পড়ছে হাজার হাজার লিটার দূষিত বর্জ্য। এর প্রভাব পড়েছে বারনই নদীর প্রায় অর্ধশত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। শহরের বর্জ্যে নদীর তলদেশের পানি নষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছে মাছ। বর্জ্য জমে নদীর তলদেশ ভরাট হচ্ছে। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে নদী ও পাশের এলাকাগুলোর। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন নদীপারের লক্ষাধিক মানুষ। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে নদীতে পানি সংরক্ষণ প্রকল্প। এ অবস্থায় বিষয়টি সরকারের নজরে আনতে সংসদে উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মৌখিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর কয়েকটি ড্রেনের মাধ্যমে শহরের তরল বর্জ্য গিয়ে সরাসরি পড়ছে বারাহী ও নবগঙ্গা খালে। এতে ওই দুটি খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এর মধ্যে নবগঙ্গার পানি দুয়ারী হয়ে এবং বারানীর পানি নওহাটা দিয়ে বারনই নদীতে পড়ছে। এ দুটি খালের বারনই নদীর সংযোগস্থলে সøুইসগেট বসানো হলেও তা খোলা থাকে। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার বর্জ্য বারনই নদীতে পড়ছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার দুয়ারী গ্রামের প্রফুল্ল হালদার (৬৫) বলেন, এক সময় বারাহী ও নবগঙ্গা খাল এবং বারনই নদীতে প্রচুর দেশী মাছ পাওয়া যেত। তাদের জীবিকা নির্বাহে কোন সমস্যা হতো না। কিন্তু এখন খালের দূষিত পানিতে একটি মাছও নেই। এখন শুধু বারনই নদীতে সামান্য পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে। নওহাটা পৌরসভার বারনই নদীপারের মধুসূদনপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন (৫৫) বলেন, বারনই নদী ছাড়া তাদের গোসল করার বিকল্প জায়গা নেই। আগে নদীর পানি ভাল ছিল। এখন শহরের তরল বর্জ্যে নদীর পানি দূষিত হয়ে গেছে। নদীতে গোসল করলে গা চুলকায়। ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বারাহী ও নবগঙ্গা খাল এবং বারনই নদীপারের লক্ষাধিক মানুষ বলে জানান তিনি। পবা উপজেলার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর জালাল আহম্মেদ বলেন, শহরের তরল বর্জ্যে সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়ে গেছে পবার দুটি খাল। ওই দুটি খালের দূষিত পানি বারনই নদীতে পড়ে মাছ মরে যাচ্ছে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন মুকুল জানান, গত বছর শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের জগদীশপুরে বারনই নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়। নদীতে মাছের অভায়ারণ্য ও সেচকাজে ব্যবহারে খরা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে এ রাবার ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ রাবার ড্যাম নির্মাণের ফলে খরা মৌসুমে বারনই ও ফকিরনি নদীর প্রায় অর্ধকিলোমিটার পর্যন্ত উজানে পানি থাকে। এ পানি ব্যবহার করে নদীপারের মানুষ চাষাবাদসহ সকল কাজে লাগিয়ে যেমন উপকৃত হচ্ছে, তেমনি জেলেরাও মাছ ধরার সুযোগ পাচ্ছে। তবে নগরীর বর্জ্য সরাসরি নদীতে মেশায় পানি দূষিত হচ্ছে, যা ছাড়িয়ে পড়েছে বারনই নদীর প্রায় ৪০-৪৫ কিলোমিটার ভাটিতে। বিষাক্ত বর্জ্যে নদীর তলদেশের পানি নষ্ট হয়ে মাছ মারা যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের রাজশাহী অফিসের উপ-পরিচালক নূর আলম বলেন, বারাহী ও নবগঙ্গা নদীর জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সেখানে শহরের বিষাক্ত পানি না পাঠানোর জন্য সিটি কর্পোরেশনকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি, চিঠির জবাবও দেয়নি। পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম হোসেন বলেন, পবা উপজেলার দুটি খালে ফেলা হচ্ছে নগরীর তরল বর্জ্য। ওই দুটি খালের মাধ্যমে নবগঙ্গা ও বারনই নদীতে পড়ছে বর্জ্যগুলো। ইতোমধ্যেই নবগঙ্গা নদীসহ দুটি খালের পানি সম্পূর্ণরূপে দূষিত হয়ে গেছে। এখন হুমকির মুখে পড়েছে বারনই নদী। তিনি বলেন, খাল দুটিতে নালার সংযোগ বন্ধ করাসহ বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য পবা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটি কর্পোরেশনকে কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানান তিনি। রাজশাহী ওয়াসার সচিব সাদেকুল ইসলাম বলেন, নগরীর তরল বর্জ্য শোধনের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে সিটি কর্পোরেশন। তবে তারা নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের জন্য প্রস্তাবনা পাঠিয়েছেন। এটি হলে তরল বর্জ্যরে সমস্যা অনেকটাই কমবে। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা করা আছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এটি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটি হলে আর সমস্যা থাকবে না বলে জানান তিনি।
×