ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক, রেল, নৌ- সব পথেই ঝক্কি ;###;ফেরিঘাটে টোকেন জটিলতা ;###;সড়কে বাড়তি গাড়ি চলাচলে পরিকল্পনা নেই ;###;ওয়েস্কেল লেনে ঢুকছে সব যান ;###;ব্যবস্থাপনার ত্রুটিতে জনদুর্ভোগ

ঘরে ফেরার ঢল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ জুন ২০১৭

ঘরে ফেরার ঢল

রাজন ভট্টাচার্য ॥ ঈদের ছুটি শুরু। সড়ক-রেল-নৌসহ সব পথেই এখন মানুষের ঢল। যে যেভাবে পারছেন ছুটছেন বাড়ির পথে। ২৬ তারিখ ঈদ ধরে ছুটি ঠিক করা হয়েছে। এই হিসেবে বৃহস্পতিবার ছিল শেষ কর্মদিবস। সকাল থেকে বাস, রেল ও লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ লক্ষ করা গেছে। বিকেলে আরও বাড়ে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। একই চিত্র সড়কপথেও। সব বাসেই মানুষ বোঝাই। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সড়ক ও নৌসহ সব পথের যাত্রীদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সবকটি মহাসড়কেই দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ঘরমুখো মানুষের। ঢাকা থেকে সব রুটের মহাসড়কে উঠতে ব্যাপক যানজট পোহাতে হয়েছে গাড়িগুলোকে। এ কারণে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা বিলম্বে ছেড়েছে বাসগুলো। পরিবহন সংশ্লিষ্ট ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎসবকেন্দ্রিক যানবাহন চলাচলে সড়ক ও নৌপথে বিশেষ প্রস্তুতি নেই। যা আছে এর বেশিরভাগই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। সেই সঙ্গে নতুন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনায়ও তেমন পরিবর্তন আনা হয়নি। সর্বত্র নানা ধরনের ত্রুটি লক্ষণীয়। অথচ দিন দিন সড়কে যানবাহনে চাপ বাড়ছে। এর মধ্যে দুর্ভোগে নাকাল হয়ে বাড়ি ফিরছেন নগরীর মানুষ। সড়ক ও ফেরিঘাটে ভোগান্তি কেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যানজটের অন্যতম কারণ সড়ক ও ফেরিঘাটগুলোতে অব্যবস্থাপনা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঈদ প্রস্তুতির অভাব। দুইয়ে মিলে ভোগান্তি বাড়িয়েছে ঘরমুখো মানুষের। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশও অনেক সময় যথাযথ কার্যকর হচ্ছে না। সেই সঙ্গে লক্কড়ঝক্কড় পরিবহনগুলোও উঠছে সড়কে। নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচল, হাটবাজার, যত্রতত্র গাড়ি থামানো, যাত্রী ওঠানামা, ভাঙ্গাচোরা সড়ক এসব সমস্যা তো পুরনো অবস্থাতেই রয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ॥ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার, তারাব, বরপা, ভুলতা, গাউছিয়া, ভৈরবের দুর্জয় মোড়, বি-বাড়িয়া বিশ্বরোডসহ আরও বেশকিছু পয়েন্টে যানজটের ভোগান্তি হচ্ছে। এর মধ্যে ভুলতা এলাকায় ফ্লাইওভারের কারণে সমস্যা প্রায় দুই বছর। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে নির্মাণকাজ বন্ধ ও সড়ক সচল রাখার কোন পরিকল্পনাই নেই। ফলে ভোগান্তি চলছেই। এর মধ্যে যাত্রাবাড়ী, ডেমরা সড়কটি ভাঙ্গাচোরা। ফলে যানবাহনের ধীরগতি। ঈদকে সামনে রেখে এই সড়কটিও ভালভাবে সংস্কার করা হয়নি। কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। টঙ্গী হয়ে যেসব গাড়ি সিলেটমুখী সেগুলো ভোগড়া বাইপাসসহ অন্তত আটটি পয়েন্ট যানজটের মুখে পড়ছে। এই বাইপাস সড়কটিও ভাঙ্গাচোরা। সড়কের দুই পাশে গাড়ি পার্কিং, বাজার মিলিয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ॥ গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটির সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর ব্রিজ, সোনারগাঁও মোড়, সিদ্ধিরগঞ্জ, গজারিয়া, মেঘনা ও দাউদকান্দি সেতু, কুমিল্লার গৌরীপুর, ফেনী রেলগেট, বড় দরগারহাট বাজার, কুমিল্লার পদুয়ার বাজারসহ অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এর মধ্যে দাউদকান্দি ও মেঘনা ব্রিজে টোল প্লাজায় ধীরগতি ও সড়কের লেন কমে যাওয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ওয়েস্কেলগুলোতে পণ্যবাহী পরিবহন থামিয়ে রাখা হচ্ছে। বেশি পণ্য পরিবহনের নামে ওয়েস্কেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবহন চালকদের দেনদরবার চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। অথচ ঈদের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী পরিবহনের পৃথক কোন লেন করা হয়নি। তাছাড়া ওয়েস্কেলের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে না থাকারও কোন নির্দেশনা নেই। অন্যান্য সমস্যার মধ্যে রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা, বাড়তি গাড়ির চাপ, নিষিদ্ধ ও স্বল্প গতির যানবাহনের দৌরাত্ম্য, হাটবাজার প্রভৃতি। এসব সমস্যার কোনটিরই সমাধান আপাতত নেই। ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ॥ ঈদকে কেন্দ্র করে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে প্রতিবছরই গাড়ির চাপ বাড়ে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় ঢাকা থেকে বেরিয়ে আশপাশের এলাকাগুলোতে। এবারও হয়েছে তাই। এই রুটের বাসগুলো প্রথমেই ঢাকার জুরাইন রেলগেট, পোস্তগোলা রেলগেটে গিয়ে যানজটের মুখে পড়ছে। এরপর মাওয়া, কাউড়াকান্দি ফেরিঘাট, কাঁঠালবাড়ি, ভাঙ্গা চৌরাস্তায় গিয়ে যানজটের মুখে পড়ছে। ফেরিঘাটগুলোতে মূল সমস্যা হলো পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো একসঙ্গে চলা। অপ্রশস্ত সড়ক ছাড়াও সিরিয়ালের নামে পেছনের গাড়িকে আগে যেতে সুযোগ দেয়া ও টিকেট সংগ্রহে দীর্ঘসূত্রতাও একটি বড় সমস্যা। এই রুটের বাসগুলো যায় গাবতলী থেকেও। বাস টার্মিনাল ত্যাগ করার সময় অন্তত আধা ঘণ্টা যানজটের ধকল সহ্য করতে হয়। এর কারণ হলো এলোমেলোভাবে সড়কের ওপর সিটি ও দূরপাল্লার সার্ভিস পার্কিং করে রাখা। একটু সামনে আমিনবাজার ব্রিজ, সাভার বাজার, শিবালয় থানা ফেরিঘাট ও দৌলতদিয়া ঘাটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসহ পরিবহন সংশ্লিষ্টদের। মূলত, সড়ক ও ফেরি ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করেন পরিবহন নেতারা। বাসচালকদের অভিযোগ আবদুল্লারপুর এলাকায় একটি অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে। ইচ্ছেমতো সড়কের ওপর গাড়ি রাখায় যানবাহন চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ এ নিয়ে কারও কোন মাথাব্যথা নেই। বেড়িবাঁধটি সংস্কার না হওয়ায় গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানজট হচ্ছে এই বিকল্প সড়কেও। বাইপাইল ও চান্দুরা পয়েন্টেও যানজটের সমস্যা তীব্র। পরিবহন মালিকরা অভিযোগ করে বলেছেন, নবীনগর ও কালিয়াকৈড় পয়েন্টে প্রতিবছরের মতো এ বছরও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। ইচ্ছেমতো যাত্রী তোলা, পার্কিং করা হচ্ছে। ছয় লেনের সড়ক করা হয়েছে দুই লেন। বাকি লেনগুলোতে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। ফলে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হচ্ছে। আশুলিয়া এলাকায় রাজশাহী ও রংপুরের ব্যাপক সংখ্যক বাস সড়কের দুই পাশে যাত্রী পরিবহনের জন্য বৃহস্পতিবার থেকে রাখা হয়েছে। গার্মেন্টস ছুটির পর এসব বাসে যাত্রী পরিবহন করা হবে। ফিটনেস সনদ ও রুট পারমিট না থাকায় মাঝপথ থেকে এসব বাসে যাত্রী তোলা হবে। অথচ পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ॥ সখিপুরে কাঁচাবাজার, চন্দ্রা, আশুলিয়াসহ বেশকিছু পয়েন্টে বৃহস্পতিবারও যানজট হয়েছে। যমুনা সেতুতে ওয়েস্কেলে গাড়ি মাপার জন্য পৃথক কোন লেন নেই। একই লেনে ঢুকছে সব ধরনের পরিবহন। মালামাল কম-বেশি নিয়ে ওয়েস্কেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের দেনদরবার দীর্ঘ সময় চলছে। এতে যানজট বাড়ছে। সিরাজগঞ্জের ত্রিমুখী মোড়ে গাড়ির জটলা সব সময়। রংপুর-বরিশাল ও খুলনা জোনের গাড়িগুলো বিশৃঙ্খল হয়ে চলাচল করায় এই মোড়ে যানজটের ভোগান্তি বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলের শ্রমিক নেতা মোঃ জলিল জানান, ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে সড়ক-মহাসড়ক থেকে শুরু করে ফেরিঘাটগুলোতে ভোগান্তি বাড়ছে। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিলে দুর্ভোগ কমে আসবে বলেও মনে করেন তিনি। নরসিংদীর শ্রমিক নেতা মোঃ আলমগীর জানান, বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ সড়কপথেই। অথচ ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক ব্যবস্থপনায় নতুনত্ত্ব কিছু নেই। যেখানে যেখানে সমস্যাগুলো ছিল তা রয়েই গেছে। মানুষের ভোগান্তি নিরসনে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন বলেও মত দেন তিনি। বিপ্লবী সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আলী রেজা বলেন, ফেরিঘাট, ওয়েস্কেল পয়েন্ট, সড়ক সবখানেই ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি লক্ষ করা যাচ্ছে। সড়কের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা, টার্মিনাল উচ্ছেদ হয়নি। সড়কের মাঝখানে ইচ্ছেমতো গাড়ি থামিয়ে যাত্রী তোলা হচ্ছে। দুর্ঘটনাকবলিত বাস দ্রুত সরানো হচ্ছে না। রাস্তার পাশে হাটবাজার আছেই। যথাসময়ে সংস্কার হয়নি ভাঙ্গাচোরা সড়কগুলো। সব মিলিয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। ফেরিঘাটগুলোতে যাত্রীবাহী পরিবহনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে না। সেই সঙ্গে যানবাহন পারাপারে টিকেট সংগ্রহে জটিলতা ভোগান্তি বাড়াচ্ছে। জানতে চাইলে পরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে সিটি সার্ভিসসহ মাইক্রো, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল মহাসড়কে উঠছে। সিটিতে চলা ও মহাসড়কে গাড়ি চালানোর পার্থক্য অনেক বেশি। নিয়মকানুনও কিছুটা ভিন্ন। সঙ্গত কারণে যানজট হচ্ছে। তিনি বলেন, যে কোন মূল্যে লক্কড়ঝক্কড় পরিবহনগুলো বন্ধ করতে হবে। তা না হলে যানজটের মাত্রা আরও বাড়বে। পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষে সড়ক ব্যবস্থাপনা সঠিক হওয়া প্রয়োজন। অন্তত ১৫ দিন আগে সড়ক পুরোপুরি প্রস্তুত রাখতে হবে। তৈরি থাকতে হবে বৈরী আবহাওয়া মোকাবেলার জন্যও। কিন্তু আমাদের দেশে এসব কিছুর অভাব রয়েছে। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কে ভোগান্তি ॥ গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের কারণে যানবাহনের বাড়তি চাপ বাড়ছে। এতে মহাসড়কে যানবাহনের লম্বা সারি দেখা গেছে। কয়েকটি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে থেমে থেমে যানজট। গাজীপুরের কোনাবাড়ি হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হোসেন সরকার জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের দুটি স্থানে গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচলে সাময়িক বিঘœ ঘটে। পুলিশ বিকল গাড়ি দুটি সরিয়ে ফেললেও যানবাহনে চাপ বাড়তে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে দেখা দিয়েছে যানবাহনের লম্বা সারি। চন্দ্রা ও কালিয়াকৈর অংশে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া বাইপাস থেকে তারগাছ পর্যন্ত চান্দনা যানবাহনের চাপ লক্ষ করা গেছে। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। তবে গাজীপুর পুলিশ বলছে, যানজট নিয়ন্ত্রণে আট হাজার পুলিশ মাঠে নেমেছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাস্তায় নেমেছে আর্মড পুলিশও। তবে অন্যান্য বছরের মতো এ বছর রোভার স্কাউট সদস্যদের যানজট নিরসনে যুক্ত করা হয়নি। এছাড়া যানজট নিরসনে দলের তরুণ নেতাকর্মীদের মাঠে কাজ করারও আহ্বান জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তার এই আহ্বানের কোন সাড়া মেলেনি। অর্থাৎ মাঠ পর্যায়ে যানজট নিরসনে দলীয় নেতাকর্মীদের কোন ভূমিকা চোখে পড়েনি। গাজীপুর পরিবহন মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার অফিস শেষে বেশকিছু গার্মেন্টস ছুটির কথা রয়েছে। ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল-মংমনসিংহ-সিলেট-চট্টগ্রামসহ সবকটি মহাসড়কে রাতে গাড়ির চাপ আরও বাড়বে। এতে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। তবে বৃষ্টি ও সড়ক দুর্ঘটনা না হলে পরিস্থিতি হয়তো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না। দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা বাসচালকরা জানিয়েছেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত যানজটের ভোগান্তি রয়েছে। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় বেশি লাগছে। এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের কাজ বন্ধ হলেও সড়কের দুই পাশ থেকে নির্মাণ সামগ্রী ও মাটি সরানো হয়নি। এতে দুই লেনের সড়ক এক লেনে রূপ নিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। ফেরিঘাটেও ভোগান্তি ॥ দেশের দক্ষিণাঞ্চলগামী প্রায় ২১ জেলার কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুট। ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় থেমে থেমে চলছে যানবাহন। ফেরি পারাপারের জন্য ঘাটের দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। পাটুরিয়া ফেরিঘাট শাখা নৌ-পুলিশের ইনচার্জ সামছুল ইসলাম বলেন, বেলা ১১টার পর থেকে পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যানবাহনের লাইন পড়তে শুরু করে। দুপুর নাগাদ সেই লাইন দুই থেকে তিন কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তবে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের আরসিএল মোড় থেকে ব্যক্তিগত ছোট গাড়ির জন্য পৃথক লেনে ফেরিতে উঠার ব্যবস্থা থাকায় ছোট গাড়ির তেমন চাপ পড়েনি। যাত্রীবাহী বাসগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের কারণে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে আছে দেড় শতাধিক ট্রাক। ট্রাক পারাপার সাময়িকভাবে বন্ধ থাকায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টার্মিনালে জমা হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক। তবে পচনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ট্রাকগুলোকে পারাপার করা হচ্ছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার বাণিজ্য বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন রাসেল জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে ছোট-বড় মিলে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। ঈদে ঘরমুখো মানুষের বাড়তি চাপ থাকার কারণে যানবাহনের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে বলে জানান তিনি। কমলাপুর থেকে যথাসময়ে ট্রেন ছেড়েছে ॥ দ্বিতীয়দিনে কমলাপুর রেলস্টেশনে ঘরমুখো মানুষের খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ঈদযাত্রার প্রথমদিনে বেশিরভাগ ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হলেও দ্বিতীয়দিনে পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। প্রায় সবকটি ট্রেন যথাসময়ে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার ট্রেনে খুব একটা বাড়তি চাপ লক্ষ করা যায়নি। স্ট্যান্ডিং টিকেট বিক্রি হলেও দুপুর পর্যন্ত বেশিরভাগ ট্রেনে ভিড়ের মাত্রা ছিল সহনীয়। কমলাপুর থেকে ছাদেও যাত্রী দেখা যায়নি। তবে নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে এবারও ছাদে, বাম্পারে যাত্রী পরিবহনে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে রেলস্টেশনে ঝুঁকি নিয়ে ঈদযাত্রা না করতে মাইকিং করতেও দেখা গেছে। তাছাড়া রেলওয়ের নিরাপত্তাকর্মীরাও এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। রেলওয়ের একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন, বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হলে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে নজরদারি বাড়াতে হবে।
×