ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মামলার তদন্ত ডিবিতে স্থানান্তর

এএসপি মিজান হত্যার তদন্ত রিপোর্ট ৩০ জুলাই দাখিলের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২৩ জুন ২০১৭

এএসপি মিজান হত্যার তদন্ত রিপোর্ট ৩০ জুলাই দাখিলের নির্দেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ হাইওয়ে পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদার হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুলাই দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকা মহানগর আদালত। এই হত্যা মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি)। বৃহস্পতিবার তার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের দাবি। এএসপি মিজানের নিহত হওয়ার ঘটনায় তার ছোট ভাই মাসুম তালুকদার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তদন্ত সূত্র জানায়, বুধবার ভোরে উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর এএসপি মিজানকে তুলে নিয়ে হত্যার পর লাশ মিরপুরের বেড়িবাঁধে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। কারা, কেন তাকে হত্যা করেছে তা জানার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সংস্থা মাঠে নেমেছে। বুধবার রাজধানীর রূপনগর থানার মিরপুর বেড়িবাঁধের বোটক্লাব এলাকার রাস্তার পাশ থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করা হয় সকাল প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে। একটি ব্রিজের কাছে ঝোপে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে ডিএমপির রূপনগর ও সাভার থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে। তার লাশ উদ্ধারের পর কেন-কারা তাকে হত্যা করেছে তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। ৩০ জুলাই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইওয়ে পুলিশের এএসপি মিজান হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৩০ জুলাই দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর আদালত। রূপনগর থানা পুলিশকে বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম মাজহারুল হক। এএসপি মিজানের হত্যাকা-ের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন। ময়নাতদন্ত সম্পন্ন বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে এএসপি মিজানুর রহমানের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ড. প্রদীপ বিশ্বাস। ময়নাতদন্তে মিজানের শরীরের অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক ডাঃ প্রদীপ বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, নিহত মিজানুরের শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। শরীরের চামড়ার নিচে জমাট রক্ত দেখা গেছে। গলায় দাগ রয়েছে। ছোট ভাই বাদী হয়ে মামলা দায়ের পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেছেন, পঞ্চাশোর্ধ মিজানুর রহমান হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর অঞ্চলের সাভার সার্কেলের দায়িত্বে ছিলেন। রাজধানীর রূপনগর বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে ঢাকা বোট ক্লাবের বিপরীত দিকের রাস্তার পাশে গলায় কাপড় প্যাঁচানো অবস্থায় বুধবার বেলা এগারোটার দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। ওইদিন ভোরে সেহরি খাওয়ার পর সাধারণ পোশাকে উত্তরার বাসা থেকে কর্মস্থল সাভারের উদ্দেশে রওনা হওয়া এএসপি মিজানুরকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণার কথা জানায় পুলিশ। বুধবার রাত দশটার দিকে এএসপি মিজানুর রহমান হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই মাসুম তালুকদার। রূপনগর থানায় দায়ের করা মামলা নং-১৯। অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। মামলার তদন্ত ডিবিতে ডিএমপির উপকমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানিয়েছেন, হাইওয়ে পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) মিজানুর রহমান তালুকদার হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) স্থানাস্তর করা হয়েছে। রূপনগর থানায় দায়ের করা মামলা নং-১৯। সুনির্দিষ্টভাবে কারও নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা রূপনগর থানার ওসি সৈয়দ শহীদ আলম বলেছেন, বুধবার সকালে রাজধানীর রূপনগর থানার মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে হাইওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যার পর বেড়িবাঁধ এলাকায় লাশ ফেলে যায়। মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বোট ক্লাব এলাকার রাস্তার এই স্থান থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানান রূপনগর থানার ওসি। স্ত্রীর দেয়া নতুন শার্ট বাড়িটির কেয়ারটেকার নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি সাড়ে ১৭ বছর ধরে এই বাড়ির দায়িত্বে আছি। রাজধানীর উত্তরার ৫ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর সড়কের ৩৮ নম্বর ভবনের ছয়তলা এই বাড়ির নিচতলায় সিঁড়ির পাশের ফ্ল্যাটটিতে সপরিবারে ১২ হাজার টাকায় ভাড়া থাকতেন এএসপি মিজান। গত দুই বছর পাঁচ মাস ধরে এই বাড়িতে ভাড়া আছেন এএসপি মিজানুর রহমান। তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন। বাসা ভাড়ার সিøপ দেয়ার পর ১০ তারিখের মধ্যে ভাড়া দিয়ে দিতেন। কখনও খারাপ ব্যবহার করতেন না। বুধবার দুপুরে টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিল, তখন মিজান সাহেবে একটি রিকশা নিয়ে বের হয়ে যান। কিছুই বলে যাননি। এর আগেও এই সপ্তাহে আরও দু’তিন দিন ভোরবেলা বের হয়েছেন এএসপি। ডিউটি থাকলে ঠিক সময়েই বের হয়ে যেতেন এএসপি। কেয়ারটটেকার নুরুল হকের পাশে থাকা তার স্ত্রী পারভীন জানিয়েছেন, ফজরের সময় মিজান স্যার আমার স্বামীর নাম ধরে ডাক দেন গেট খোলার জন্য। তখন আমার স্বামী জানান, গেট খোলা। এ সব কথা আমি বাসার ভেতরে বসেই শুনতে পাই। এরপর তিনি চলে যান। কেয়ারটেকারের স্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার রাতে এএসপি স্বামীর জন্য একটি শার্ট কিনে নিয়ে আসেন তার স্ত্রী। সেই শার্ট গায়ে দিয়ে ভোরে অফিসের উদ্দেশে বেরিয়ে যান। এরপর তার মৃত্যুর খবর এলে দুপুরে দুই বাচ্চা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যান এএসপির স্ত্রী। এ সময় আমাদের কিছু বলে যাননি। নিহত মিজানের স্ত্রী অসুস্থ নিহত এএসপি মিজানের স্ত্রীর বোনের ছেলে শামীম শেখ সাংবাদিকদের বলেছেন, খালুর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর আন্টি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আন্টির খিঁচুনি হচ্ছিল। তাকে দ্রুত কেসি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসা দেয়ার পর তিনি আবার কান্নাকাটি শুরু করেন। এরপর তাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সঙ্গে চিকিৎসকও রয়েছেন। রাজধানীর দক্ষিণখান নোয়াপাড়ার কে সি হাসপাতালে এএসপি মিজানুরের স্ত্রীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রসঙ্গত বুধবার রাজধানীর রূপনগর থানাধীন মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকার বোট ক্লাব এলাকার রাস্তার পাশ থেকে এএসপি মিজানুর রহমান তালুকদারের লাশ উদ্ধার করা হয়। সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে স্থানীয়রা একটি ঝোপে মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে ডিএমপির রূপনগর ও সাভার থানা পুলিশ সেখানে ছুটে যায়। ঘটনাস্থল ডিএমপি এলাকায় হওয়ায় রূপনগর থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
×