ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে কাজীসহ গ্রেফতার ৩

প্রকাশিত: ০৩:০০, ২২ জুন ২০১৭

ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে কাজীসহ গ্রেফতার ৩

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ জোর করে ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে শ্রীঘরে ঢুকেছে তিনজন। যার মধ্যে বিয়ের কাজিও রয়েছে। মামলার অপর তিন আসামি পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের গ্রেফতারে হন্যে হয়ে খুঁজছে। পুলিশের হাতে গ্রেফতার এক আসামি ইতোমধ্যে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতের বিচারকের কাছে জবানবন্দী দিয়েছে। আসামিদের মধ্যে একাধিক প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান রয়েছে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি করেছে। পটুয়াখালী সরকারী কলেজ থেকে এবার রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা দেয়া এক ছাত্রীর বাবা মোঃ হানিফ মাহমুদ (৬০) গলাচিপা থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেছেন, তার বাড়ি রাঙ্গাবালী উপজেলার যুগিরহাওলা গ্রামে। এলাকায় জমিজমা মাপজোপ করে সংসার চালান। একই গ্রামের নাসিরউদ্দিন চৌকিদারের বখাটে ছেলে রাজিন চৌকিদার (২৬) দীর্ঘদিন ধরে তার ওই মেয়েকে উত্যক্ত করে আসছে। গত সোমবার ১৯ জুন একই গ্রামের খোকা পেয়াদার ছেলে জসিম পেয়াদা জমি রেজিস্ট্রির কথা বলে হানিফ মাহমুদকে গলাচিপা শহরে নিয়ে আসে এবং পৌর শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাজাহারুল ইসলামে বাসায় নিয়ে আটকে রাখে। ওই বাসায় আগে থেকে ভাড়াটে ক্যাডাররা উপস্থিত ছিল। ক্যাডাররা হানিফ মাহমুদকে হাত-পা বেঁধে ব্যাপক মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে ১০০ টাকা দামের ৬টি অলিখিত স্ট্যাম্প, একটি রেফ কাগজ ও নিকাহনামার বালাম বইয়ে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে। ক্যাডাররা রাজিনের সাথে তার মেয়ের বিয়ে হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি আদায় করে এবং পুরো ঘটনাটি ভিডিও করে। এরপর তাকে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য করা হয়। এর দুদিন পর বুধবার রাতে হানিফ মাহমুদ ৬ জনকে আসামি করে গলাচিপা থানায় মামলা দায়ের করেন। রাজিন ও জসিম ছাড়াও মামলার অপর আসামিরা হচ্ছে- বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার টেপুরা গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মাজাহারুল ইসলাম (২৯), গলাচিপা পৌর শহরের রতনপুর এলাকার মোশারেফ হোসেনের ছেলে মিনজার হোসেন মুন (২৯), ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আঃ রাজ্জাক মিয়ার ছেলে মোঃ মহব্বত (৩৭) ও রূপনগরের বাসিন্দা মাওলানা হাসমতউল্লাহর ছেলে গলাচিপা কেন্দ্রীয় মসজিদের কাজী মোঃ মোজাহিদুল ইসলাম। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মামলা দায়েরের পর পুলিশ বুধবার সারারাত গলাচিপা শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মাজাহরুল ইসলাম, মিনজার হোসেন মুন ও কাজী মোজাহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পুলিশ কাজীর কাছ থেকে নিকাহনামার বালাম বই উদ্ধার করে। যার একটি পাতায় হানিফ মাহমুদের স্বাক্ষর রয়েছে। এতে অন্য কিছু লেখা নেই। সাদা অলিখিত স্ট্যাম্প ও হানিফ মাহমুদকে মারধর করার আলামত পুলিশ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা আসামিদের গলাচিপার উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রট আদালতে হাজির করা হলে মাজাহারুল ইসলাম বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। পুলিশ আসামিদের রিমান্ড প্রার্থনা করে। আদালতের বিচারক রিমান্ডের শুনানির জন্য পরবর্তী কার্যদিবস নির্ধারণ করে আদেশ দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গলাচিপা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
×