ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সহায়ক সরকারের দাবিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হবে

ঈদের পর গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করবে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৩ জুন ২০১৭

ঈদের পর গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করবে বিএনপি

শরীফুল ইসলাম ॥ নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে ঈদের পর গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করবে বিএনপি। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফরে গিয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করবেন। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে সহায়ক সরকারের দাবি আদায় করতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্যও প্রস্তুত করা হবে। সূত্রমতে ঈদের পর কিছুদিনের জন্য লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপার্সনের। সেখানে পায়ের চিকিৎসা ও ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাংগঠনিক বিষয়ে পরামর্শ করার পর দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবেন। এরপর তিনি বিভিন্ন জেলা সফর শুরু করবেন। এর আগেই দলের অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা সারাদেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফর কর্মসূচী শুরু করবেন। উল্লেখ্য, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না আগে এমন বক্তব্য নিয়ে সোচ্চার থাকলেও ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর খালেদা জিয়াসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা এখন পুরোদমে নির্বাচনমুখী। ইতোমধ্যেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। গণসংযোগকালে দলের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শক্তি জোরদারের পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গতিশীল করার পরামর্শ দিতেও বলা হয়েছে। এছাড়া সহায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচী দিলে তা যেন সঠিকভাবে পালিত হয় সে প্রস্তুতিও নিতে বলা হবে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যেই দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে বিএনপি। প্রাথমিকভাবে প্রতিটি আসনে ৩ জন করে ৩০০ আসনের জন্য ৯০০ সম্ভাব্য প্রার্থী ঠিক করা হচ্ছে। ঈদের পর কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা-উপজেলায় গণসংযোগকালে এসব প্রার্থীদের বিষয়ে আরও বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হবে। এর পর নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। তবে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার বিষয়টি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর নির্ভর করবে। ইতোমধ্যেই এক ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রকাশ্যে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে শুরু করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, সহায়ক সরকারের দাবিতে ঈদের পর প্রয়োজনে রাজপথে অবস্থান নিতে হবে। ঈদের পর সারাদেশে গণসংযোগ শুরু হলে নির্বাচন ও সহায়ক সরকারের বিষয়ে দলীয় অবস্থান আরও পরিষ্কার করা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত সহায়ক সরকারের দাবি আদায় না হলে আন্দোলন জোরদারের আগাম কৌশলও দলীয় নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেয়া হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সিনিয়র নেতারা কে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবে ইতোমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া-৭ (গাবতলী) আসন থেকে নির্বাচন করবেন এটা প্রায় নিশ্চিত। এছাড়াও তিনি আরও ২টি আসন থেকে নির্বাচন করবেন। এ দু’টি আসন এখনও ঠিক হয়নি। তবে বাকি ২টি আসন সিলেট সদর, ফেনী, বগুড়া সদর, চট্টগ্রাম ও ঢাকা এসব জায়গা থেকে হতে পারে। আর দলের অন্য সিনিয়র নেতারা আগের মতোই নিজ নিজ এলাকা থেকে নির্বাচন করবেন। সূত্রমতে, আসন্ন ঈদের পর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়ার প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলন করে এ রূপরেখা প্রণয়নের পর সেটি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে দলটি। এ জন্য জনমত তৈরি করতে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা শহরে গিয়ে সমাবেশ করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। একইভাবে অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদেরও তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফরে গিয়ে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে সহায়ক সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে জনমত তৈরি করতে বলা হবে বলে জানা গেছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, বিএনপির ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিল ভুল। যে ভুলের খেসারত এখন দলের নেতা-কর্মীরা দিচ্ছেন। দলের একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং ২০ দলীয় জোটের কোন কোন শরিক দল দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে খালেদা জিয়াকে যে ভুল বার্তা দিয়েছিল এটিও এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত হচ্ছে। তবে এবার আর এমন ভুল করতে চায়না দলের নেতাকর্মীরা। দলের হাইকমান্ডও এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে। আর এ কারণেই খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছরেরও বেশি সময় হাতে রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদার করতে সারাদেশে গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করবে। বিএনপি চায় অতীতের সকল ভুলত্রুটি সংশোধন করে এবার সর্বস্তরে দল গুছিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নিশ্চিত করে দলের জন্য কাক্সিক্ষত ফলাফল বয়ে আনতে। এ জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে টার্গেট নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু কাজ করে যাচ্ছেন তারা। বর্তমানে একদিকে সর্বস্তরে দল গোছানোর কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনমুখী বিভিন্ন কর্মকা- জোরদার করছেন। ইতোমধ্যেই দলের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির প্রস্তুতিও শুরু করা হয়েছে। বিএনপি ঘোষিত ‘ভিশন ২০৩০’ এর আলোকেই এ নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এবার নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করার আগে তৃণমূল নেতাকর্মীদেরও মতামত নেয়া হবে বলে জানা গেছে। দলের সিনিয়র নেতারা সারাদেশে গণসংযোগকালে এ বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করে। এ পরিস্থিতিতে সরকার পতনের লক্ষ্যে গতবছর ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে টানা ৯২ দিন অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী পালন করে দলটি। কিন্তু এ কর্মসূচী পালনের সময় দেশে জানমালের ব্যাপক ক্ষক্ষতি হওয়ায় নাশকতার মামলায় জড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতা পেরেশানির মধ্যে পড়েন। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে মাঠের আন্দোলনতো দূরে থাক দলের স্বাভাবিক কর্মকা- চালাতেই হিমশিম খায় বিএনপি। আর এ ধরনের নেতিবাচক আন্দোলন করতে গিয়ে বিদেশেও বন্ধুহীন হয়ে পড়ে বিএনপি। তবে এ অবস্থার অবসানে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। সূত্রমতে, বিএনপি হাইকমান্ড চাচ্ছে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যেই দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করে আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত করতে। আর এ জন্যই ঈদের পর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ দলের সিনিয়র নেতারা ধারাবাহিকভাবে সারাদেশের জেলা-উপজেলা সফর করবেন। ইতিমধ্যেই কেন্দ্র থেকে এ কর্মসূচীর কথা সব জেলা-উপজেলা নেতাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঈদের পর সারাদেশে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে সহায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হবে। একই সঙ্গে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও নেয়া হবে। অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখন দল পুনর্গঠনের ওপর জোর দিচ্ছি। এ ছাড়া নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতিও নিচ্ছি। সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে আন্দোলনের ডাক দেবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। এর আগে তিনি সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। আরেক অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামন দুদু বলেছেন, ঈদের পর গণতন্ত্র ও সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে ফয়সালা হবে। বর্তমান সরকার নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের ব্যবস্থা না করলে আন্দোলন করে তা আদায় করা হবে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ঈদের পর সারাদেশে গণসংযোগ কর্মসূচী জোরদার করা হবে। দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতারা সারাদেশের জেলা-উপজেলা সফর করে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবেন। এ সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি, আন্দোলন ও সাংগঠনিক বিষয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বুদ্ধ করা হবে।
×